Drbm Mofizur Rahman
তাবৎ পৃথিবীর শান্তিকামী, ন্যায়বাদী, সত্যানুরাগী, মানবতাবাদীরা যখন ড. মুরসীর মৃত্যুতে শোকাভিভূত। তার প্রতি কৃত অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বিস্ফোরণম্মুখ, তখন তথাকথিত সালাফী ও আহলে হাদীসের লোকেরা হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে কেন?
একজন মাযলুমের প্রতি সামান্যতম দরদও ওরা দেখালো না।
মানুষ হিসেবেও তো পারতো একটু সমবেদনা প্রকাশ করতে?
শহীদ হিসেবে মেনে নিতে তাকে ওদের এত কষ্ট ? মনে হয় যেন জান্নাত ওদের হাতেই আছে!
শারঈ মানদন্ডের আলোকে কোন আমলকে ছহী-গাইরে ছহী বলা কি অপরাধ? কবুল করার বিষয়টিতো আল্লাহর হাতে।
গণতন্ত্র হারাম। দাওয়াতই সমাধান। সালাফী তত্বের এই ফর্মুলায় ফেলে পৃথিবীর সমস্ত ইসলামী আন্দোলনকে ধুলিস্যাত করার এক মহা আত্মঘাতী খেলায় তারা হঠাৎ করে কেন মেতে উঠলো? বুঝতে পারছি না।
দাওয়াত?
এসি রুমের দাওয়াত? নাকি রাবেয়ায় হাজার হাজার মিশরী কিংবা নিরীহ ইয়ামানী হত্যার রক্তমাখা দাওয়াত? নাকি রাজতন্ত্রের উচ্ছিষ্ট খাওয়ার দাওয়াত? নাকি হালাল নাইট ক্লাবের দাওয়াত? উচুস্বরে আমিন, বুকের উপর হাত বাধা, জামাতে দু পা মেলে দাঁড়ানো, ইত্যাদি পুরানো মাসআলা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করে
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করার দাওয়াত?
নাকি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নতুন কোন দাওয়াত? সেই দাওয়াতের মানাহিজ/ আসালিবই বা কি? তা কিন্তু তারা বলে না।
ইসলামী আন্দোলনের গণতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের গণতন্ত্রের ধারণা যদি এক হতো, তাহলে কি আর সিসির সাথে মুরসীর কোন দ্বন্দ্ব থাকতো রে ভাই? পরিভাষা এক, মাদলুল ভিন্ন। মুরসিরা যে গণতন্ত্রের কথা বলেন, তা হলো, জনগণের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার। যেমনটি হয়েছিলো খুলাফায়ে রাশেদা নির্বাচনে। অতঃপর জনগণের উপর আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহর দ্বীনের চূড়ান্ত বিজয় সাধন করা। অর্থাৎ নিজেকে আল্লাহর গোলাম বানিয়ে জনগণের উপর আল্লাহর গোলামীত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এই অর্থে ইসলামী গণতন্ত্র খিলাফাতেরই অপর আধুনিক নাম। পরিভাষায় কি আসে যায়? অর্থটাইতো মুখ্য উদ্দেশ্য।
বিশ্বের সমস্ত খ্যাতনামা আলিম ইসলামিক স্কলারগণ ড. মুরসীর মৃত্যুতে এমন হৃদয়কাড়া অশ্রুসিক্ত তীব্র আবেগঘণ অকৃত্রিম শোকগাথা দিয়েছেন, যা ইতোপূর্বে কারো ব্যাপারে আমরা দেখিনি। ড. আলী কুররাদাগী, ড. ইউসূফ আল-কারাদাভী, ড. আলী আসসাললাভীর মত অসংখ্যা ব্যক্তিত্ব। যারা ড. মুরসীকে শহীদ হিসেবেই মনে করছেন। তার শাহাদাত কবুল করার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করছেন।।
তখন সালাফী-আহলে হাদীসদের এই অবস্থা কেন?
এর জবাব আমি জানি না। তবে একটা সত্য আমার চোখে পড়েছে, তাহলো:
তাদের ধারণা, আরব বসন্ত ফিরে আসলে, ড. মুরসীরা জীবিত থাকলে, রাজতন্ত্রের শিকড় শুকিয়ে যাবে। দুনিয়ার দিকে দিকে জেগে ওঠা ইসলামী আন্দোলনগুলো বিনষ্ট করে হলেও ওরা চায় নিজেদের গদি রক্ষার নিশ্চয়তা। সেই গদির দালালরা আজ খুবই তৎপর। তাদের ভিডিও বার্তায় কুরআন-সুন্নাহর দলীল না থাকলেও যে তাদের কথার পরতে পরতে দালালী ও উচ্ছিষ্টভোগের গন্ধ আছে, তা সুস্পষ্ট।
ঈমান নিয়ে বাঁচতে হলে : এ সব নষ্ট-ভ্রষ্ট সালাফী ও আহলে হাদীসকে স্বজ্ঞানে বর্জন করতে হবে।
আমরা প্রকৃত সালাফ সাহাবী-তাবেয়ীদের অনুসারী। যারা জান-মাল দিয়ে ইসলামের বিজয় সাধন করেছিলেন। কারো দালালী করেন নি। পেট পুজা করেন নি। যালিমদের কাছে মাথা নত করেন নি। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা ইসলাম পেয়েছি। পেয়েছি ইসলামী শাসন ও কুরআনের বিজয় তথা ইকামাতে দ্বীনের দীক্ষা।
যারা ড. মুরসীর মৃত্যুকে গণতন্ত্র হারাম ও অকার্যকর হওয়ার প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেন, তাদের কাছে সবিনয়ে প্রশ্ন:
অসংখ্যা নবীকে কি হত্যা করা হয়নি? অসংখ্যা সাহাবীকে কি হত্যা করা হয়নি?
মৃত্যু কখনোই মুমিনের জন্য পরাজয় নয়? সুরা বুরুজ পড়ুন, তাদের সবাইকে ঈমান আনার কারণে অগ্নিকুন্ডে হত্যা করা হলো, অথচ আল্লাহ তাদেরকে মহা সাফল্যের সুসংবাদ দিয়েছেন।
যারা ড. মুরসীর মৃত্যুতে ইন্না লিল্লাহ বলতে নারাজ, তারা যালিম সীসীর দোসর। তাদের জন্য কুরআনের এই আয়াত:
﴿ وَلاَ تَرْكَنُواْ إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِّن دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَآءَ ثُمَّ لاَ تُنصَرُونَ ﴾ [هود: 113]،
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন