বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার একমাস পূর্ণ হয় বুধবার। ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এ ঘটনায় আবরারের বাবা মো. বরকতউল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
আবরারের ভাই আবরার ফাইয়াজ এ ঘটনা স্মরণ করে বুধবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি শেয়ার করেন আবরারের মোবাইলের একটি গানও।
স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
'আজ একমাস হলো।
আস্তে আস্তে ১বছর, ১০বছর হবে।।আমরা বেশির ভাগই হয়তো থাকবো।কিন্তু আর কখনো ভাইয়া আসবে না।।একদিন পরিবারের সবাই ও নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে যাবে, কাউকে কিছু বললেও বলবে অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে হয় না।।আসলে সত্যি বলতে একজন অসময়ে চলে গেলে পার্থিবভাবে(★) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেই হয়।।ভাইয়ার বন্ধুরাও বুয়েট থেকে একদিন বের হবে,কিন্তু ভাইয়া আর বের হবেনা,পূরণ হবে না তার কোনো স্বপ্ন,সবাই ভুলে যাবে।কিন্তু হয়তো ভাইয়াই আমাদের মনে রাখবে শুধু।।একসময় ওই জগতেও হয়তো ভাববে আমাকে একটু মনে করেনা কেউ।যদিও ওই জগতের জীবন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অনেক কম।আসলে এটাই জগতের নিয়ম।।কালকে পর্যন্ত যা নিয়ে ভাবছিলাম না আজ তাই সবচেয়ে বড় সত্যি। অবশ্যই আল্লাহই সকল বিষয়ে ভালো জানেন।
ঠিক ৬তারিখ ৫টার দিকে ভাইয়া ঢাকা তে হলে পৌছায়। ৫:৩০এ শেষ বারের মতো পরিবারের সাথে যোগাযোগ হয়।৮:১৩মিনিটে তাকে ডেকে নেয় ২০১১ এমন কিছু মানুষরুপী জীব যারা কিনা দিনের পর দিন ভাইয়ার রুমে, ভাইয়ার বিছানায় কাটিয়েছে।রাত ৯:৪০মিনিটে সর্বশেষ কথা হয় ভাইয়ার এক স্টুডেন্ট এর মা'এর সাথে।।তখন ভাইয়ার গলা কাপাকাপা থাকায় আন্টি জিজ্ঞেস করেন বাবা তোমার কোনো সমস্যা? ভাইয়া বলে : না, আন্টি। তখন হয়তো চড় মারা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ভাইয়া বলেঃ আন্টি আমি আপনাকে ১০টার পর কল দিচ্ছি।আর আপনি চিন্তা করেন না আমি বাসায় যেয়ে ওকে বুঝায় দিয়ে আসব। আর কল দেওয়ার সুযোগ হয়নি তঁার।রাত ২:৩০-৩:০০ এর মধ্যে ভাইয়া শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। মাত্র ১দিন পরই ভাইয়া আবার বাসায় আসল কিন্তু প্রাণশূন্য। এতদিন ভাইয়ার এক্সাম শেষ হয়ে যেত।বলছিল কক্সবাজারে যাবে। কিন্তু তাও হইলো না।
ভাইয়ার চশমার পাওয়ার ছিল -৫.০০ ও -৪.৭৫।আমরা চশমা পাইনি।।ভাইয়া হয়তো শেষ সময় কিছু দেখতেও পারেনি।
আচ্ছা ভাইয়ার বিভিন্ন পোস্টে যেই তথ্য গুলা ছিল কেউ তো একটাও ভুল দেখাতে পারল না।আপনি আমি কয়জন ওই ব্যাপার গুলা জানতাম? বুয়েটে ভাইয়ার থেকে একাডেমিক ভাবে অনেকেই ভালো ছিলেন।কিন্তু এইভাবে নিজের চারপাশ সম্পর্কে কতজন জানতেন জানি না বিশেষত যারা নিজেদের বঙ্গবন্ধুর চেতনার দাবি করে ভাইয়াকে শিবির সন্দেহে এইভাবে হত্যা করেছে। যেই ছেলেটার বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর প্রচ্ছদ রচনাকারী থেকে পেজ সংখ্যা পর্যন্ত মুখস্ত ছিল তঁার থেকে তাদের চেতনা অনেক বেশি ছিল?(আমাদের কলেজের প্রশ্ন ছিল)।আমি তো আমার ভাইকে হারালাম কিন্তু এই দেশ এর ক্ষতি তো কম হলো না।
১ মাসে অনেকের অনেক নাটকই দেখছি যারা আগে চিনতো পর্যন্ত না।(এখন আর দেখিনা অবশ্য)।
আগামী সোমবার হয়তো চার্জশিট দেবে দেখা যাক কতদ্রুত বিচার কাজ শেষ হয়।এখন পর্যন্ত প্রশাসনই একমাত্র সঠিক আছে সত্যি বলতে।
বি.দ্র. কারোর কাছে পিঠের ও পিছনের কোনো ছবি থাকলে (not the fake one) একটু কষ্ট করে দিয়েন।আর গানটা কেন যেন অনেক আগে থেকে ভাইয়ার ফোনে ছিল।ভাইকে নিয়ে ফাইয়াজের স্মৃতি ও গান'click here
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন