আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
আমাদেরকে অস্বস্তির মাঝে রেখে চলে গেলেন মাহফুজুল্লাহ ভাই। তার মতো করে আশা জাগানিয়া কথা আর কেউ বলবেন না। প্রায় এক মাস হয়ে গেল তিনি অনন্ত জগতের বাসিন্দা হয়েছে। প্রতিভাবান এই সাংবাদিকের চিরবিদায়ে তার ঘনিষ্টজনরা তেমন কিছু লেখেননি। তারা রীতিমাফিক শোক প্রকাশ করেছেন, তার কফিনে ফুলের তোড়া দিয়েছেন, জানাজায় শামিল হয়েছেন, এবং তার রুহের মাগফিরাত কামনা ও তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে তাকে সুউচ্চ মর্যাদা দানের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেছেন। আমি তার পরকালীন কল্যাণের জন্য দোয়া করা ছাড়াও তার জন্য এ কারণে লেখার প্রয়োজন অনুভব করেছি যে, যারা তাকে আরো নিবিড়ভাবে দেখেছেন, তাকে শ্রদ্ধা করেছেন ও ভালো বাসতেন, তাদের উচিত তাকে স্মরণীয় করে রাখার চেষ্টা করা। পেশার সূত্রে তার সাথে ভালো পরিচয় ছিল, ঘনিষ্টতা ছিল না। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচনের সময় তার সাথে কথা হয়ে থাকতে পারে, পেশাগত অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আমার কথা হয়নি। কারণ আমি তার পর্যায়ের ছিলাম না। রাজনীতি বা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও তার সাথে আমার মতবিনিময় হয়নি। প্রেসক্লাবের যে টেবিলগুলোতে তিনি বা অন্যান্য প্রবীণ সাংবাদিকরা চলমান রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতেন, আমি কখনো সেই টেবিলগুলোর ধারে কাছে বসতাম না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই নিজেকে রাজনৈতিক এক্টিভিষ্টে পরিণত করা বা কোনো রাজনৈতিক দল বা দলের আদর্শের পক্ষে অবস্থান নেয়ার সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করেছি। সাংবাদিকতা জীবনের সূচনাকালেই “সাংবাদিকের কোনো বন্ধু নেই” মর্মে যে আপ্ত বাক্যটি শিখেছিলাম, তা মনে শক্তভাবে গেঁথে যাওয়ায় আমার তেমন কোনো বন্ধুও নেই বা ছিল না।
মাহফুজুল্লাহ ভাই পেশা হিসেবে কেন সাংবাদিকতা বেছে নিয়েছিলেন আমি এ পেশায় যোগ দেয়ার পর অনেক সময় তা ভেবেছি। তার জ্ঞান, চিন্তাচেতনা, মনন, কথার মারপ্যাচে নিজের যুক্তিকে প্রতিষ্ঠা করার যে যোগ্যতা ছিল তাতে তিনি ভালো রাজনীতিবিদ হতে পারতেন। রাজনীতির তাত্ত্বিক হতে পারতেন। কিন্তু বাম ঘরানার রাজনৈতিক দীক্ষা ও ছাত্র রাজনীতিতে নেতৃত্ব দানকারী মাহফুজুল্লাহ ভাই কর্মজীবনে সাংবাদিকতায় জড়িয়ে খুব বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেননি। ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’য় তার কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন। সেখানে অনেক অবদান রেখেছেন। তার তৈরি কভার ষ্টোরি ও তার নেয়া খ্যাতিমান দেশী ও বিদেশি ব্যক্তিত্বদের সাক্ষাতকার পাঠ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি। ‘বিচিত্রা’ একটি সময় পর্যন্ত অত্যন্ত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ছিল তাতে সন্দেহ নেই; কিন্তু এটিও সত্যি যে ‘বিচিত্রা’ যুক্তরাষ্ট্রের ‘টাইম’, ‘নিউজউইক’; এমনকি প্রতিবেশী দেশের ‘ইন্ডিয়া টুডে,’ আউটলুক,’ বা অধুনালুপ্ত ‘ইলাসট্রেটেড উইকলি অফ ইন্ডিয়া’ ধরনের কোনো ম্যাগাজিন ছিল না। দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদক ছিলেন এমন সাংবাদিকও ওইসব ম্যাগাজিনের কোনো কোনোটির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। ‘বিচিত্রা’র ক্ষেত্রে তার হয়নি। ‘বিচিত্রা’ সরকারি ট্রাষ্টের ম্যাগাজিন ছিল এবং সেখানে চাকুরি নিরাপদ ছিল। নিয়মিত বেতন-ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অনিশ্চয়তা ছিল না। ট্রাষ্টের মালিকানাধীন দুটি দৈনিক ও একটি ম্যাগাজিনে নির্মল সেন, আনোয়ার জাহিদ ও আহমেদ হুমায়ূনের মতো সাংবাদিক ইউনিয়নের জাদরেল সব নেতারা চাকুরি করতেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই পত্রিকাগুলোর প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। সে ভিন্ন এক ইতিহাস। আমি বলছিলাম, মাহফুজুল্লাহ ভাইয়ের চেয়ে অনেক কম যোগ্যতাসম্পন্নরা জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক হয়েছেন, মালিক সম্পাদক হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, প্রেস সেক্রেটারী ইত্যাদি হয়েছেন। কিন্তু সরকারি দায়িত্ব বলতে তিনি একসময় পালন করেছেন কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে প্রেস অফিসারের। নব্বই এর দশকের পর একটির পর একটি যে টেলিভিশন চ্যানেলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে সেগুলোর কোনো একটি নিয়ন্ত্রক হলেও তাকে মানাতো। এ ব্যাপারে তার কোনো আগ্রহ ছিল কিনা বা পেশার শীর্ষে আরোহন করতে না পারার কোনো হতাশা তার মধ্যে ছিল কিনা, আমি তাও জানি না। কিন্তু পেশা জীবনের শেষ ধাপে এসে অর্থ্যাৎ অসুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাকে টেলিভিশনের পর্দায় টকশো’র উজ্জ্বল যুক্তিধর কথক হিসেবে বিএনপির রাজনীতির পক্ষে ভূমিকা পালন করতে দেখা ছাড়া শীর্ষ কোনো অবস্থানে দেখতে না পারার দু:খ আমার কাটবে না।
তিনি বিএনপির রাজনীতি করতেন না। কিন্তু দেশে ধর্ষিত ও শতছিন্ন, বিধ্বস্ত গণতন্ত্রের নামাবলীর আড়ালে দেশ ও জাতির ওপর নীরবে চেপে বসা কঠিন দু:শাসনের সময় বিপুল জনসমর্থনে পুষ্ট বিএনপিকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টায় তিনি বিএনপির পক্ষাবলম্বন করে নির্ভয়ে তুখোড় যুক্তি বাণে ক্ষমতাসীন মহলের অন্যায় ও অবৈধ কর্মকান্ড জনগণের সামনে তুলে ধরার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। তিনি চেতনায় যে রাজনীতি ধারণ করতেন সেই রাজনীতির কোনো ভবিষ্যৎ না থাকায় বিএনপিকে পিঠ সোজা করে দাঁড় করানোর চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। বিএনপির পক্ষে তিনি লিখেছেন বাংলায় ও ইংরেজিতে। কিন্তু তিনি মাঠের রাজনীতি করতেন না। যে বিএনপির নেতাকর্মীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল কুশাসনের প্রতিবাদে মাঠে সোচ্চার থাকা, তারা কোনো মন্ত্রবলেই জাগ্রত হওয়ার অবস্থায় ছিলেন না বা এখনো নেই। তাদের এ অবস্থাকে তাদের শীতনিদ্রাকাল বলা চলে না, বরং তারা কুম্ভকর্ণের মতো নিদ্রিত হয়ে আছেন; সে নিদ্রা থেকে যখন তারা জাগবেন তখন জনগণেরই ক্ষতির কারণ হবেন। এদলীয় শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করে যে বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করেছে, সেই দল জাতির কোনো ক্ষতি করুক মাহফুজুল্লাহ ভাই তা চাননি।
মাহফুজুল্লাহ ভাই এর আগেও একবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং সেরেও উঠেছিলেন। এই পর্যায়ে তার বড় ভাই প্রফেসর মাহবুবুল্লাহ’র সাথে তাকে নিয়ে বেশ দীর্ঘ সময় ধরে কথা হয়। প্রবল বর্ষণমুখর এক রাতে আমি ও প্রফেসর মাহবুবুল্লাহ নয়াপল্টনের এক সংবাদপত্র অফিসে আটকা পড়েছিলাম। সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়েছিল মুষলধারে বর্ষণ। বৃষ্টি থামা বা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না। যাদের বাসা কাছাকাছি অবস্থানে ছিল তারা কোনোমতে অফিস ছাড়ার পর আমরা অসহায়ের মতো বসে কথা বলছিলাম। রাত একটা পেরিয়ে গেল। বাড়ি ফেরা প্রয়োজন। বাড়ির লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বে। প্রফেসর মাহবুবুল্লাহ গ্রীন রোডে থাকেন, আমি বনানীতে। এতো রাতে যানবাহন পাওয়া অনেকটা দুরাশা। আমরা কথা বলছি মাহফুজুল্লাহ ভাইকে নিয়ে। ভাইেেয়র প্রতি তার পিতৃসুলভ দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছিল। তিনি বললেন, “বাইরে থেকে মাহফুজ দৃঢ় হলেও অন্তরে সে কোমল। তার এতো নামডাক সত্ত্বেও জীবনে সে কিছু করতে পারেনি। তার আর্থিক অবস্থা খুব ভালো নয়। ওর বড় ধরনের কোনো ঘটনায় আমাদেরকেই এগিয়ে যেতে হয়। তবুও আমরা চাই, যে যা বিশ্বাস করে তা নিয়েই থাকুক।” বৃষ্টির মুখরতায় রাতের নিস্তব্ধতা আঁচ করা যায় না। আমরা অনেকটা বেপরোয়া হয়েছি দোতলা থেকে নিচে নেমে আসি। অফিসের সার্বিক দেখভালে দায়িত্বে নিয়োজিত আকাশ মাহমুদ কোমড় পানি ভেঙ্গে একটি রিকশা ভ্যান নিয়ে আসে। আমরা দু’জন সেটিতে উঠার পর চালক ভ্যান টেনে দৈনিক বাংলার মোড় পর্যন্ত নিয়ে আসে। অদ্বূত ব্যাপার, ভ্যানচালক পারিশ্রমিক নিতে রাজী নয়। অনেক পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও তাকে কোনোভাবেই ভাড়া গছানো সম্ভব হলো না। রাস্তায় কোনো ধরনের যানবাহন নেই। আধ ঘন্টা পর একটি বাস আসতে দেখা গেল। আমি রাস্তায় নেমে বাসটিকে থামানোর চেষ্টা করলাম। বাস থামলে কন্ডাক্টও বললো বাসটি মিরপুর যাবে। আমরা বললাম, ফার্মগেট পর্যন্ত পৌছে দিলেই চলবে। কন্ডাক্টর বাসে উঠার সুযোগ দিল। বাসে বেশি যাত্রী নেই, যারা ছিল সবাই আমাদের মতোই কাক ভেজা। কোথাও না থেমে বাস ফার্মগেট পৌছলো। বাস কন্ডাক্টরও আমাদের কাছে কোনো ভাড়া নিল না। বাস থেকে নেমে স্যার গ্রীন রোড ধরলেন। আমি বনানীর পথ ধরলাম। আরেকটি বাস পাবো এমন আশায় থেকে লাভ নেই।
মাহফুজুল্লাহ ভাইয়ের কাছাকাছি আসা ও ঘনিষ্টতার সুযোগ ঘটে আমার অনুবাদ কর্ম এবং পরিবেশ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। বে´িমকো মিডিয়া ‘অন্বেষা’ নামে একটি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছিল। অন্বেষা’র সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মাহফুজুল্লাহ ভাইকে। ফরিদী নুমান অণে¦ষা’র শিল্পী হিসেবে নিয়োগ পায়। ১৯৮৭ সালে আমার সম্পাদনায় মাসিক ‘নতুন ঢাকা ডাইজেষ্ট’ প্রকাশিত হওয়ার সূচনাকাল থেকেই ফরিদী নুমান ডাইজেষ্টের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং ২০০৬ সালে প্রকাশনা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত আমার সাথে ছিল। ‘অন্বেষা’ প্রকাশিত হয় ঢাকা ডাইজেষ্টের প্রকাশনা শুরুর এক দশক পর। সম্ভবত ধানমন্ডি এক নম্বর সড়কে ‘অন্বেষা’র অফিস। পাশাপাশি আরেকটি ভবনে বেক্সিমকোর মিডিয়া অফিস। মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ইকবাল আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। আমার পেশাগত জীবন তখন বেশ টানাপোড়েনের মধ্যে চলছিল। যদিও ওই সময় আমি মানব জমিনের ফিচার এডিটর হিসেবে কাজ করছিলাম। আমার শুভাকাংখী এক সচিব, যাকে আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবন জানি। তিনি আমাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন, যা বলতেন তা হুকুম দেয়ার মতো। একদিন ফোন করে বললেন, ইকবালের সাথে আমার কথা হয়েছে। তুমি তার সাথে দেখা করে বেক্সিমকোর বাংলা বা ইংরেজি দৈনিক যেখানে মন চায় জয়েন করো। অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দিয়ে দেবে। আমি দ্বিধাগ্রস্ত হই। আমি যেচে গিয়ে চাকুরি প্রার্থনা করবো! তিনি তাগিদ দেন, তোমাকে কিছু করতে হবে না। কথা যা আমার সাথেই হয়েছে। ওদের দু’শ কোটি টাকার প্রজেক্ট আমার টেবিলে। আমার কথা ফেলতে পারবে না। কাল সালমান এফ রহমান আমার কাছে আসবে। প্রয়োজনে তাকেও বলবো। আমি ইকবাল আহমেদের সঙ্গে দেখা করি। তিনি সৌজন্য আলাপ করে পরদিন যেতে বলেন সবকিছু ফাইনাল করতে। ফাইনাল করতে সময় লাগতেই পারে। কারণ বেক্সিকোর নিয়োগপত্র এক পৃষ্ঠার নয়। ফরিদী নুমান ওর নিয়োগপত্র আমাকে দেখিয়েছিল, পনের/বিশ পৃষ্ঠার নিয়োগপত্র। টার্মস এন্ড কন্ডিশনসে ভরা। ইকবাল আহমেদ নিজেই আমার নাম ঠিকানা লিখে নেন। আমি সেখানে আর যাবো না সিদ্ধান্ত নিয়েই তার রুম থেকে বের হয়ে আসি। বের হতেই নুমানের সাথে দেখা। সে অবাক হয়, আমার আগমণের কারণ জানতে চায়। আমি বলি না। ‘অন্বেষা’ অফিসে নিয়ে যায় আমাকে। বেশ গোছানো অফিস। কর্পোরেট টাইপের। মাহফুজুল্লাহ ভাই ছিলেন না। এর কিছুদিন আগেই আমার অনুবাদে খুশবন্ত সিং এর উপন্যাস “দিল্লি” প্রকাশিত হয়েছে। প্রচ্ছদ শিল্পী ফরিদী নুমান। নুমানকে ‘দিল্লি’র একটি কপি দিয়েছিলাম। নুমান বললো, ‘দিল্লি’র কপিটি মাহফুজুল্লাহ ভাই দখল করেছেন। আমাকে আরেকটি বই দিতে হবে।’
ক’দিন পর প্রেস ক্লাবে মাহফুজুল্লাহ ভাইয়ের সাথে দেখা হলে উনি আমার পিঠ চাপড়ে উচ্ছাসের সাথে বলেন, “মঞ্জু, ওয়েল ডান। অনুবাদ চমৎকার হয়েছে। মনে হয়, খুশবন্ত সিং নয়, আপনিই ‘দিল্লি’র মূল লেখক।” আমি লজ্জিত হই। ঘনিষ্টতার শুরু এভাবেই। ২০০১ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে দিল্লিতে আইইউসিএন (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অফ নেচার) সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে দিতে এফইজেবি’র ফোরাম অফ এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিষ্টস) এর প্রতিনিধি হিসেবে আমি, ডেইলি ষ্টারের চিফ রিপোর্টার শেহাবউদ্দিন নাফা এবং ইনকিলাবের সিনিয়র রিপোর্টার মফিজুর রহমান সেখানে যাই। আমি এফইজেবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট, মফিজুর রহমান জেনারেল সেক্রেটারী এবং নাফা ভাই এক্সিকিউটিভ মেম্বার। আইইউসিএন এর কান্ট্রি অফিসে পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর তারাই ভিসা সংগ্রহ করেন। ওই সময় আইইউসিএন এর বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিলেন প্রফেসর আইনুন নিশাত (বর্তমানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর)। তার অফিসে গিয়ে জানতে পারি মাহফুজুল্লাহ ভাইও যাচ্ছেন তার পরিবেশ সংগঠন ‘সেন্টার ফর সাইটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ এর প্রতিনিধি হিসেবে। আর যারা যাবেন তাদের অধিকাংশের নাম জানি না। বাংলাদেশী টিম বেশ বড়সড়। দিল্লি পৌছে প্রথম রাত ওয়াইএমসিএ হোষ্টেলে কাটিয়ে পরদিন সকালেই চলে গেলাম বাঙালী অধ্যুষিত সিআর পার্কে (চিত্তরঞ্জন পার্ক) আমার পূর্ব পরিচিত নাগ বাবুর রেষ্টহাউজে। সবধরনের বাঙালী খাবার সেখানে সহজলভ্য। কনফারেন্স হবে বিজ্ঞান ভবনে।
বিজ্ঞান ভবনে গিয়ে মাহফুল্লাহ ভাই, প্রফেসর আইনুন নিশাতসহ সকল বাংলাদেশী সবার সঙ্গে সাক্ষাত হলো।
তিনদিনের কর্মসূচি হাতে পেলাম। একটির পর একটি সেশনে ঠাসা কর্মসূচি। আইইউসিএন এর কয়েকটি কমিটি নির্বাচন করা হবে। মাহফুজুল্লাহ ভাই পই পই করে বলে দিলেন, ভোটের সময় যাতে আমরা উপস্থিত থাকি। কিন্তু আমরা ভোটিং মেম্বার ছিলাম না। দু’একটি সেশনে হাজিরা দিয়ে তিনজন চলে যাই লাজপত নগরের সেন্ট্রাল মার্কেটে। আগেও বেশ ক’বার ওই মার্কেটে গেছি। নাফা ভাইয়ের অনেক কিছু কেনাকাটার ছিল, তার মধ্যে একটি হলো জাফরান (Saffron)। ভাবির ফরমায়েশ। আগে কখনো জাফরান শিখ দোকানি জুয়েলারি বাক্সর মতো একটি বাক্স বের করলো। খোলার পর দেখা গেল লাল মখমলের ওপর ছোট্ট একটি কৌটা। কৌটার ঢাকনা খোলার পর লাল রং এর গুড়া দেখতে পেলাম। ওটাই জাফরান। প্রতি গ্রামের দাম দুই হাজার রুপির কাছাকাছি। পিলে চমকানোর মতো দাম। তবুও নাফা ভাই সেই অমূল্য বস্তু কিনলেন। দোকানি অতি ক্ষুদ্র চামচ দিয়ে প্লাষ্টিকের কৌটায় তুলে সংরক্ষণ পদ্ধতিও বাতলে দিলে। এটি মূলত একটি মশলা, সম্ভবত সবচেয়ে দামি মশলা। ক্রোকাস সাটিভাস (Crocus Savitas) নামে এক ধরনের ফুলের রেনু ধারণকারী সূতাতূল্য দন্ড আহরণ করে সেগুলো শুকিয়ে জাফরান তৈরি করা হয়। ৭৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার সূতা থেকে এক পাউন্ড জাফরান তৈরি হয়। আমরা আরো কিছু প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে বিকেলে ফিরে এলাম কনফারেন্স ভেন্যু বিজ্ঞান ভবনে। আমিাদের হাতে শপিং ব্যাগ দেখে মাহফুজুল্লাহ ভাই ক্ষুব্ধ হলেন। বললেন, বুঝলাম, আপনারা ভোটিং মেম্বার নন। কিন্তু উপস্থিত সংখ্যারও পৃথক গুরুত্ব আছে। কিন্তু সন্ধ্যায় কোথাও যাবেন না। লাল কিল্লায় আমরা একসাথে ‘সাউন্ড এন্ড লাইট শো’ দেখতে যাবো। সবার টিকেট কাটা হয়েছে। এরপর ‘করীম’স এ ডিনার করবো। বাংলাদেশী প্রতিনিধিদের জন্য ডিনার হোষ্ট করেছেন আইইউসিএন এর ব্যাঙ্কক প্রতিনিধি, যিনি একজন বাংলাদেশী (নাম মনে নেই)। মাহফুজুল্লাহ ভাই জানতে চাইলেন কী বই কিনেছি। তখনো কোনো বই কেনা হয়নি। পরদিন খান মার্কেটে গিয়ে কিনবো বললাম। উনি কোনো এক খ্যাতিমান ইতিহাসবিদের ‘হিষ্টরি অফ দ্য মোগলস’ কেনার পরামর্শ দিয়ে বললেন বইটা অনুবাদ করতে। বইটি তিনি পড়েছেন, তার কাছে আছে। আমি তাকে বললাম, তা হলে কিনবো না। ঢাকায় গিয়ে আপনার কাছ থেকেই নেব। তিনি এই শর্তে সম্মত হলেন, বইটা আমি অনুবাদ করবো। আমি কথা দেই শর্ত মানবো। সন্ধ্যায় তার নেতৃত্বে লাল কিল্লার উদ্দেশে যাত্রা করলাম। ১৯৯২ এর লাল কিল্লায় যাওয়া হয়নি। ‘সাউন্ড এন্ড লাইট শো’ আগে কখনো দেখিনি। ১৯৮৩ সালে বার্লিনে অবস্থানকালে রাইখষ্ট্যাগ বা পার্লামেন্ট ভবন পরিদর্শনকালে ‘সাউন্ড এন্ড লাইট শো’ দেখার সুযোগ ছিল। কিন্তু পর্যটকদের অত্যধিক ভিড় দেখে উৎসাহ হারিয়েছিলাম। বাস যেখানে গিয়ে থামলো সেটি লাল কিল্লা নয়। ড্রাইভার ভুল করে পুরনো কিল্লা নিয়ে এসেছে। শের শাহ সূরী দ্বিতীয় মোগল স¤্রাট হুমায়ূনকে দিল্লি থেকে হটিয়ে এই কিল্লা নির্মাণ করেছিলেন। এখানেও ‘সাউন্ড এন্ড লাইট শো’র ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমাদের টিকেট লাল কিল্লার। খুব দূর নয়।
সাড়ে তিন মাইল। বাস ঘুরে লাল কিল্লায় গেল। আমরা কিল্লার ভেতর প্রবেশ করলাম। শো এর স্থান দিওয়ান-ই-আম ও দিওয়ান-ই-খাস এর মধ্যবর্তী উন্মুক্ত স্থানে। দর্শক সংখ্যা বিপুল। মাহফুজুল্লাহ ভাই নির্দেশ দিলেন কেউ দলছুট হলেও যাতে গেটের বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করে। কারণ ফেরার পথে বাস থাকবে না। শো শেষে আমরা কিল্লার বাইরে এসে জড়ো হলাম। পরের গন্তব্য জামা মসজিদের পাশে করীম’স রেষ্টুরেন্ট। পায়ে হাঁটার দূরত্ব হলেও আমরা রিকশায় উঠে করীম’সে গেলাম। করীম’স এর ইতিহাস দীর্ঘ। এটির প্রতিষ্ঠাতা করীমউদ্দিনের পিতা মোহাম্মদ আজিজ শেষ মোগল স¤্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের দরবারী বাবুর্চি ছিলেন। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর তারও ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। প্রথম দিকে ভ্রাম্যমান খাবার সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করলেও ১৯১৩ সালে জামা মসজিদের পাশে করীম’স রেষ্টুরেন্ট চালু করেন করীমউদ্দিন। এখন দিল্লিতে করীম’স এর ১৩টি শাখা আছে। চার প্রজন্ম ধরে চলছে করীম’স এর রেষ্টুরেন্ট। দিল্লিাবাসী তো বটেই, ভোজন বিলাসী পর্যটকদেরও অনিবার্য গন্তব্য করীম’স। রেষ্টুরেন্টে কোনো টেবিল ফাঁকা নেই। অনেকে বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আমরা সংখ্যায় তেরোজন। ম্যানেজারকে সংখ্যা জানিয়ে রাখতে হলো। আমাদের ডাকা হলে আমরা নির্ধারিত টেবিলে বসলাম। হোষ্ট প্রফেসর আইনুন নিশাত এবং আইইউসিএন এর ব্যাঙ্কক রিজিওনাল অফিস থেকে আগত বাংলাদেশী এক কর্মকর্তা। মেন্যু দিয়ে গেল ওয়েটার। নানা ধরনের কাবাবের সুগন্ধে ভরে আছে রেষ্টুরেন্ট। খাসির আস্ত রান ঝলসানো হচ্ছে। কিন্তু কোনো পোড়া দাগ নেই। সম্পূর্ণ সাদা। খাসির চারটি রান, শিক কাবাব, নান, কয়েক ধরনের আচার, চাটনি ও টক দই।
আসলেই দরবারী খাবার। আমরা আয়েশ করে খেলাম। বিল ও বখশিশ মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার রুপি। আইইউসিএন এর রিজেওনাল কর্মকর্তা বিল পরিশোধ করলেন। করীম’স এর সামনেই পানের দোকান। দিল্লিতে পানের দাম সবসময় বেশি। সাধারণ পান তিন রুপি (বাংলাদেশে তখন এক খিলি পান এক টাকা), মিষ্টি পান পাঁচ রুপি। পান মুখে পুরে আমরা যখন বিদায় নিচ্ছিলাম, মাহফুজুল্লাহ ভাই স্মরণ করিয়ে দিলেন, পরদিন আমরা যাতে কনফারেন্সের সবগুলো সেশনে অ্যাটেন্ড করি।
পরদিন বিজ্ঞান ভবনে গেলাম। লাঞ্চ ব্রেক পর্যন্ত তিনটি সেশনে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আন্তর্জাতিক পরিবেশবিদদের বক্তৃতা শুনলাম। বেশ ক’জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও ছিলেন। লাঞ্চ সেরে মাহফুজুল্লাহ ভাইকে বললাম, আর না, কয়েকটা বই কিনতে খান মাকের্টে যাব। ‘হিষ্টরি অফ দ্য মোগলস’ কিনবো না, আপনার কাছ থেকেই নেব। খান মার্কেটে গিয়ে কয়েকটি বই কিনে আবার সেন্ট্রাল মার্কেট। বাদবাকি কেনাকাটা করে বিকেলে রেষ্টহাউজে ফিরে এলাম। সন্ধ্যায় আমাদের সাথে দেখা করতে এলেন দিল্লিতে নিয়ুক্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রতিনিধি ইহসানুল করিম হেলাল (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সেক্রেটারী)। তার বাসায় আমন্ত্রণ জানালেন। এর আগে ১৯৯৯ সালে লোকসভা নির্বাচন কভার করতে দিল্লি গিয়ে আমি, ইত্তেফাকের গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, বাসস এর নূরুল হুদা, ভোরের কাগজের শ্যামল দত্ত (বর্তমানে সম্পাদক), প্রথম আলোর সানাউল হক তার বাসায় ডিনার করেছি। এবার সময় কম বলে আমরা যেতে পারবো না। সকালে বিজ্ঞান ভবনে গিয়ে সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সবার কাছে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। পরদিন ঢাকার ফিরতি ফ্লাইট।
এরপর ঢাকায় মাহফুজুল্লাহ ভাইয়ের সাথে অনুবাদ নিয়েই কথা হতো। তার কাছ থেকে ‘হিষ্টরি অফ দ্য মোগলস’ আর নেয়া হয়নি। উনি নিজেই একদিন বললেন, তার বইটা একজন নিয়েছে। হাতে পেলেই আমাকে দেবেন। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আইইউসিএন এর আরেকটি কনফারেন্সে গেলাম শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে। কলম্বো যেতে বাংলাদেশীদের ভিসার প্রয়োজন পড়ে না। তবে ভিসা ছাড়া যেতে হয় ঘোরাপথে ব্যাঙ্কক হয়ে। ভারতীয় ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়ার ঝামেলা এড়াতেই এই ব্যবস্থা। এবারের টিমও বেশ বড়। আইইউসিএন কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রফেসর আইনুন নিশাত, সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের মাহফুজুল্লাহ ভাই, পরিবেশবিদ হাসনা মওদুদ ও মো: সরোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্সড ষ্টাডিজ এর কয়েকজন প্রতিনিধি এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকতা এবং এফইজেবি থেকে আমি। ব্যাঙ্কক এয়ারপোর্টে দীর্ঘ সময়ের ট্রানজিট। প্রফেসর আইনুন নিশাত দলনেতা হলেও আসলে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মাহফুজুল্লাহ ভাই। ট্রানজিটের পুরো সময়ে আপ্যায়নের দায়িত্ব পালন করলেন তিনি। গভীর রাতে আমরা কলম্বো পৌছলাম। সেখানে আমাদের থাকার ব্যবস্থা কলম্বো প্লাজা হোটেলে। কনফারেন্স ভেন্যু বন্দরনায়েকে মেমোরিয়াল ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স হল। সকালে ব্রেকফাষ্ট সেরে হোটেল লাউঞ্জে ব্রিফ করেন মাহফুজুল্লাহ ভাই। কনফারেন্সের গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনের পর আমাকে মিডিয়া সেন্টারে খুঁজে নেন তিনি, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে ইস্যুগুলো তুলে ধরা হয়েছে তার ওপর রিপোর্ট করতে বলেন। আমি বাসস এ রিপোর্ট পাঠাই। প্রথম দিনের রিপোর্টে মাহফুজুল্লাহ ভাইয়ের ভূমিকাকেই প্রাধান্য দেই। পরদিন সকালে অনলাইনে খবর দেখে আইনুন নিশাত একটু নাখোশ হন। রাতে খেয়ে আমরা একযোগে ঘুরতে বের হই সাগর তীরে। এক জায়গায় বসে আড্ডা দেই। মাহফুজুল্লাহ ভাইয়ের পীড়াপীড়িতে হাসনা মওদুদ গান গেয়ে শোনান। মাহফুজুল্লাহ ভাই নিজেও আবৃত্তি করলেন, গান গেয়ে শোনালেন। প্রথম রাতে প্রফেসর আইনুন নিশাত সবাইকে ডিনার করালেন বেশ দামি এক রেষ্টুরেন্টে। এ প্রস্তাবটিও ছিল মাহফুজুল্লাহ ভাইয়ের। তার কথা ব্যাঙ্কক এয়ারপোর্টে আমি সবাইকে আপ্যায়ন করেছি, আজ নিশাত ভাইয়ের পালা। দ্বিতীয় রাতে আমাদের ডিনারের দাওয়াত ছিল কলম্বোতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনারের বাসায়। যার ভান্ডারে যা ছিল আমরা তিন রাতে সাগর পাড়ে বসে তা উজাড় করেছি। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাজহারুল হান্নান আমুদে মানুষ। তিনি বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার আয়তন ও জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রসঙ্গে বললেন, শ্রীলঙ্কার আয়তন বাংলাদেশের আয়তনের অর্ধেকেরও কম। জনসংখ্যা দুই কোটি। জনঘনত্ব বাংলাদেশে প্রতি বর্গমাইলে ২,৮০০, শ্রীলঙ্কায় প্রতি বর্গমাইলে ৮৫০। এটি সহনীয়। বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের সকল উপায় ব্যর্থ হয়েছে। নতুন একটি প্রস্তাবের কথা শোনা যাচ্ছে, আর তা হচ্ছে, রাতে পুরুষদের লুঙ্গি ও মহিলাদের শাড়ি পরা নিষিদ্ধ করা। মাহফুজুল্লাহ ভাই যোগ করলেন, এতে কাজ হবে না। ইন্দিরা পুত্র সঞ্জয় গান্ধীর পথ ধরতে হবে। একট-দু’টা বাচ্চা হওয়ার পরই পুরুষদের বাধ্যতামূলকভাবে খাসি করা। এভাবে দিনে গুরুতর বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং রাতে চটুল কথাবার্তার মধ্য দিয়ে আমরা তিন দিন অতিবাহিত করি। ১৩ই ডিসেম্বর কলম্বোতে আমাদের শেষ রাত এবং রাতটি আমাদের জন্য শ্বাসরুদ্ধকর ছিল। হোটেল রুমে ফিরে টেলিভিশন অন করতেই ব্রেকিং নিউজ। ইরাকে আমেরিকান বাহিনীর হাতে সাদ্দাম হোসেনের গ্রেফতার। একজন মুসলিম শাসককে গর্ত থেকে টেনে বের করে আনা হচ্ছে দৃশ্যটি সুখকর ছিল না। সাদ্দাম হোসেনের স্বৈশাসন কেউ পছন্দ করেনি। আমেরিকানদের ইরাকে হামলা করে ধ্বংসলীলা চালানোও কেউ ভালোভাবে নেয়নি। টেলিভিশনে প্রতি মুহূর্তের খবর দেখে বিনিদ্র রাত কাটলো।
ঢাকায় ফিরে আসার পর মাহফুজুল্লাহ ভাইয়ের সাথে প্রেসক্লাবে এবং পরিবেশ সংক্রান্ত কোনো সেমিনারে বেশ ক’বার দেখা হয়েছে। দেখা হলেই আমি কী অনুবাদ করেছি বা করছি তা জানতে চেয়েছেন। ওই সময় তিনি টেলিভিশন টকশো’র জনপ্রিয় আলোচক। টেলিভিশনের পর্দায় তার প্রায় প্রাত্যহিক উপস্থিতির কারণে কখনো তাকে অনুপস্থিত বা বিচ্ছিন্ন ভাবার সুযোগ ছিল না। এখন আর তাকে দেখবো না। বিশ্বাসী হিসেবে পরকালে সান্নিধ্য লাভের আশায় তাঁর রুহের অনন্ত শান্তি কামনা করি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন