জাবাল আত তারিক
তো হাইস্যকর বিষয় হইলো, অনেকে ভাবতেছিলেন মঞ্জু ভাই বয়ানের শুরুতে ইসলামী আন্দোলনের গৌরবগাঁথা দিয়া শুরু করবেন। এই যে আপনারা এভাবে ভাবতে পারেন- এইটাই আমার কাছে সপ্তাশ্চর্য। আপনি নিজেও যদি কোনও দল থেকে বাহির হন, সেই দলের গুন গাওয়া তো আপনার সাজেই না বরং বাস্তবিক ভাবেই সেই দলের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আপনি করবেন। তা না হলে আপনি বাহির হইলেন কেন? গুড়া কৃমি কামড়ায় এজন্য! লিসেন ব্রাদার- এগুলো সিলি বিষয় না। যে স্বামী-স্ত্রী যুগের পর যুগ একসাথে বেড শেয়ার করে, তারাও বিচ্ছেদের পরে পরস্পরের মন্ডুপাত করে। এইটাই জগতের নিয়ম। তো যারা বলতেছেন জামাতিরা মঞ্জু ভাইকে অসম্মান করে কথা বলতেছে এবং যারা বলতেছেন মঞ্জু ভাইরা জামায়াত নিয়া সংবাদ সম্মেলনে বিষোদগার করছেন- আপনারা উভয় পক্ষই বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে, একটা বায়বীয় আলুথালু ও অবাস্তব জগতের কৌতুকাত্মক মানুষ। এইটা বুঝতে শেখেন যে- এগুলা খুব স্বাভাবিক ভাবেই চলবে।
বাই ডিফল্ট মঞ্জু ভাইদেরকে জামায়াত কে ডিজঅউন করতে হবে। এইটা তাঁদের প্রথম ও প্রধান গোল হওয়া উচিত- এছাড়া গতিও নাই। এই ডিজঅউন করার জন্যই তাদেরকে জামায়াতের বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা-বিদ্বেষ করতে হবে। অন্যদিকে জামায়াতের জন্যও একই জিনিস জরুরী হয়ে পড়বে- কারণ জামায়াতকে সংগঠনকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে দুইটা...
(১) মঞ্জু ভাইদের শক্তি ও সামর্থ্যের বৃহৎ একটা অংশ জামায়াত কে ডিজঅউন করতে করতেই খরচ হবে। কিন্তু জামায়াতের গন্ধ উনাদের গা থেকে যাবে না। কারণ ঘৃণা ভিত্তিক রাজনীতিতে অতীতের শুকনা গু লেড়ে চেড়ে নতুন করে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে খেলাধুলা চলে। যারা প্রিজনারস অফ হিস্টোরি- তারা এইটা করেই রাজনীতি করে। বাংলাদেশের রাজনীতি ও চেতনা- দুইটাই হিস্টোরিকাল প্রিজন থেইকা উৎপন্ন হয়। তাই এখানে ঘৃণা ভিত্তিক রাজনীতিই প্রধান। তাই এই কাজটা মঞ্জু ভাইদেরকেও করতে হবে আবার মঞ্জু ভাইদের বিরুদ্ধে শাহবাগীরাও এটা করে যাবে, যেমনটা তারা জামায়াতের ক্ষেত্রে করে থাকে। একদিকে তারা কখনও জামায়াতি গন্ধ ত্যাগ করতে পারবে না ফলে জামায়াত বিরোধী শিবিরে কোনও একসেস পাবে না। অন্যদিকে জামায়াতি শিবিরেও তারা আর সম্মান পাবেন না। উনাদের জন্য বাস্তবটাটা একটু কঠিনই।
(২) দুই নম্বরে যেটা আসে সেটা হল, ইসলামিষ্টদের মধ্য থেকে বুদ্ধিজীবীরা ও সংস্কৃতিমনা লোকেরা অতীতে আলাদা একটি পার্টি করেছিলেন, তার নাম ছিল "তমুদ্দুন মজলিশ"। এই দমুদ্দুন মজলিশের প্রোডাক্ট হল রাশেদ খান মেনন ও ব্যারিষ্টার মউদুদের মতো লোকেরা। মঞ্জু ভাইরা অলরেডি ধর্মভিত্তিক আদর্শ থেইকা নিজেদের খারিজ করার ঘোষণা দিয়েছেন (আমি বলছিনা ইসলাম থেকে খারিজ, আমি বলছি ধর্মভিত্তিক আদর্শ থেকে খারিজ)। এইটার অর্থ অনেক ডিপ, এর কন্সিকোয়েন্সও অনেক বোল্ড এবং সিগ্নিফিকেন্ট। এইরকম একটি ডানপন্থি প্লাটফর্ম বাম পন্থী আদর্শ থেকে কয়েক কদম দূরে বাস করে। ফলে তমুদ্দুন মজলিশের লোকেরা একসময় নাকি আফসোস করতো- আমাদের জনশক্তি দিন শেষে সমাজতন্ত্রের দিকে ধাবিত হয়। মঞ্জু ভাইদের ক্ষেত্রে কি হবে তা আগেই বলা মুশকিল। তবে এরকম কিছু একটা হবে বলে আশংকা হয়। আজকে তমুদ্দুন মজলিস নাই, মঞ্জু ভাইরা থাকবেন কি না জানি না। আল্লাহ ভালো জানেন।
সব শেষ কথা হল, সাংবাদিক সম্মেলন দেখে যা বুঝলাম, এটা যাস্ট শুরুর শুরু। মঞ্জু ভাইকে আমার কাছে মনে হয়েছে উনি এখনও স্বাভাবিক হতে পারেন নাই। সংবাদ সম্মেলনে উনার স্বাভাবিক ফ্লুয়েন্সি পাওয়া যায় নাই। মনে হচ্ছিল আবৃত্তি করছেন। আমার মনে হয়েছে অনেক প্রস্তুতির পরেও উনারা কোনও কারণে অপ্রস্তুত। কারন মঞ্চে যারা ছিলেন তারা কেউই অন্তত রাজনীতির খেলায় গণনা করার মতো কেউ নন। অন্যদিকে ভাসা ভাসা ভাবে অন্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছিল তারা কেউই এখানে ছিলেন না। এর অর্থ হতে পারে দুটো- (১) দ্বিধা টা এখনও কাটে নাই ফলে ক্রিয়া-বিক্রিয়ার কেমিস্ট্রিটা এখনও বিদ্যমান। অনেক কিছুই ফাইনাল না, নেগোসিয়েশনটাও চলমান। (২) এটা উনাদের কৌশলও হতে পারে।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি উনাদের কাছে সংগঠন ও আন্দোলনের জন্য কোনও কিছুই আশা করি না। ডিসপাইট দ্যাট, আমি চাই গাছ যেহেতু রোপিত হয়েছে- এটা বেড়ে উঠুক, পরিপুষ্ট হোক। শুভকামনা রাখি দুই অর্থে, জামায়াতের জন্য এটা বিনে পয়াসার পাইলট প্রজেক্ট হতে পারে আবার ডানপন্থীদের জন্য একটা ভালো প্লাটফর্মও হতে পারে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে যে কাঁদাছোড়াছুড়ি চলবে- আমি সেটাকে উপভোগ করতে চাই।
পাঠক মন্তব্য
বিশ্লেষনটা বেশ সুন্দর। এড়িয়ে যাওয়া যায়নি।
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন