মারুফ কামাল খান
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক বেশির ভাগ লোকই ড. কামাল হোসেনকে খুবই অপছন্দ করেন। তবুও তিনি এই দুটি দলের সঙ্গেই সম্পর্ক রেখে চলেন। নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও বিএনপির সঙ্গে ফ্রন্ট করে ড. কামালের দল গণফোরাম পার্লামেন্টের গত ইলেকশনে দাঁড়ায়। তিনি নিজে তার পুরনো আওয়ামী লেগাসি অনুসরণে সারাদিন বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু করেন। আসলে এসব কারণে কামাল হোসেন প্রধান প্রতিদ্বন্দী দুটি রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে কোনো পক্ষেরই আপন লোক হতে পারেননি, হয়েছেন তৃতীয় পক্ষ। তার দলের নতুন জেনারেল সেক্রেটারি শাহ্ রেজা কিবরিয়া বিবৃতি দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ ও জাতীয় সরকারের দাবি করেছেন। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও তুলেছেন বিবৃতিতে। এই স্টেটমেন্ট দেখার পর আমার মনে হচ্ছে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটা জাতীয় সরকার তো হতেই পারে। তাতে যদি দেশে একটা সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ খোলে মন্দ কী?
আওয়ামী লীগ সবসময় ক্ষমতা ছাড়লে তাদের কোনো নিরাপত্তা থাকবে না বলে ভয় পায়। যে ভয়ে আওয়ামী লীগ ছলে-বলে-কলে- কৌশলে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়, কামাল হোসেন তো অন্তত তাদের সেই ‘মাইরের ভয়’টা দূর করতে পারেন। আমি জানি, এই দাবি এ মুহূর্তে হালে পানি পাবে না। আমি এ-ও জানি যে, বিএনপি সমর্থকরা আমার এ কথাটা পছন্দ করবেন না। কারণ কামাল হোসেনের ব্যাপারে তাদের মনে ঘোর সংশয়। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ বলবে, কিসের জাতীয় সরকার? নির্বাচন তো হয়ে গিয়েছে। আমরাই বৈধ সরকার।
হ্যাঁ, কামাল হোসেনের রাজনৈতিক মতামত ও ভূমিকা নিয়ে আমার নিজেরও অনেক প্রশ্ন আছে। তবে যে ভাবে সবকিছু চলছে সেভাবে তো একটা দেশ দীর্ঘকাল চলতে পারে না। এর একটা নিষ্পত্তি, সুরাহা, সমাধান ও শেষ তো হওয়া দরকার। সেই পথটা কী? ক্ষমতায় থেকে সংকটের আঁচ আওয়ামী লীগের গায়ে এখনো লাগছে না। তবে সামনে হয়তো এমন সময় আসবে যখন তারাও বলবেন একটা ফয়সালা দরকার। কী সে ফয়সালা? সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে পছন্দের সরকার বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া ছাড়া সংকট সমাধানের কোনো শান্তিপূর্ণ পথ আপাতত নেই। অতীতের অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন দেশের নজির অনুযায়ী এর বাইরের পথ হচ্ছে গণবিপ্লব, বলপ্রয়োগ ও সেনা হস্তক্ষেপের। ওই বিকল্পগুলো কঠিন, অনিশ্চিত এবং অনেকের কাছেই কাক্সিক্ষত নয়। তাই সরকারের পদত্যাগ, ক্ষমতাসীনদের আক্রোশ ও অবিচারের শিকার বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংকটকালীন জাতীয় সরকার গঠন এবং সেই সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আমার কাছে মন্দের ভালোই মনে হয়। জাতীয় সরকার বা অন্যকোনো নামে তেমন একটি সরকার কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠনের প্রস্তাব উঠলে তা যারা ম্যাটার করে সেই সব স্টেকহোল্ডারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে পারে বলেই আমার মনে হচ্ছে। ফেসবুক থেকে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন