আলী আল মাবরুর
আমাদের রাহবার শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা প্রায়ই মজা করে বলতেন, আমাদের দেশে কিছু লোক আছে যারা দিল্লীতে বৃষ্টি হলে বাংলাদেশে মাথায় ছাতা ধরে থাকে। ঘটনাটা প্রকৃতপক্ষেও তাই। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কয়েক মাসের মধ্যে জংগীবাদ সংক্রান্তে বড় কোন ঘটনা ঘটেনি। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই যে প্রশ্নটি আসে তাহলো, এখন হুট করে এই ইস্যুকে এই মহান ব্যক্তিবর্গ কি মহান উদ্দেশ্যে সামনে নিয়ে আসলেন?
পীযুষদা আওয়ামী আমলের সুবিধাপ্রাপ্ত একজন লোক। সর্বশেষ এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও সেখানে তার রেকর্ড ভালনা। সংশ্লিষ্টদের চাপে তাকে সরকার সেখান থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। তিনি হয়তো এখন আবার লাইম লাইটে আসতে চাইছেন।
সেটা তিনি চাইতেই পারেন। কিন্তু তার পেছনে কে আছে? অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বেশী টাকা থাকেনা- এটা তো এই পেশার লোকেরাই দাবী করেন। তাহলে একই দিনে এতগুলো জাতীয় দৈনিকে এই সাইজের ঢাউশ বিজ্ঞাপন দেয়ার টাকা তাদেরকে কে দিলো?
বাংলাদেশে জংগীবাদ ইস্যু চলেনা। একেবারে প্রথম থেকেই এই ইস্যুতে মানুষের অবস্থান খুব পরিস্কার। এদেশে জংগীবাদের বিরুদ্ধে দল মত নির্বিশেষে ঐকবদ্ধ অবস্থান রয়েছে। ২০০৪ সালে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামী পল্টন ময়দানে বিশাল বড় ওলামা সমাবেশ করেছিল। সেই সমাবেশ এবং নেতাদের ভাষন ইউটিউবে এখনো পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মুলধারার কোন ইসলামী দলই জংগীবাদের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। বরং নাকচ করেছে। মসজিদের ইমাম সাহেবরা জংগীবাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য খুতবা দিয়েছেন। আইনশৃংখলা বাহিনী, আলেম সমাজ, পেশাজীবি সমাজ ও জনগন এক হয়ে নেমেছিল বলেই বাংলাদেশে জংগীবাদ ধোপে টেকেনি।
পীযুষদা জংগীবাদের সনাক্তকরন চিহ্ন বের করতে গিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরীর প্রয়াস চালিয়েছেন। এটা কোন নরমাল কাজ নয়। এটা একটা অসৎ এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ। কারন দেশের মানুষ জানে, ধার্মিক মুসলমানের চেহারা দিয়ে কখনোই জংগীদের ছবি আঁকা সম্ভব নয়।
ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে টিভিতে সরাসরি পার্লামেন্টে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষন শুনেছি। যেখানে তিনি জংগীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানোর ঘোষনা দিয়েছেন, মাদ্রাসার ছাত্রদের ঘাড়ে অহেতুক দায় চাপানোর চেষ্টার সমালোচনা করেছেন এবং ইংরেজী মিডিয়ামে পড়া আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষদের জংগী হয়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী মানে সরকার প্রধান। তার অবস্থান সরকারের অবস্থানই নিশ্চিত করে। একই সংগে তিনি আওয়ামী লীগের প্রধান। তাই শেখ হাসিনার বক্তব্য আওয়ামী লীগের বক্তব্য- এভাবেও বলা যায়। স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী, ওনাদের নেত্রী যখন এই লাইনে গেলেন তখন পীযুষদা আর মাওলানা ফরিদউদদিন মাসউদ উল্টো পথে হাটছেন কেন? তারা আওয়ামী লীগের বাইরে গিয়ে কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চান? গতকাল থেকে মানুষের মনে যে ক্ষোভ তারা তৈরী করেছেন, সেটা কি সরকারের জন্য বিপজ্জনক নয়?
এই বিষয়গুলো তদন্তের দাবী রাখে। আমি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানার দায়ে পীযুষ বন্দোপাধ্যায়, মাওলানা মাসউদসহ সংশ্লিষ্ট সকলের শাস্তি দাবী করি। একই সাথে কারা সম্প্রীতি বাংলাদেশের একাউন্টে টাকা পাঠায়, সেই সোর্সগুলো তদন্তপূর্বক বের করা প্রয়োজন বলে মনে করি। আমার মতে, এই সম্প্রীতির বাংলাদেশ দেশকে অস্থিতিশীল বানানোর নতুন ষড়যন্ত্র।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন