জাবাল আত তারিক
এই যে আবরার মরে গেল। শত কাজের-অকাজের যুক্তি-
যেমন, আমাদেরকে আবরারের ইস্যুতে মত্ত রেখে অন্যদিকে ভারতকে সব দিয়ে আসার বিষয়টা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।
কিংবা-
যেই ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে আবরার শহীদ হয়েছে সেই ব্যাপারে আমরা কিন্তু কণ্ঠ জোরালো করছি না।
অথবা
চিল্লায়া কি হবে, বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার দেখেন নাই! ঘোড়ার ডিমও পাবেন না
এমন কথাগুলো চালাচালির পরেও আমরা আবরারের লাশ কে ভেসে যেতে দেইনাই। আমরা জানি বিচার পাবো না। আমরা জানি, যে কয়টা খুনিকে ধরা হয়েছে তার প্রায় সবাই একে একে বেরিয়ে আসবে। তার পরেও আবরারের লাশকে আমরা সস্তায় গচ্ছাতে দেই নাই। আমরা এখনও এটা ধরে পড়ে আছি, পড়ে থাকবো। বলবেন ইস্যু যায় ইস্যু আসে! হ্যাঁ, যাবে এবং আসবে। এভাবেই চলবে। যতদিন যারা যুক্তি দিচ্ছেন, কুযুক্তি দিচ্ছেন এবং প্রশ্রয় দিচ্ছেন- তাঁরা সবাই এক না হবেন, ততদিন এভাবেই আসবে যাবে।
কিন্তু খেয়াল করে দেখুন,
আমরা ফেলানী নিয়ে লাফিয়েছিলাম। আবুবকর কে নিয়ে লাফিয়েছিলাম। এহসান কে নিয়ে লাফিয়েছিলাম- লাভ হয়ত হয় নাই তবে নিঃসন্দেহে আবুবকরের লাশের চাইতে আবরারের লাশের ওজন আমরা অনেক অনেক বাড়িয়ে দিতে পেরেছি। ইস্যু যায় ইস্যু আসে, যাবে এবং আসবে- এসব বলে বিষয় গুলোকে হালকা করে দেখার অসাড়তা এখানেই। আপনি বিচার করে দেখুন- ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে আমরা আরও বেশি সোচ্চার। ভারতকে নিয়ে এখন জামায়াত বিদ্বেষী সুলতানা কামাল, আসিফ নজরুল, ডাক্তার জাফরুল্লাহরাও গোলাম আযমের সুরে কথা বলে। এই কথা গুলোই গোলাম আযম ৭১ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বলে গেছেন। এগুলো এমন সত্য, যা উদ্ভাসিত হওয়া অবধারিত ছিল। আর তা পলে পলে ঘটে গেছে সহসাই। দুদিন আগেও পাগলা ডাক্তার জাফরুল্লাহরা ইন্ডিয়ার সাথে বিএনপির সখ্যতা তৈরীর মুলা ঝুলিয়ে বিএনপিকে ছাগল দৌড়ানি দৌড়াইতো। বিএনপিও পিছে পিছে ছুটতো।
অথচ দেখুন,
এই সমসাময়িকেই, বিএসএফ কুমিল্লা সিমান্তে বাংলাদেশ সরকারের অফিসিয়াল ব্যাজধারী র্যাব সদস্যদেরকে চরম ভাবে অপমান করে ছেড়ে দিল। বাংলাদেশ টু শব্দ করলো না। কোনও কূটনৈতিক জবাব দিল না। এই অপমানিত র্যাব সদস্যদের নিয়ে আমরাও কেউ ব্যাথিত হলাম না। আবরারের মতো তাঁদের নিয়ে কেউ মেতে উঠলাম না। কেউ কেউ হয়তো ভাবছেন- আমরা আবরারেই ডুবে আছি। কিন্তু না, আমরা আবরারে ডুবে নেই। আমরা খুব ভালো করেই জানি বাংলাদেশ সরকারের অফিসিয়াল ব্যাজধারী র্যাব সদস্যদেরকে অপমান করা মানে গোটা বাংলাদেশকেই অপমান করা। একটা পঙ্গু, ভঙ্গুর ও অথর্ব রাষ্ট্রও এসব ক্ষেত্রে সিংহের মত গর্জে উঠে। কিন্তু বাংলাদেশ বিড়ালের মতো মিউ শব্দও করছে না।
তাহলে আমরা এর ইনটেনসিটি জেনেও কেন আবরারে ডুবে আছি?
কারণ একটাই- আবরার আর অপমানিত র্যাব সদস্যের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। আবরারের ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধীতা তাঁর একটি স্বাধীন, নির্ভেজাল ও সৎ সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে আমাদের সরকারের, সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর ভারতের প্রতি দাসত্ব একটি স্বপ্রনোদিত রাজনৈতিক হঠকারী সিদ্ধান্ত। যা পদে পদে আমাদের প্রিয় রাষ্ট্রকে বার বার অপমানিত করেছে। এজন্য স্বাধীনচেতা আবরারের খুন আমাদেরকে স্পর্শ করে কিন্তু স্বেচ্ছাদাস সরকার ও সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর অপমান আমাদেরকে একটুও স্পর্শ করে না। কারণ, আমরা জানি আবরাররা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য শহীদ হয়। অন্যদিকে এই সরকার ও সরকারের বিভিন্ন বাহিনী নিজেদের ক্ষমতার গদিকে শক্ত-পোক্ত করতে ভারতের প্রতি স্বেচ্ছাদাসত্ব গ্রহণ করে।
ফলে
আবরারের গৌরবান্বিত শাহাদাৎ যেমন নিয়তির ললাট লিখন তেমনি বাংলাদেশ সরকারের অফিসিয়াল ব্যাজধারী র্যাব সদস্যদের অপমানও নিয়তির ললাট লিখন। কিন্তু যেহেতু আবরারদের উদ্দেশ্য মহৎ ও স্বাধীনচেতা সেহেতু আবরাররা সবার হৃদয়ে স্থায়ী বাড়ি করে নেয়। আর সরকার ও সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর দাসত্ব যেহেতু অসৎ সেহেতু তাঁদের অপমান কারো গায়েই লাগছে না। এই হল সত্যের পক্ষে নিবেদিত প্রাণের শক্তি।
পয়েন্টটা হল,
এই থিওরী আপনার আমার ক্লাসে পড়ায় না, কিন্তু আমাদের প্রতিক্রিয়াটা এই থিওরী মেনেই প্রতিফলিত হচ্ছে। এইটাই শক্তি, এটাই অর্জন, এটাই বিন্দু বিন্দু জলকনার সাগর গড়ে তোলার গল্প।
সুতরাং বলি,
ইস্যু আসুক, ইস্যু যাক- মেতে উঠুন। জেনে রাখবেন জমা হচ্ছে সব। একদিন উত্তাপ ছড়াতে শুরু করবে সুপ্তাগ্নেয়গীরি। সে পর্যন্ত, সালামে রাহমাতুল্লাহ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন