নুরুর নবী
ডয়েচেভেলে'র খবর- জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রীয়াজের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে...!
নানা কারনে, খুবই চমকপ্রদ এই খবর। অধ্যাপক আলী রীয়াজের সাথে আওয়ামী লীগের লোকদের এই দুর্ব্যবহারের অবশ্যই নিন্দা জানাই। আলী রীয়াজের মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতিও সংহতি জানাই। কিন্তু তাতে অবশ্য এই বিষয়ে সব কথা শেষ হয়ে যায় না, বরং পুরানো আরও কিছু জরুরি প্রসঙ্গ এখানে আলোচনার দাবি রাখে।
অধ্যাপক রীয়াজের প্রতি এই অশোভন আচরনের খবর আসলেই চমকপ্রদ। আমার কাছে মনে হয়েছে ছোটবেলায় স্কুলের পাঠ্য বইয়ে লেখা ব্যাঙের সেই জীবনচক্রের কথা। যেখানে ডিম থেকে ব্যাঙাচি হওয়া, তারপর রুপান্তরের প্রক্রিয়ায় লেজ খসে গিয়ে পুর্নাঙ্গ ব্যাঙ এ পরিনত হওয়ার এক চক্রের কথা বলা হয়ে থাকে। আমার মনে হয়েছে, রুপান্তরের এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় অধ্যাপক রীয়াজও উনার জীবন চক্র পুর্ন করলেন। আমেরিকার নাইন ইলেভেন পরবর্তী বিশ্ব রাজনীতিতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের যে প্রকল্প আমেরিকা শুরু করেছিল,আরো অনেকের মতআলী রিয়াজও এর ভিতর দিয়ে নিজের ক্যারিয়ার দেখতে চাইতেছিলেন, কিন্তু মওকা আসছিল না। এসেছিল তত্বাবধায়ক আমল থেকে। বাংলাদেশে কথিত জঙ্গিবাদ মোকাবিলার নামে মহান কর্তব্যে প্রেসক্রিপশন আর যাবতীয় সুপারিশ তৈরির কাজে আমেরিকার “বাংলাদেশ এক্সপার্ট” লোকের ঘাটতি অনুভব করাতে সেটা হয়েছিলেন আলী রীয়াজ। আমেরিকার কাজটা ছিল জঙ্গীবাদের আড়ালে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া। সেটা এখন কোথায় পৌছিয়েছে সবচেয়ে ভাল নিশ্চয় আমেরিকা বুঝতে পারছে। আমেরিকান রাষ্টড়দুত হামলা খেয়ে বাসায় ফিরে।
আর এখন জার্মানীর হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই জঘন্য ঘটনা, যেখানে আওয়ামীলীগের লোকজন খোদ আলী রীয়াজকেই জঙ্গিবাদের দোসর হিসাবে চিহ্নিত করতে চাইছেন। আজ হয়তো বলা যায়-- জঙ্গিবাদ বিশেষজ্ঞ হিসাবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ যে জার্নি শুরু করছিলেন, জার্মানির হাইডেলবার্গের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনার ভিতর দিয়ে সেই জার্নির একটা পর্যায়, একটা চক্র পরিপুর্ন হলো।
খেয়াল করেন, এই ঘটনার পটভুমি জার্মানি। আমাদের সবার মনে থাকার কথা, ২০১৩ সালের পরে আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ বিরোধী তৎপরতার যে জোয়ার নেমেছিল, শাহবাগ আন্দোলনের সেই দিনগুলোতে এই জার্মান এম্বাসি, আর তার রাষ্ট্রদুতের সক্রিয় ভুমিকা কেমন ছিল। সেক্যুলারিজমের পক্ষে কথা বলার উছিলায়, উনারা বাংলাদেশের ধর্মীয় যেকোন কিছুর বিরুদ্ধে বিজেপির মত খোলাখুলি অবস্থান নিতো। তাঁদের এই মনোভাব, বাংলাদেশে যেকোন সরকারবিরোধীকে ইসলামি জঙ্গী বলে তাদের বিরুদ্ধে নির্মম আচরন করার পক্ষে সরকারকে উৎসাহ যোগাত।
ওয়ার অন টেররের বাংলাদেশি চাপ্টার এর জন্য আমেরিকার দরকার ছিল তরুন বিশেষজ্ঞদের। পুরানো যুগের রেহমান সোবহান কিংবা মনিরুজ্জামান সাহেবদের দিয়ে যে চাহিদা পুরন হচ্ছিল না। ফলে অধ্যাপক আলী রীয়াজ হয়ে উঠেছিলেন, আমেরিকানদের জন্য পছন্দের মানুষ। সর্বশেষ আলী রীয়াজ যখন উনার বক্তৃতায় বলেন, ‘‘২০১৮ সালের নির্বাচনের পর এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে রাষ্ট্র ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মধ্যে আর কোন পার্থক্য নেই৷’’বাংলাদেশের সবশেষ জাতীয় নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতাসীন দলের জোট সঙ্গীদের অনেকেই এখন তা স্বীকার করছে৷’’ আজকের বাংলাদেশের যে পরিনতি, সেটা তো আমেরিকানদের সেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের প্রকল্প বাস্তবায়নের আফটার এফেক্ট। ফলে আজকের এই জাতীয় নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন যখন তুলছেন-- তখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে-- এই পরিনতির জন্য অধ্যাপক রীয়াজ উনার নিজের দায় এড়াবেন বা সংযোগছিন্ন ছিলেন তা দেখাবেন কীভাবে?
হায় হায় আলী রিয়াজ!
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন