মিনার রশিদ
২১শে আগষ্ট নিয়ে মূল ধারার মিডিয়াগুলোতে আজ বেশ কিছু কলাম ও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে । ‘প্রথম আলো’সহ অন্যরা প্রতিযোগিতায় নেমেছে কে কতটুকু সার্ভিস সরকারকে দিতে পারে ।
আমাদের প্রথম আলো ওয়ালাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দৌড় জজ মিয়া নাটক পর্যন্ত । সেই নাটকটি অন্য কোনো মহানাটকের অংশ কি না - তা নিয়ে গবেষণার ইচ্ছা কিংবা হিম্মত কোনোটিই এদের নেই । তখনকার সরকার কর্তৃক গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্তে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের নাম চলে এসেছিল ।
আমাদের মিডিয়ার কাছে সেই নামটি ভাসুরের নামের মত ।
কাজেই আলো-স্টার- চ্যানেল আইয়ের নেতৃত্বে
মূল ধারার মিডিয়া এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় । তথাকথিত বিএনপি পন্থী মিডিয়াগুলি তখন সামনে এগিয়ে না এসে নিজেদের নিরপেক্ষ দেখাতে আপাতত চুপ থাকে - ভবিষ্যতে বড় সেবা দিবে সেই মহৎ (?) আশায় ! সত্য কথা বলে তখন তারা বিএনপি পন্থী হিসাবে চিহ্নিত হতে চায় নি - চুপ থেকে ‘নিরপেক্ষ’ হতে চেয়েছিল । জাতীয়তাবাদী শক্তিকে সাপোর্ট করার সেই মহা ক্ষণটি তাদের জন্যে এই জীবনে আর আসে নাই ।
এমতাবস্থায় এগিয়ে আসে অতি উৎসাহী ও উর্বর মস্তিস্কের কিছু পুলিশ অফিসার । এদেশে সত্য মামলাতেও মিথ্যা সাক্ষী ছাড়া সুবিচার মিলে না । এমন ভাবনা থেকেই ইনারা জজ মিয়া নাটকটি সাজান । প্রথম আলো -স্টার - চ্যানেল আই বিষয়টি লুফে নেয় । বাকি টুকু ইতিহাস ।
এই জজমিয়া নাটকের আড়ালে যে কত শত মুফতি হান্নান মহা নাটক সংঘটিত হয়ে গেলো - সেদিকে খেয়াল করার হিম্মত বা সময় তাদের হয় নাই ।
২১শে আগষ্টের বেনেফিশিয়ারী বিবেচনায় মূল পরিকল্পককে বের করাতেও আমাদের অনুসন্ধানী মিডিয়া কখনোই আগ্রহ দেখায় নি ।
ঘটনার শুরু থেকেই স্পষ্ট হয়েছে যে মূল পরিকল্পকদের চিহ্নিত করার চেয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই বেশী আগ্রহী । তখনকার সরকার এফবিআই , স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মত আন্তর্জাতিক সংস্থা দিয়ে স্বাধীন তদন্ত করাতে চেয়েছিল । কিন্তু সেদিনের ভিক্টিম আওয়ামীলীগ সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয় নি বা তাতে কোনো সহযোগিতা করে নাই । কারণ তাদের টার্গেট ভিন্ন ছিল , যা এখন স্পষ্ট হচ্ছে ।
সেদিন শেখ হাসিনার ব্যবহৃত বুলেট প্রুফ গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার যে অভিযোগ আওয়ামী লীগ প্রথম দিকে তুলেছিল , তা নিয়ে গাড়ীটির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান স্বয়ং আপত্তি জানিয়েছিল । গাড়ির কাঁচ ভেদ করে কোনো গুলি ভেতরে ঢুকতে পারে না - এটি স্পষ্ট জানিয়ে দেয় । বিষয়টি নিয়ে মার্সিডিজ কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান করতে চাইলে আওয়ামীলীগ বিষয়টি তখনকার মত চেপে যায় । সাথে সাথে ভুলে যায় আমাদের মিডিয়াও ।
ঘটনাচক্রে সেদিনের ভিক্টিমের হাতে আজ রাষ্ট্র ক্ষমতা পড়েছে । রাষ্ট্র ব্যবস্থা হাতে নিয়ে সরকারের অন্যান্য অর্গানসহ পুরো বিচার ব্যবস্থাকে তছনছ করে ছেড়েছে । এই মুল্লুকে সরকার সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির সাজা হওয়ার ঘটনা খুবই কম । অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতি পক্ষের কোনো নেতার মামলা থেকে খালাসের উদাহরণ খুব একটা দেখা যায় নি । কোন্ মামলার রায় কী হবে তা আগেই আন্দাজ করে বলে ফেলা যায় ।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সরকারের মনের মত রায় না আসায় প্রধান বিচারপতিকে দেশ ছাড়তে হয়েছে । সরকার দলীয় টপ নেতা নেত্রীরা বিচার বিভাগের সেই অসহায় প্রধানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন । কথায় কথায় যে বিচারপতিরা বিরোধী মতের ব্যক্তিদের উপর আদালত অবমাননার খড়্গ হাজির করতেন , উক্ত প্রধান বিচারপতিকে গালি দেয়ার বেলায় উনারা সম্পূর্ণ নীরব হয়ে যান !
অন্য এক মামলায় বিরোধী দলের নেতাকে খালাশ দেওয়ায় একজন বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়েছে ।
‘পিস্তল দুলাল ‘ নামক নতুন সিন্ড্রোমের কাছে পুরো বিচার ব্যবস্থা অসহায় হয়ে পড়ে ।
তখন আদালতের রায় জনগণের জিজ্ঞাসার জবাব না দিয়ে নতুন নতুন প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে । এমতাবস্থায় এই ঘটনার নির্মোহ রাজনৈতিক বিশ্লেষণও জটিল হয়ে পড়েছে ।
২১শে আগষ্টের বোমা হামলায় যদি শেখ হাসিনা নিহত হতেন , তবে খালেদা জিয়ার সরকারের সাথে সাথেই পতন হতো - তাতে কারো একবিন্দু সন্দেহ ছিল না । কাজেই এমন একটি আত্মধ্বংসী কাজ সেই দলের নেতা নেত্রীরা কেন করবেন - এই বিষয়টিও স্পষ্ট হচ্ছে না । তাছাড়া শেখ হাসিনা নিহত হলে তাঁর সন্তান , বোন এবং বোনের সন্তানেরা দুই দুটি ( ১৫ই আগষ্ট ও ২১শে আগষ্ট ) শোকাবহ ঘটনার পাবলিক সেন্টিমেন্টকে পুঁজি করে এদেশের রাজনীতিতে আরো শক্তিসালী হয়ে পড়তেন । কাজেই ২১শে আগষ্টের ঘটনা থেকে বিএনপি জামায়াত কোনো বিচারেই রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারতো না ।
কাজেই কেন তারা এই আত্মবিধ্বংসী কাজটি করতে গেল ?
এরকম আরো কিছু প্রশ্নের কোনো জবাব নেই ।
তবে ২১শে আগষ্ট ঘটনার সামনের এবং পেছনের বেনেফিশিয়ারির লাভের উপর লাভ দেখে এখন অনেকের হুঁশ ফিরে আসছে ।
এই ঘটনার পেছনে মাষ্টার মাইন্ডের আবছা চেহারাটি স্পষ্ট হয়ে পড়ছে ।
আরেকটি ইন্টারেস্টিং বিষয় আমাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা বছরের পর বছর চেপে যাচ্ছেন । সমাবেশটি প্রথমে হওয়ার কথা ছিল মুক্তাঙ্গনে । সেই ভাবে মুক্তাঙ্গনেই সরকারের গোয়েন্দা ও অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল । কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর দুই ঘন্টা আগে সমাবেশের স্থল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে নিয়ে আসা হয় ।
কিন্তু কেন ?????
আমাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা এই বিষয়টি নিয়ে জাতিকে আলোকিত না করে কেন যেন অন্ধকারেই রাখতে চান ।
আজ আমরা চতুর্দিক থেকে ভয়াবহ হুমকি ধামকি পাচ্ছি । মুসলিম বিশ্ব থেকে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছোট্ট্ এই দেশটি আর কতদিন নিজের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ধরে রাখতে পারবে - সেটা নিয়েও আশংকা দেখা দিয়েছে ।
কেউ তিন ভাগের এক ভাগ দখল করতে চায় , কেউ বাংলা মাকে ভারত মাতার সাথে মিশিয়ে ফেলতে চায় - এসব মোকাবেলায় যে ঐক্য দরকার তা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে ।
নিজেদের মধ্যে এই কাঁদা ছোড়াছুড়ির সুযোগে দেশ ও জাতিকে নিয়ে ভয়ংকর কিছু করছে কি না - সেটাও ভেবে দেখা জরুরি । কোনো দলকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্যে নয় - এই জাতিকে সামনের ভয়ংকর বিপদ থেকে রক্ষা করার মানসেই বিষয়টি উল্লেখ করলাম । এই দেশটির সার্বভৌমত্ব থাকলেই ক্ষমতা থাকবে । তা না হলে মির জাফরের মত কিছুদিন ক্ষমতায় বসিয়ে রেখে পরে ছুঁড়ে মারবে । তখন আমাদের পরিণাম কাশ্মীরের চেয়েও ভয়ংকর হতে পারে ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন