ডক্টর তুহিন মালিক
বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা মৃত্যুর আগেই জেনে গেয়েছিলেন, তার কোন দেশ নেই! একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য এটা যতটা না কষ্টের, তারচেয়েও বেশী কলঙ্ক এই রাষ্ট্রের।
খোকার একটাই অপরাধ ছিল। ১৯৯১ সালে তার কাছে শেখ হাসিনার বিশাল লজ্জাজনক পরাজয়। এরপর ঐ আসনে আর কোনদিন দাড়ানোর সাহস পাননি লীগ প্রধান। আর ঠিক যেন প্রয়াত সুরন্জিত বাবুর সেই কথাটাই ফলে গেলো খোকার ভাগ্যে - ‘বাঘে ধরলে ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে না।’
একের পর এক মামলা হামলা করে, এমনকি আদালতে জামিন নিয়ে ফিরে আসার পথে ছাত্রলীগের ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করা হয় খোকাকে। ছুরির ক্ষত শুকালেও মরনঘাতী ক্যান্সার ততদিনে আঘাত হানে খোকার দেহে।
চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসার চেষ্টা করলে ঢাকা বিমানবন্দরে আটকে দেয়া হয় উনাকে। উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে জরুরী চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমনের আদেশ পেতে পেতে পার হয়ে যায় তিন সপ্তাহ। আর ততদিনে মরনঘাতী ক্যানসার দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পরে শরীরে।
মামলার পর মামলা। ১৩ বছরের জেল। সম্পত্তি বাড়ি ঘর ক্রোক। তারপরও বিদেশে চিকিৎসার মধ্যেই উনি দেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাসটা নিতে আকুল হয়ে উঠেন। দুই বছর আগে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে পাসপোর্ট নবায়নের আবেদনও করেন। কিন্তু তাকে পাসপোর্ট দেয়া হয়নি। ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে বারবার। অথচ যে পাখিকে নিজের ঘরে ফেরার অধিকার দেয়া হয়নি, তার মৃত্যুর অন্তিম মুহুর্ত নিশ্চিত হলে শুরু হয় পাখি শিকারীর ‘মায়াকান্না’।আফসোস, সেই মায়াকান্নাটা দেখে যেতে পারলেন না নীড়হারা সেই মুক্তিযোদ্ধা!
দেশহীন পাখিটি সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন অন্তিম দেশে। সে দেশে উনি যেন সর্বসেরা ঘরটিই পান, পরম করুণাময়ের কাছে সেই দোয়াই করি।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। "আমরা তো আল্লাহরই, আর নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী"।
ডক্টর তুহিন মালিক: আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন