প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা নিয়ে মায়েরা আগের চেয়ে বেশি সচেতন হচ্ছেন। পিপিডি (পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন), বেবি ব্লু এই শব্দগুলো এখন বেশ আলোচনায় আসে। পিপিডির ক্ষেত্রে খুব সিরিয়াস হলে ডাক্তারের পরামর্শ তো নিতেই হয় তবে, মুসলিম মায়েরা ইসলামের জ্ঞান ও আমলকে কিভাবে এই সময়ে কাজে লাগিয়েছেন সেটা নিয়ে জানার সুযোগ বেশ কম। এই উদ্দেশ্যে আমরা মাতৃত্ব ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ নিয়েছি প্রসব পরবর্তী সময়টা মুসলিম মায়েরা ইসলামের আলোকে কিভাবে মোকাবেলা করেছেন তা জানতে। আমরা তাদের নিচের প্রশ্নগুলো করেছিলাম। তাদের উত্তরগুলো কেস স্টাডি আকারে আমরা এই লেখায় তুলে ধরেছি। কেস স্টাডির শেষে আমাদের কিছু কথা রেখেছি।
প্রশ্নগুলো হচ্ছেঃ
১। যারা প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতায় ভুগেছিলেন তাদের সেই সময় কী ধরনের মানসিক সমস্যা হতো? এই ধরণের সমস্যা হতো কি – বাচ্চার প্রতি ভালবাসা নেই বা কম মনে হওয়া, আশপাশের মানুষকে অসহ্য লাগা, স্বামীর সাথে ঝগড়া হওয়া, শুধু বাচ্চাই গুরুত্বপূর্ণ মায়ের নিজের জীবন না, বাচ্চার প্রতি বিরক্তি বা ঘৃণা জন্মানো, আগ্রাসী চিন্তা এমনকি আত্মহত্যা বা বাচ্চাকে শারীরিক ভাবে ক্ষতি করার কথা মাথায় আসা?
২। কী ধরণের পদক্ষেপ নেয়ায় আপনি ভালো বোধ করেছিলেন?
৩। সেই সময় আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য আপনি কী করতেন?
৪। আপনার স্বামী/পরিবারের মানুষদের সহযোগিতা কেমন ছিল? আপনি কি তাদের বিষয়টা বোঝাতে চেষ্টা করে তাদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন?
৫। আপনি কি নিজের খেয়াল রাখতেন, যেমন সময়মতো খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, প্রতিদিন গোসল, চুল আঁচড়ানো ইত্যাদি?
৬। আপনি কি এই সমস্যার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন?
৭। পরবর্তী প্রেগন্যান্সীতে কী ধরণের পদক্ষেপ আগে থেকে নিলে এমন সমস্যা এড়ানো যাবে বা কম হবে বলে আপনি মনে করেন?
৮। আগে থেকেই যদি প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা নিয়ে জানা থাকে তাহলে কি উপকার হবে বলে মনে করেন? যদি আপনার আগে থেকে পড়াশুনা থাকে তাহলে কোন ধরণের লেখাগুলো বেশী উপকারী হয়েছিল বলে মনে করেন (যেমন: কেস স্টাডি, বেসিক কারণ, প্রতিকার ইত্যাদি)?
এবার আসুন দেখি কিছু মুসলিম মায়েদের উত্তর কেমন ছিল।
কেস স্টাডি ১ঃ রুসাফা জাহান
আমার মেয়ে হয় ৩.১.২০১৯ তারিখে আলহামদুলিল্লাহ। আমি এবং আমার স্বামী দুইজনই ডাক্তার। প্রেগনেন্সির সময় থেকেই আমার অনেক রকম শারীরিক সমস্যা ছিল। যেমন, বমি, খাবারে অরুচি, সব জয়েন্ট এ ব্যথা, কোন রকম পজিশনেই ১০/১৫মিনিটের বেশি থাকতে পারতাম না, ঘুমাতে পারতাম না। নরমাল ডেলিভারির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। ৩০ঘন্টা লেবার পেইন নিয়েও যখন বাবুর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল তখন সিজার করানোর সিদ্ধান্ত নেই।
আমি আল্লাহর সিদ্ধান্তেই সন্তুষ্ট ছিলাম। এরপর আমার ব্রেষ্ট ফিড করাতেও সমস্যা হয়, প্রচুর খাবার খাওয়ার পরেও পর্যাপ্ত ব্রেষ্ট মিল্ক আসতো না। তখন থেকেই আমার খুব খারাপ লাগত। বাবু কান্না করলে মনে হত ও আমাকে সহ্য করতে পারছে না। সারাক্ষণ দুধ মুখে নিয়ে থাকত। আমিও ওকে নিয়ে বসে থাকতাম।
বাসার সবাই বাবুকে নিয়ে চিন্তা করত। আমার যে একটা অপারেশন হয়েছে, আমারও যত্নের প্রয়োজন তা বুঝত না। তবে আমার স্বামী খেয়াল রাখত আমার। প্রেগনেন্সির সময় আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, সে যখন বাসায় থাকত আমি অনেকটা ভালো থাকতাম।
নিজের যত্ন নেয়ার চেষ্টা করেছি। বাবুকে কেউ কোলে নিলে সময় নিয়ে বসে খেয়েছি, গোসল করেছি।
বেশি খারাপ লাগত কেউ এসে উপদেশ দেয়া শুরু করলে। কিছু বলতাম না, পরে কান্না করতাম। বিশেষ করে বাবু দুধ পাচ্ছে না ঠিক মত এই কথা বললে মনে হত এটা আমারই দোষ! কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগত না। অসহ্য লাগত। তবে বাবুর উপর কখনো কোন নেগেটিভ অনুভূতি হয়নি।
আল্লাহর কাছে অনেক দুআ করেছি, সালাত শুরু হওয়ার পর যখনই ওয়াক্ত হয়েছে নিয়মিত সালাত আদায় করার চেষ্টা করেছি। আল্লাহ কে শুধু বলেছি, আল্লাহ সহজ করে দাও, আমি অসহায়।
আমার এই বিষয়ে আগে থেকে জানা থাকায়, স্বামীকে বুঝিয়ে বলা, আর স্বামীর সাহায্য পাওয়া এই বিষয়গুলো আমাকে অনেক সাহায্য করেছে আলহামদুলিল্লাহ। বিভিন্ন কেস স্টাডি গুলোই এই ডিপ্রেশন সম্পর্কে জানতে বেশি হেল্প করেছে।
কেস স্টাডি ২ঃ উম্ম নাওয়ার
যে সমস্যা গুলোর কথা লেখা আছে সেগুলো হয়নি। তবে, মনে হতো আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে। আমি আর কিছুই করতে পারবোনা৷ অনেক রেস্টলেস লাগতো। ঘুম হতোনা। বাচ্চা ঘুমালেও ঘুম আসতোনা৷
আমার স্বপ্ন ছিলো আমি ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করবো৷ তাজউয়ীদে ইজাজা নিবো। আরবী ভাষা শিখবো। বাচ্চাদের ভালোভাবে মানুষ করবো। সব কিছুই অসম্ভব মনে হচ্ছিলো৷ আর আমার বাচ্চা ছিলো কলিক। ঘুমাতো কম, অনেক কষ্ট হয়েছে। বাচ্চার বাবা আমাদের সাথে থাকতোনা। অন্য শহরে থাকতো। খুব মনে কষ্ট পেতাম উনি নিজের কিছু আরাম ছাড়তে চাইতোনা। আবার উনি জানতো আমার স্বপ্নগুলোর কথা। কিন্তু আমাকে আমার জীবনের লক্ষ্যগুলো অর্জন করার জন্য সহযোগিতা করতোনা৷ বাচ্চা হবার পর কষ্ট, স্ট্রেস কিছুই ওনার গায়ে লাগেনি। আমি মায়ের বাসায় ছিলাম। উনি যখন বলতেন বাচ্চা হবার পর টাইম দিচ্ছিনা, নিজের যত্ন নিচ্ছিনা তখন অনেক কষ্ট পেতাম।
বাচ্চার কয়েক মাস বয়সে ঝগড়া হয়েছিলো। আমার বাচ্চাটা খাওয়া, ঘুম, কান্না এসব নিয়ে সমস্যা করতো যেটা ওর স্বভাবগত কিন্তু সেটা আমার শ্বশুড়বাড়ির অনেকে বুঝতোনা। আমার হাজব্যান্ডও বুঝেনি এবং শ্বশুড়বাড়ির অনেকের কথা শুনে আমাকে এমন উপদেশ দিতো যা বাচ্চার সাথে খাটেনা। সব মিলিয়ে মা ঠিক ভাবে পালে নাই, শেখায় নাই অনেকটা এমন মনোভাব দেখাতো অনেকে। বাচ্চা হবার পর মায়ের সাথে কয়েকবার অনর্থক রাগ করেছিলাম। যেমন, আমার মা খুব গুছানো স্বভাবের না। সব এলোমেলো দেখলে আমার খুব ডিপ্রেসড লাগতো। রাগ হলে বাচ্চাকে কারো কাছে দিতাম না। কিন্তু বাচ্চার উপর কখনো রাগ হয় নাই।
বাবুর কয়েক মাস হবার পর আমি কোর’আন এর তাফসীর পড়া শুরু করি একটা ইভেন্ট এর সাথে যোগ দিয়ে। এর পর আস্তে আস্তে ভালো লাগতে থাকে। মনে হচ্ছিলো আমি পারবো সব কিছু।
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ভালো ছিলোনা৷ আমার নামাজ পড়তে খুব কষ্ট হতো। রেগুলার ডায়াপার দেয়াটা ব্যয়বহুল ছিলো। শ্বাশুড়ি, ননাস সবাই না দেয়ার পক্ষে ছিলো। পাক নাপাক ইস্যু, ঘুম কম হওয়ায় ফজর মিস এসব কারনে অনেক ডিপ্রেসড থাকতাম আর খুবই দুর্বল ছিলাম।
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ভালো হবার কোন উদ্যোগ নেইনি। অনেক ডিপ্রেশনে থাকলে আমি কিছুই করতে পারিনা।
ডিপ্রেশন এর বিষয়ে মা বাবা, শ্বশুড় শ্বাশুড়ি এদের কাউকেই কিছু বলিনি। ওনারা এগুলো ঠিক বুঝবেনা মনে হতো। আমার মা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। তবে, আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি। বলতো, খাওয়া দাওয়া ঘুম ঠিক রাখতে। বাচ্চাকে বেশি কোলে না নিতে। আমি কোলের অভ্যাস করে ফেলছি এগুলো বললে আরো কষ্ট পেতাম। ডিপ্রেসড থাকলে যে ঘুম হয়না, খাওয়া যায়না এগুলো বুঝতো কিনা জানিনা। বুঝলেও এগুলোই বার বার বলতো। আমার মা এত কষ্ট করার পরও কেন জানি মার সাথে রেগে চিল্লাচিল্লি করতাম।
নিজের খেয়াল মোটামুটি রাখতাম। বেসিক কাজগুলো করতাম যেমন গোসল, খাওয়া এসব৷ তবে, গোসল টাইমলি করতাম না। মাঝে মাঝে গভীর রাতেও গোসল করেছি। বাবুর জন্য টাইম পেতামনা তাও না। ইচ্ছা করেই এমন করতাম। আর স্ক্রীন দেখতাম অনেক।
অনেক আগে ডিপ্রেশন এর জন্য ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। হাইপোথাইরয়েড এর জন্য অনেক ডিপ্রেশনে ভুগেছি। নতুন করে আর ডাক্তার দেখানো হয়নি। আমার থাইরয়েড গ্ল্যান্ড এর অবস্থাও খারাপ ছিলো ডেলিভারীর পর।
পরবর্তী প্রেগন্যান্সীতে কী ধরণের পদক্ষেপ আগে থেকে নিলে এমন সমস্যা এড়ানো যাবে বা কম হবে এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই, প্রেগন্যান্সি নিয়ে আগে থেকে জানা প্রয়োজন। শুধু বইয়ের কথা না; বাস্তব জীবন থেকে জানা যে মানুষ কিভাবে এটা পার করে, কী কী সমস্যা হয় ইত্যাদি। আমি প্রেগন্যান্সির পর কী কী হতে পারে কিছুই জানতাম না। আর অন্যদের সাথেও আলোচনা করলে, সব গুছিয়ে প্ল্যান করে রাখলে উপকার হয়।
আগে থেকে জানা থাকলে কিছুটা উপকার হবে ইনশাল্লাহ। সবাই হেল্প করলে, পর্যাপ্ত রেস্ট নিলে, নিজের জন্য কিছুটা বিনোদন এর ব্যবস্থা করতে পারলেও অনেকটাই ভালো থাকা যায়। আরেকটা বিষয় দেখলাম আমাদের দেশে মানুষ বাবুদের নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়না। নবজাতকের ঘন ঘন পরিবর্তনগুলো নিয়ে মায়েরা জানেনা। তখনও ডিপ্রেশনে পরে। দ্বিতীয় বাবুর পর আলহামদুলিল্লাহ আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি।
২য় পর্ব দেখুন এখানে।
কেস স্টাডি ৩ঃ হাসনীন চৌধুরী
সে সময় খুব রেগে থাকতাম, অল্পতেই রেগে যেতাম, চ্যাঁচামেচি করতাম, কান্নাকাটি করতাম। সবার উপদেশ অসহ্য লাগতো। স্বামীকেও ভাল লাগতো না।
আলহামদুলিল্লাহ সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে গেছে। তাই আমার সমস্যাটা নিশ্চয়ই পিপিডি ছিল না, তবে বেবি ব্লু বলা যেতে পারে। এর জন্য আমি কোন পদক্ষেপ নেইনি। আলহামদুলিল্লাহ ঘরের মানুষদের সহযোগিতা আর আমার চ্যাঁচামেচি সহ্য করাটা অনেক উপকারী ছিল আমার জন্য।
কেস স্টাডি ৪ঃ সাদিয়া হালিমা তুজ সাদিয়া
দুইটা প্রেগন্যান্সির পরই পিপিডি/ বেবি ব্লু এর শিকার হয়েছিলাম।
প্রথম প্রেগন্যন্সীতে থাকাকালীন সময়েই এর সম্পর্কে জেনেছিলাম। তবে এর ব্যবহার করতে পারিনি (আমি আমার প্রথম প্রেগন্যান্সী ও প্রেগন্যান্সী পরবর্তী সময় নিয়ে কাছের মানুষদের ছাড়া আর কারো সাথে কথা বলতে পছন্দ করিনা।)
আমার বাবা-মা, স্বামী এ বিষয়ে কিছু জানতো বলে মনে হয় না। তবে বাবু হবার পর আম্মার কাছে ছিলাম দেড় বছরের মতো সময়। তাই অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল আলহামদুলিল্লাহ্।
এ সময়, বাবুকে কেন্দ্র করে সব কিছু চিন্তা করা হতো। নিজেকে অযোগ্য মনে হতো। ঘুম হতো না। ইমোশনাল হয়ে যেতাম, কারণ ছাড়াই কান্না আসতো, অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ হবার জন্য কাঁদতেও পারতাম না। মনে হতো কেউ আমাকে বুঝে না,
অভিমানী হয়ে পড়েছিলাম।
সবসময়ে মনে হতো বাবুর কোনো ক্ষতি না করে ফেলি, ব্যাথা না দিয়ে ফেলি। আমি ফুল টাইম বাবুর পাশে বসে / শুয়ে থাকতাম, obsessed ছিলাম বাবুর ব্যপারে। আমার বোনের ভাষ্যমতে সাপের মত বিড়া পেচিয়ে থাকতাম! তবে বাবুকে ব্যথা দেয়ার কোন চিন্তা আসেনি আলহামদুলিল্লাহ্। বাবুর ৩/৪ মাসের সময়ে একবার কোন কারন ছাড়াই রেগে গিয়েছিলাম,
এছাড়া কথা ভুলে যাওয়া, নাম ভুলে যাওয়া, শূন্য অনুভব করা, সময়ের খেই হারিয়ে ফেলা, সন্দেহ প্রবনতা, এগুলো সবই ছিলো।
দুয়া করা/জিকির করা হতো আলহামদুলিল্লাহ্। তবু, কেউ কিছু বললে মরে যেতে ইচ্ছে করতো। আশেপাশের সবার সমস্যার জন্য নিজেকে দায়ী মনে হতো।
কেস স্টাডি ৫ঃ ডাঃ সারওয়াত জাবীন আনিকা
প্রথম দিকে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত লাগতো নানা মুনির নানা মত, সব বিষয়েই সবার একটা মতামত এবং নেগেটিভ রেসপন্স থাকতো। ব্যাপারটা এমন ছিল যেন একমাত্র আমিই আমার মেয়ের ক্ষতি করার সুযোগে বসে আছি। তাও মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছিলাম খুব; মেয়ে হওয়ার পর খুব অসুস্থ হয়ে যাই- বাঁচি না মরি এমন একটা অবস্থায় পড়েছিলাম। আমি হাসপাতালে আর মেয়ে বাসায়, ব্রেস্টফিডিং করতে পারতো না মেয়ে, ওর দুধ টেনে খেতে সমস্যা হতো ( এটা পরে ডায়াগনোসিস হয়)। এই ব্রেস্টফিডিং নিয়ে প্রচুর কথা শুনি, বাচ্চার হক মারছি- মা হওয়ার যোগ্য নই, নিজের ফিগার ঠিক রাখতে/ আরাম করতে বাচ্চাকে খাওয়াই না। কিন্তু আমার বাচ্চা এক্সপ্রেসড ব্রেস্ট মিল্ক খেয়েছে প্রায় এক্সক্লুসিভলি মানে প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধই খেয়েছে বলা যায়, শুধু যেদিনগুলো আমি প্রচন্ড অসুস্থ থাকতাম, সার্জারী করা হতো আমার বা আইসিইউতে ছিলাম – সেদিনগুলো ছাড়া ও ফর্মুলা খায় নি।
আমার এমার্জেন্সী সিজার করা হয় নরমাল ট্রাই করার জন্য। কিছু মা তাদের মাতৃত্বের সার্থকতা বা মহানত্ব নরমাল ডেলিভারিকে ধরে নেন। দূর্ভাগ্যবশত এমন কিছু অসুস্থ মানুষের কথা বেশি শুনতাম যে “খুব আরামে মা হয়ে গেছো! আমাদের ব্যথা উঠেছে, ঘরের কাজ সেরে খাটের পায়া ধরে বসেছি উবু হয়ে, আর বাচ্চা হয়ে গেছে।” নিয়মিত ফোনে ও সামনাসামনি এইসব শুনতাম আর নিজের ৩দিনের অসহ্য প্রসব বেদনা, ট্রায়ালের পর ট্রায়াল, নিজের প্রচন্ড চেষ্টা সেই প্রথম তিন মাস থেকেই আর ট্রায়াল রুমে Antepartum haemorrhage এর ভয়াবহ সেই ব্লিডিং এর দৃশ্য চোখে ভাসতো। আমি ডাক্তার, নিজের হিসাবে নাই কত কত বাচ্চার ডেলিভারি করিয়েছি, কত বাজে পরিস্থিতি দেখেছি- আল্লাহর হুকুমে মায়েদের, বাচ্চাদের বাঁচাতে জানপ্রাণ লাগিয়ে দিয়েছি, কিন্তু নিজের এইভাবে ব্লিডিং দেখে আশা করিনি বাঁচবো। আমার মা- বাবা, স্বামী ডাক্তার, দুইজন স্পেশাল কনসালটেন্ট এর আন্ডারে ছিলাম, তাদের সেই দিশাহারা চেহারা আমি আজো ভুলতে পারিনি। এতোটাই এমার্জেন্সী ছিল যে ডাঃ শিউলি স্পাইনাল এনেস্থিসিয়া কাজ করার আগেই পেটে ইনসিশান দেন, আমার মেয়েকে বের করা হয় ১০ মিনিটেরও কম সময়ে।
আমি পুরো ব্যথা টের পেয়েছি, ওটি টেবিলে আমি তওবা করেছি, কালেমা পড়েছি- আশা রাখিনি যে মেয়েকে দেখবো। মেয়েকে দেখে শুধু এনেস্হেটিস্ট স্যারকে বলেছি ওর নাম ইউসরা হবে আর তারপর আমার কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়ে যায়। এই জিনিসগুলো আমাকে একদম ভেঙে দিয়েছিল। নিজে নিজে সবর করতাম, ভেবেছিলাম যে আমি ফাইট করতে পারবো। মেয়ে সারারাত কাঁদতো। এই শরীর নিয়ে একা একা রাতের পর রাত জাগা একদম পাগলপ্রায় হয়ে গেলাম। স্বামী ঢাকায় কোর্স করছিলেন, ছুটি পেতেন না। আব্বু আম্মু ডাক্তার, প্রচন্ড ব্যস্ত- তাদেরও বা কী দোষ দেই। কোনো সাহায্যকারী ছিল না। মেয়ে হওয়ার ৫৫ দিন পর সুইসাইড করতে যাই আর কষ্ট সহ্য না করতে পেরে। এটা শায়তানের ওয়াসওয়াসা ছিল – যখন বোধ হয় কী করতে যাচ্ছি জোরে জোরে আয়াতুল কুরসি আর দরুদ, কালেমা পড়তে থাকি। ফাজরের পর আম্মু উঠে আমাকে এই অবস্থায় দেখতে পান- তারপর সাইকিয়াট্রিস্ট এর সাথে কথা বলি আমরা। আমার পিপিডি আর পিটিএসডি ডায়াগনোসিস হয়, ওষুধ শুরু হয়। কিন্তু আমি আগের মতোই থাকি। মেয়ের বাবার উপর অভিমান, রাগারাগি, নিজের আম্মু আব্বুর সাথে রাগ, মেয়ে কাঁদলে অসহ্য লাগতো, নিজে নিজের মৃত্যু কামনা করতাম- মনে হতো মেয়ে হয়েছে, আমার আর প্রয়োজন নেই। আর খুব ভয় পেতাম, অবুঝের মতো দু’আ করতাম যেন আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেন।
মোটামুটি প্রায় দুই মাস পর যখন প্রথম সিজদা দিতে পারি, সেই দিন মনে হচ্ছিল আমি সুস্থ হয়ে উঠবো। নামাজ আসলেই ফোকাস করতে সাহায্য করেছিল আমাকে। মোবাইলে Iquran ছিল, মেয়েকে খাওয়ানোর সময়- বিশ্রাম করার সময় বা ঘুম পাড়াতে গিয়ে কুরআন তেলাওয়াত শুনতাম, তাফসির পড়তাম। নোমান আলী খান, মির্জা ইওয়ার বেইগ আর ইয়াসির কাদির লেকচার শুনতাম প্রচুর। আর বই পড়তাম – গল্পের বই হোক আর পড়ার বই।
তবুও ব্যাটে বলে মিলছিল না- সবকিছু আগের মত হচ্ছিল না। এমন একটা সময় গেছে আমার, পাশে কাউকে পাইনি। এই অসহ্য দিনগুলোর একদিন মেয়ের বাবার একটা চিঠি পাই- এই চিঠিটাই হয়তো মূল চালিকাশক্তি ছিল, এখনো আছে। আমার আম্মু আব্বু ছোট বোন আর ইশফাক পাশে দাঁড়ায় আস্তে আস্তে। আব্বু কোনোদিন বাচ্চা ধরেননি, অফিস করে এসে আনাড়ি হাতে ইউসরাকে ফিডার খাওয়াতেন, বাবুর ডায়াপার পালটানোর সময় বোকা বোকা হয়ে ডাকতেন। আম্মু ডিউটি থেকেই এসে মেয়েকে নিয়ে যেতেন, আমাকে ঘুমাতে দিতেন। ছোট বোন জোর করে টেনে বাইরে নিয়ে যেতো, ক্লাস করে এসে হয় বাবুকে নিয়ে আর নাহয় আমার সাথে সময় কাটাতো। ১০ বছর বয়সী খালাতো ভাই স্কুলের ছুটিতে এসে সারাদিন আমার পাশে, ওর সাথে গেইম খেলতাম- বই পড়তাম শেয়ার করে, বাবুকে নিয়ে খেলতাম। আর মেয়ের বাবা ছুটি পেলেই আসতো, ওর মোরাল সাপোর্ট আমার জন্যে অনেক বড় পাওয়া ছিল ।আমাকে কাউন্সিলিং করতো ও, সব নেগেটিভ কথা থেকে শিন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমার জন্য। তারপর পাশে পাই ৩-৪জন দ্বীনি আপুদের। এদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আল্লাহর তরফ থেকে বিশাল রহমত এই বোন কয়জন আমার জন্যে৷
আলহামদুলিল্লাহ এই একটাই রিফিউজ ছিল আমার, আমার যুঝে যাওয়ার সব শক্তি। নামাজ, দরুদ পড়া আর কুরআনের তাফসির পড়া সাহায্য করে আমাকে। আর নিজেকে রুকিয়া করতাম নিয়মিত।
হাজবেন্ডকে বলেছিলাম, সাহায্য চেয়েছিলাম। আব্বু আম্মু ব্যাপারটা দেরিতে হলেও বুঝতে পারেন। পাশে পাই সবাইকে দেরিতে হলেও।
প্রথম দিকে নিজের খেয়াল রাখতাম না, কিন্তু তারপর শুরু করি। এই ভুলটাই করি আমরা আসলে, নিজেদের খেয়াল রাখিনা। এটা খুব জরুরি।
আমি এই সমস্যার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিলাম।
পরবর্তী প্রেগন্যান্সীর জন্য বলব, প্রথমত নিজের এবং পরিবারের মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। ইমার্জেন্সি যেকোনো ধরনের ব্যপার হতেই পারে – এটার জন্য মানসিকভাবে এবং নিজের সাধ্যমতো প্রস্তুত থাকা। দ্বিতীয়ত- আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ আস্থা আর তাঁর সাথে নিজের সম্পর্ক ভাল রাখা। তৃতীয়ত- নেগেটিভ মানুষগুলোকে সম্পুর্ণ এড়িয়ে চলা, যদি নিতান্ত সম্ভব না হয়- দূরত্ব বজায় রাখা সম্মানজনকভাবে।
আমি নিজে ডাক্তার এবং সাইকিয়াট্রি নিয়ে পড়ছি, তাই সচেতন ছিলাম। তা সত্ত্বেও আমাকে ডিপ্রেশনে পড়তে হয়েছে৷ Knowledge is power. আমি জানতাম বলেই চেষ্টা করেছি, সচেতন হয়েছি। এইসব বিষয়ে অবশ্যই পড়াশোনা করা দরকার, শুধু ফেইসবুকের গল্প পড়ে না, বরং দেশের বাইরের বিভিন্ন ব্লগ, বই পড়ে। জ্ঞানও সঠিক জায়গা থেকে আসা উচিত, না হলে ফলাফল হিতে বিপরীত হতে পারে। আমি মেডিকেলের বই, আর্টিকেল পড়েছি, নিজে বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক বই পড়েছি, লেকচার শুনেছি।
কেস স্টাডি ৬ঃ যেবুন্নেসা তমা
আত্মহত্যা বাদে উপরে উল্লেখিত প্রতিটি চিন্তাই মাথায় এসেছে বহুবার। আত্মহত্যার কথাও এসেছে, কিন্তু একই সাথে ওইটা যে সম্ভব না সেই বোধও কাজ করেছে। আরেকটি মারাত্মক যে সমস্যা হয়েছে তা হল আল্লাহর প্রতি অসন্তোষ। খালি মনে হতো এত দুয়া করছি, তিনি চাইলেই তো আমার জন্যে এই পরীক্ষা একটু সহজ করে দিতে পারেন।
দেশের বাইরে থাকায় Counselor কে পাওয়া সহজ ছিল আমার জন্য। কিন্তু বড় মেয়েকে সাথে নিয়ে counseling এ যেতে হত যেটা বেশ ঝামেলার মনে হত। তাই যদিও উপকার পাচ্ছিলাম, তাও কাউন্সেলর এর কাছে যাওয়া বন্ধ করে দেই। তবে তার দেওয়া লিফলেটগুলো মনযোগ দিয়ে পড়ি এবং সেই অনুযায়ী depression combat stategy লিখি। সেখানে আগেই চিন্তা করে point by point লিখে রাখি যে যখন depression এর ধাক্কা আসবে, কী কী করব সামাল দিতে। নিজের ভালো লাগে এমন কোন কাজ ওখানে লিখতে বলা ছিল। আমি মেহেদি দেওয়া আর রান্নার কথা লিখে রেখেছিলাম। খুব কাছের কারো ফোন নাম্বার লিখে রাখতে বলা হয়েছিল, যার সাথে venting করা যায়, depression এর মুহূর্তে সব খুলে বলা যায়। আলহামদুলিল্লাহ আমার অনেক দ্বীনি বোন আছেন যাদের আমি আমার মনে কী চলছে খুলে বলতাম। ওই কাগজে আরেকটা point ছিল- নিজের strength সম্পর্কে লিখ, যা কিনা তোমাকে সাহায্য করে depression এর মুহূর্তেও নিজেকে সংযত রাখতে। আমি লিখেছিলাম- স্রষ্টার সাথে আমার সম্পর্ক। এই পয়েন্টটার এত শক্তি ছিল, যে যখনি আমি কাগজটা হাতে নিয়ে এই পয়েন্টটা পড়তাম, আমার মনে হত আমি পারব নিজেকে control করতে। এছাড়াও আমি ইন্টারনেটে বিভিন্ন লেখা পড়তাম এ বিষয়ে, আর সেখানে দেওয়া পরামর্শ গুরুত্বের সাথে নিতাম। যেমন আমি আমার মেয়ের coloring বুক এ ছবি কালার করতাম, gratitude diary রাখতাম যেখানে প্রতিদিনের ৩টি এমন বিষয় লিখতাম যার জন্য আমি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ। এছাড়া আমি আমার কষ্ট নিয়ে venting করতাম, আমার ভাই-বোন, স্বামী এবং প্রিয় বন্ধুদের কাছে অভিনয় করতাম না কখনোই, বরং তাদের জানাতাম যে আমার মানসিক কষ্ট হচ্ছে। আমি সালাতের সিজদায় আল্লাহ্’র সাহায্য চাওয়ার পাশাপাশি দুইটা আমল করতাম- depression এর মুহূর্তে যতই বাজে চিন্তা মাথায় আসুক না কেন, আমি continuously ইস্তিগফার করতে থাকতাম। আর অন্যান্য সময় চেষ্টা করতাম যিকির করে মনকে ব্যস্ত রাখতে।
সেই সময় আল্লাহর সাথে সম্পর্ক কেমন ছিল ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য কী করতাম এই উত্তরটা আমি উপরে লিখে ফেলেছি। মূলত আল্লাহর প্রতি সুধারণা ধরে রাখতে পারতাম না, বিশেষ করে ওই মুহূর্ত গুলোয় যখন দুই বাচ্চা একসাথে কাঁদতো, জ্বালাতো এবং স্বামী কোন সাহায্য করত না। দ্বীনি বোনদের সাথে আলোচনা, সিজদায় সাহায্য চাওয়া, ইস্তিগফার আর তাহমিদ- এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি।
দেশের বাইরে থাকি বলে পরিবারের কারো সাহায্য পাবার সুযোগ ছিল না, তবে আমি আমার বোনের সাথে কষ্টগুলো শেয়ার করতাম, সেটাও আমার উপকারে এসেছে। স্বামী পিএইচডির ছাত্র হওয়ায় যথেষ্ট সময় দিতে পারত না। আর কিছুটা গাফিলতিও তার ছিল। তার পক্ষ থেকে যথেষ্ট support আমি পেতাম না। তাকে আমি জানিয়েছি কষ্ট গুলো, তবে রাগ আর অভিযোগের সাথে জানিয়েছি। ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলা বা আলোচনা করার মতন অবস্থায় আমি ছিলাম না।
নিজের যত্ন নেয়ার কোনটাই করতাম না ঠিক মত। এমন কি দাঁতও মাজতাম না নিয়মিত।
আমি USA থাকি, এখানে সব প্রেগন্যান্ট মহিলাকেই depression screening test করতে হয়। এটা বাধ্যতামূলক। তাই বলা যায় আমি ডাক্তারের সাহায্য নিয়েছিলাম।
পরবর্তী প্রেগন্যান্সীতে, আমি উপরে যেই কৌশলগুলোর কথা লিখেছি, সেগুলোই উপকারে আসবে। সাথে যেসব বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের কথায় মানসিক চাপ অনুভব করি, তাদেরকে যথা সম্ভব এড়িয়ে চলা।
অবশ্যই আগে থেকে জানা থাকলে বোঝা যায় যে আমার সাথে যা হচ্ছে এটা সাময়িক, অনেক মা-ই এই সমস্যায় ভুগেন, ইনশা আল্লাহ এই ঝামেলা কেটে যাবে। আর প্রতিকার বিষয়ক লেখা থেকে সবচেয়ে উপকৃত হয়েছি।
কেস স্টাডি ৭ঃ উম্ম মারইয়াম
প্রথম প্রশ্নে উল্লেখিত সমস্যাগুলো হয়েছিল তবে স্বামীর সাথে ঝগড়া হয়নি আবার বাচ্চার প্রতিও কোন নেতিবাচক মনোভাব আসেনি। যা এসেছিল তা শ্বশুরবাড়ির লোকের প্রতি।
শ্বশুরবাড়ির লোকের প্রতি পদক্ষেপ নেওয়া সহজ কিছু না। প্রথমবারের মতোন তাঁদের প্রতি অভিযোগ, অপছন্দ উত্থাপন করেছিলাম। এসবের ফলশ্রুতিতে বাবুর বয়স ৫/৬ মাসের মাথায় আলাদা হয়ে যাই যেখানে আমার স্বামী পুরোপুরি সাপোর্ট দিয়েছিল। অবশ্যই ভালো বোধ করেছিলাম।
প্রেগন্যান্সিতে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ভালো ছিল। প্রেগন্যান্সিতে যেহেতু অনেক ব্যাপারে সচেতন ছিলাম যেমন গীবত, কথার ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী, পরচর্চা না করা তাই প্রেগন্যান্সি পরবর্তী সময়ে আর এসব নিয়ে কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। তখন নতুন করে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নত করার মতোন শারীরিক, মানসিক, আত্মিক অবস্থা ছিলো না।
আমার স্বামী জানতেন এই ব্যপারে। ভদ্রলোক এসব ব্যাপারে পড়াশোনা করতেন। আমি নিজেও পড়ার পরে শেয়ার করতে অভ্যস্ত ছিলাম। তিনিও নতুন কিছু জানলে শেয়ার করতেন।
নিজের খেয়াল রাখার ব্যপারে, পর্যাপ্ত ঘুম বাদে সবই হতো, আলহামদুলিল্লাহ। মেয়ের কারণে রাতে ঘুম সম্ভব ছিলো না। আমি দিনের বেলা ঘুমাতে অভ্যস্ত না তাই রাতের ঘুম দিনে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব ছিলো না। খাবারের ব্যাপারে প্রেগন্যান্সি, প্রেগন্যান্সির পরে ভীষণ সমস্যা হয়েছিল। শ্বশুরবাড়িতে খাদেমা ব্যতীত নিজের দেখাশোনা এত সহজ কোন বিষয় না। তারা যেরকম সহযোগিতা করেছিল তা অবশ্যই যথেষ্ট ছিল না। পরিস্থিতি এমন ছিলো, নিজের স্বামীর টাকা দিয়েও নিজের জন্য খাদেমা রাখার সুযোগ ছিলো না। প্রচুর জটিলতা ছিলো। আর্থিক কিছু সমস্যা ছিলো সেসময়।
সমস্যাগুলো ডাক্তার সম্পর্কিত কোন সমস্যা ছিল না। তাই কারও দ্বারস্থ হওয়া লাগেনি। নিজেদের সমস্যা তাই নিজেদের সমাধান করতে হয়েছে।
এখন যেহেতু আলাদা থাকি ইন শা আল্লাহ খাবার সংক্রান্ত, খাদেমা নিয়ে অন্যের সাহায্য নেওয়া সংক্রান্ত সমস্যা হবে না।
এটা এমন একটা বিষয় প্রসব পরবর্তী জিনিস যতই পড়াশোনা করুন মিনিমাম সপ্তাহ খানেক এটার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। আমার কয়েক সপ্তাহ ছিলো। যেহেতু স্বামীর পুরো সহযোগিতা ছিল সবদিক দিয়ে তাই সহনীয় ছিলো, অত বেশি কষ্টের কিছুই ছিলো না। পড়াশোনা দুজনেরই ছিলো কিন্তু পারিনি তো সামাল দিতে। এসময় নামাযও থাকে না। এদিক হতেও মেয়েরা দুর্বল থাকে। সিজারের ব্যাথা, শারীরিক সমস্যাগুলো অসম্ভব ভোগায়। এই ডিপ্রেশনের চেয়ে এই সমস্যা কোন অংশে কম না।
কেস স্টাডি ৮ঃ আহলিয়া শাহরিয়ার
প্রসব পরবর্তী কী কী সমস্যা হয়েছিল তা নিয়ে বলার আগে আমি একটু ব্যাক ট্র্যাক করতে চাই। আমি প্রেগন্যান্সীতে চেষ্টা করেছিলাম অথেনটিক সোর্স থেকে প্রেগন্যান্সী, ডেলিভারী, প্রসব পরবর্তী বাচ্চা ও নিজের যত্ন নিয়ে পড়াশুনা করতে। আরেকটা বড় হেল্প ছিলো হাসপাতালের এন্টিনাটাল ক্লাস। আমি নিজে পড়াশুনার পাশাপাশি আমার জামাইকেও খুব দরকারি ইনফোগুলো শেয়ার করতাম। আমরা ডিনার করার সময় কিংবা রাতে ঘুমানোর আগে এগুলো নিয়ে কথা বলতাম। তাই আলহামদুলিল্লাহ্ জামাইও মোটামুটি এসব ব্যাপার নিয়ে অল্প বিস্তর জানতো।
আমাকে ৩৯সপ্তাহ শেষে ইন্ডাকশানে নেওয়া হয়েছিলো। আল্লাহ্র অশেষ মেহেরবানীতে ৫দিন ব্যাপী ইন্ডাকশান প্রসেস, ১৯ঘন্টার একটিভ লেবার পেইন, এরপর ডাক্তারের হঠাত এমার্জেন্সী সি-সেকশানের ডিসিশান এই পুরা সময়ে অনেক বেশী সবর করতে পেরেছিলাম।
আমার মধ্যে বেবী ব্লুর সিম্পটম প্রথম শুরু হয় যখন আমার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করি। বুকের কাছে ধরলেই বেবী কান্না করতো; এমনভাবে চিৎকার করতে করতে লাল হয়ে যেতো যে আমিও সবর করতে না পেরে কান্না করতে থাকতাম। এরপর আরও ভয়াবহ ছিলো আমার জন্য “সেকেন্ড নাইট সিন্ড্রোম”। আশ্চর্যজনকভাবে আমি এই ব্যাপারে কেন যেন কোথাও তেমন কিছু পাইনি এমনকি এন্টিনাটাল ক্লাসেও না। “সেকেন্ড নাইট সিন্ড্রোম” হলো বেবী জন্মের ২৪ঘন্টা পার হলে হঠাত করেই বুঝতে পারে সে আর আগের মতো পানির নিরাপত্তা বলয়ে নেই সাথে গর্ভের সেই নানারকম শব্দও লাপাত্তা। তখন বেবী অনবরত কান্না করে, কোলে থাকতে চায়। আমি যেহেতু এই ব্যাপারে কিছুই জানতাম না প্লাস সারাদিন অনেক বেশী ভিজিটর থাকায় আমার কোন রেস্টও হয়নি সাথে হরমোনাল ইফেক্টে আমার নিজেকে খুব বেশী হতাশ ও ব্যর্থ মা মনে হচ্ছিলো।
পরদিন থেকে বিভিন্ন টেকনিক ব্যবহার করেও যখন বেবীকে ডাইরেক্ট খাওয়ানো গেলোনা তখন দুধ এক্সপ্রেস করে সিরিঞ্জে বেবীকে খাওয়ানো হলো।
আমি বাসায় এসেও অনেক চেষ্টা করে বেবীকে ডাইরেক্ট খাওয়াতে না পেরে এক্সপ্রেস করেই কন্টিনিউ করা শুরু করলাম। আলহামদুলিল্লাহ্ ফ্লো অনেক ভালো থাকায় বেবী এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টমিল্ক পাচ্ছিলো কিন্তু ধীরে ধীরে আমার নিজেকে খুবই ব্যর্থ একজন মানুষ মনে হচ্ছিলো। এর সাথে অনেক বেশী মিশুক এই আমার কাউকে ভালো লাগতোনা, অকারণে কান্না পেতো, মন খারাপ লাগতো, মনে হতো বাচ্চার টেক কেয়ার করতে পারছিনা। আলহামদুলিল্লাহ্ কখনই আমার বেবীর প্রতি কোন বিরক্তি আসেনি। জামাইয়ের নরমাল কথায়ও অনেক সময় দুঃখ পেয়ে যেতাম; এক্সপ্রেস করে দুধ খাওয়ানোর কথা অনেকের কাছেই বলতাম না কারণ মানুষ নানারকম কথা বলতো আর আমি ভয়াবহ আপসেট হয়ে যেতাম। নিজের যত্নের ব্যাপারে একদমই কেয়ারফুল ছিলাম না। খাওয়া, ঘুম, গোসল সবকিছুর অনিয়ম হতো।
আমি এই সময়ে নামাজ না পড়তে পারলেও যিকির করতাম। মেয়েকে জন্ম থেকেই যিকির করে ঘুম পাড়াতাম। আমার কাছে মনে হয় যে এই যিকিরের জন্যই বোধহোয় খুব খারাপ কোন চিন্তা কখনও আমার মধ্যে কাজ করেনি। সাথে ছিলো জামাইয়ের হেল্প। আমার মনে আছে দুই সপ্তাহের বাচ্চা নিয়ে আমরা সমুদ্র দেখতে গিয়েছিলাম। জামাইয়ের এই ডিসিশান নেওয়ার পেছনে কারণ ছিলো যেন আমি ভালো বোধ করি। সাথে সুযোগ পেলেই সমমনা প্র্যাকটিসিং বোনদের সাথে দেখা করতাম, কথা বলতাম, বই পড়তাম। আলহামদুলিল্লাহ্ বেবী ব্লুর এই স্টেইজ পার হয়ে আমি মোটামুটি ভালো ছিলাম শুধু বাচ্চার দুধের ইস্যুটা নিয়ে মন খারাপ লাগতো।
পোস্ট নাটাল ডিপ্রেশান যে দুই বছরের মধ্যে যেকোন সময় দেখা দিতে পারে তা আমি আমার নিজের জীবন থেকেই বুঝেছি। আমার সন্তানের যখন এক বছর বয়স তখন আমি প্রথম শ্বশুড় বাড়ির মানুষের মুখোমুখি হই। বাচ্চা কেন ব্রেস্টফিড করেনা, ন্যাপি কেন পরাই, একটু মোবাইল কেন দেখতে দেইনা এমন হাজারো অভিযোগে জর্জরিত হয়ে আমি এক সময় ব্রেক ডাউন করি। হরমোনাল কিছু ব্যাপার তো ছিলো সাথে এত এত অভিযোগের তীরে আমি আস্তে আস্তে ডিপ্রেশনের অতল গহবরে হারিয়ে যেতে শুরু করি। নিজের উপর চরম বিরক্ত লাগতো। মনে হতো এত ব্যর্থ আমি মরে গেলেই ভালো (আল্লাহ্ মাফ করুক)। আমার কনফিডেন্স একদম জিরো হয়ে গিয়েছিলো। অল্পতেই আমি অনেক বেশী রিয়েক্ট করতাম। অল্পতেই আমি প্যানিকড হয়ে যেতাম। অনেক বেশী পজেটিভ এই আমি পুরাই ১৮০০ এঙ্গেলে ঘুরে একজন নেগেটিভ মানুষ হয়ে গেলাম।
আগে থেকে এই ব্যাপারে জানতাম বলেই আমি নিজের অবস্থা বুঝতে পেরেছিলাম। তাই আমি প্রচুর দোয়া করতাম, যিকির করতাম, সিজদায় গিয়ে অঝোরে কান্না করতাম, আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাইতাম, সমমনা বোনদের সাথে নিজের কষ্টগুলো শেয়ার করতাম। মাঝে মাঝে তাহাজ্জুদ পড়ে অনেক কেঁদে কেঁদে দোয়া করতাম সবকিছু সহজ ও বরকতময় করে দেওয়ার জন্য। প্লাস আমার জামাই আলহামদুলিল্লাহ্ অনেক হেল্প করেছিলো, আমার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলো (এক দুইবার বাদে আলহামদুলিল্লাহ্)। জামাই প্রচুর কাউন্সেলিং করতো আমাকে, সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতো। আমাকে লেখালেখি করতে উৎসাহ দিতো। আমাকে আমার পড়াশুনার কাজে ফিরতে অনেক অনেক উতসাহের সাথে সন্তানকে টেক কেয়ার করতো। আমাকে মী টাইম দেওয়ার চেষ্টা করতো, বারাকাল্লাহু ফি।
পরবর্তী প্রেগন্যান্সীতে ইনশাল্লাহ চেষ্টা থাকবে যেন নিজের প্রতি যত্নবান হই। বাচ্চার দেখাশুনার পাশাপাশি দিনে ১০/১৫মিনিট করে হলেও একান্ত নিজের জন্য কিছু করবো সেটা হোক আরাম করে এক কাপ চা খাওয়া, কিংবা একটা আরামপ্রদ গোসল, কিংবা একাকী কিছুক্ষণ বই পড়া কিংবা লিখা। প্রেগন্যান্সী সময় থেকেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে দোয়া করবো। যিকির, দোয়া কন্টিনিউ রাখার চেষ্টা করবো। নিজের উপর প্রেশার দিবোনা ইনশাল্লাহ।
আমি আমার নিজের লাইফ থেকেই বুঝি যে এই বিষয়ে পড়াশুনা থাকলে আসলে অনেক হেল্প হয়। অন্তত এইটুকু বোঝা যায় যে আমার কিছু সমস্যা হচ্ছে আমার এখন হেল্প দরকার; হোক তা পরিবারের হেল্প কিংবা ডাক্তারের হেল্প। আমার কাছে মনে হয় যে কেস স্টাডি, বেসিক জিনিস, প্রতিকার সবকিছুই কাজে দেয়। তবে হ্যাঁ সবচেয়ে ভালো হয় মাদারহুড অন্যান্য সব বিষয় না হলেও অন্তত এই বিষয়ে স্বামী স্ত্রী দুইজন মিলে জ্ঞানার্জন করা।
শেষ পর্ব দেখুন এখানে।
আমাদের কথা
আমরা এতক্ষণ কিছু মুসলিম মায়েদের প্রসব পরবর্তী সময়টা নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা পড়লাম। জানলাম যে, প্রায় সব মায়েরাই কিছুটা বিষণ্ণতা, মানসিক টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে যান এই সময়। তবে কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে এই সমস্যা অল্প বা বেশি হয়ে থাকে।
অল্পতেই কাটিয়ে ওঠা যায় যদি এই নিয়ে আগে থেকে জানা থাকে; মা নিজে সচেতন থাকেন ও স্বামীসহ পরিবারের অন্যদের সহযোগিতা পাওয়া যায়, মায়ের নিজের শারীরিক, মানসিক বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকে। সেই সাথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কিছু আমল সবসময় জারি রাখা। সালাত যখন থাকে না তখনও যিকির, দুয়া, কুরআন মুখস্ত থেকে পড়া, সকাল-সন্ধ্যার দুয়া ও সূরাগুলো পড়া, কুরআন তিলাওয়াত শোনা, তাফসির পড়া, আলিম ও দাঈদের লেকচার শোনা ইত্যাদি চালিয়ে গেলে অনেক আত্মিক ও মানসিক উপকার হয়।
গর্ভাবস্থা, প্রসব পরবর্তী সময় ও বাচ্চার যত্ন নিয়ে গর্ভাবস্থার শুরু থেকে বাচ্চা ধীরে ধীরে বড় হওয়ার সময়টায় নিয়মিত পড়াশোনা করার গুরুত্ব অপরিসীম। অনেক সমস্যাই সহজ হয়ে আসে যদি আমরা পড়ার মাধ্যমে জানতে সচেষ্ট হই। গর্ভাবস্থায় ধাপে ধাপে কী হতে পারে, প্রসব পরবর্তী সমস্যাগুলো ও যত্ন নিয়ে জানা, বাচ্চার বিভিন্ন বয়সের পরিবর্তনগুলো নিয়ে নিয়মিত পড়াশোনার মাঝে থাকলে অনেক মানসিক শক্তি পাওয়া যায়।
আগে মা হওয়া অভিজ্ঞ ও বুঝদার মানুষদের সাথে আলোচনা করাও অনেক উপকারে আসে। গর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে শেষের দিকে এমন অনেক সাধারণ ঘরোয়া কাজই করা কঠিন হয়ে যায় যা আগে অত্যন্ত সহজতার সাথেই করা যেত। এই সময়টা শরীরের ওপর জোর চলে না। মানসিক শক্তি দিয়ে সব কাজ করে ফেলা যায় না, সেটা করা উচিতও না। প্রসব পরবর্তী সময়টায় নতুন বাবুর দেখভালে মা বিহ্বল হয়ে পড়েন। প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করেন যে মাতৃত্ব একটা চব্বিশ ঘন্টার কাজ। ফলে একটা দীর্ঘ সময় কেটে যায় যখন মায়ের কাছে মনে হয় যে তিনি কোন কিছুই ভালো করে করতে পারছেন না, হোক সেটা ঘরকন্না বা নিজের পড়াশোনা, কাজ। এ কারণেও হতাশা আসে, শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেয়ার কথা ভুলে যান অনেকে।
এই সময় নিজের সাথে সবর করা খুবই জরুরী। নিজের স্বপ্নগুলো পূরণে কাজ করা থেকে একটা ব্রেক নেয়া প্রয়োজন হয় এই সময়। যারা বাইরে গিয়ে চাকরি করেন তারা এই সময় মাতৃত্বকালীন ছুটি পান। যাদের স্বপ্নগুলো ইসলামি জ্ঞান অর্জন করা, ভালো মা, ভালো স্ত্রী হওয়া ইত্যাদি হয় তাদেরও নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে নিজেকে সময় দেয়া প্রয়োজন। প্রথম মাস খানেক নবজাতকের কোন নির্দিষ্ট রুটিন থাকে না। তখন মা নিজের জন্য নিয়মিত সময় বের করতে পারেন না। দৈনিক বড় জোর আধা ঘন্টা পাওয়া যেতে পারে নিজের কিছু শেখা, জানা বা চর্চা করার জন্য। তবে যে পদ্ধতিটা বেশ কার্যকর সেটা হচ্ছে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময়, ঘুম পাড়ানোর সময় আগের অর্জিত জ্ঞানের চর্চা চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে ও পাশাপাশি করা যায় এমন কোন কাজ করা যেতে পারে। যেমন কুরআনের একটা আয়াত মুখস্ত করা, আগের মুখস্ত করা অংশ রিভিশন দেয়া, আরবী ভাষা নিয়ে যা জানেন তা রিভিশন করা ইত্যাদি। তাহলে মায়ের মনে হবে যে তিনি লক্ষ্যচ্যুত হননি।
নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জ্ঞান রাখাও আল্লাহর একটা রহমত।
এরপর যখন মা সালাত আদায় করতে পারবে তখন একটা রুটিন তৈরি হওয়া সহজ হয়ে যাবে। আস্তে আস্তে বাচ্চারও একটা রুটিন তৈরি হয়ে যায়। তখন থেকে শুরু করে সময়ের সাথে সাথে আস্তে আস্তে মা দৈনিক এক ঘণ্টা থেকে দেড়-দুই ঘণ্টা নিজের জন্য বের করে নিতে পারবেন।
আমরা আরও যা ভুলে যাই সেটা হচ্ছে ইসলামি জ্ঞান অর্জন করা, ভালো মা হওয়া এসব অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ব্যপার। এটা এমন না যে ছয় মাসের কোর্স করলাম আর একটা বিষয় সম্পর্কে জেনে গেলাম। এখানে নিজের সাথে সবর করা, নিজের পরিস্থিতি বুঝে কখনো ধীরে কখনো পূর্ণ উদ্যমে এগিয়ে চলার মতো বুঝটা থাকা খুব জরুরী।
আরও যে বিষয়টা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে তা হচ্ছে, মা কিভাবে বাচ্চা জন্ম দিলেন সেই প্রক্রিয়াটা একটা বিশাল মানসিক প্রভাব ফেলে তার ওপর। গবেষণায় দেখা গেছে যেসব মায়েদের সিজারিয়ান প্রসব হয় তাদের স্বাভাবিকভাবে প্রসব করা মায়েদের তুলনায় পিপিডি বেশি হয়ে থাকে। আরও জানা প্রয়োজন যে আপনার পছন্দমাফিক প্রসব করার প্ল্যানে কোন কারণে হেরফের হতেও পারে। আবার যেসব মায়েরা স্বাভাবিক প্রসবের সময়ও অনেক কষ্টের ভেতর দিয়ে যান তাদের ওপরও এর একটা মানসিক প্রভাব পড়ে। সবকিছু ঠিকঠাক মতো হলেও প্রসব পরবর্তী সময়ে মা কিছু মাত্রায় হরমোনের উঠা-পড়া ও মানসিক টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। তাই এই বিষয়েও মায়েদের মাঝে সচেতনতার প্রয়োজন আছে।
মায়ের উচিত কাছের মানুষদের সাথে মনের ভেতর কী চলছে তা শেয়ার করা। যদি মনে হয় যে আপনার মেডিকেল সহায়তা প্রয়োজন তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে দ্বিধা করবেন না।
প্রসব পরবর্তী সময়ের সমস্যা, যত্ন ও বিষণ্ণতা নিয়ে আরও পড়তে পারেন এই লেখাগুলোঃ
প্রসব পরবর্তী সময় নিয়ে এই ভুলগুলো আপনিও করছেন কি?
আসুন জানি প্রসব পরবর্তী যত্ন নিয়ে
পোস্ট নাটাল ডিপ্রেশন, বেবি ব্লু ও ইসলাম
এই আর্টিকেল তৈরিতে সহযোগিতা করেছেনঃ
রাবেয়া রওশীন
নাঈমা আলমগীর
সারওয়াত জাবিন আনিকা
হাসনীন চৌধুরী
মাতৃত্ব
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন