দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ন দেশ এবং পৃথিবীর সর্ববৃহত মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় গত ১৭ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট, ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বারের মত বিজয়ের পথে মেঘবতি সুকন্যপুর্তির বামপহ্নি আদর্শের দল পিডিআইপি এর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জোকো উইডোডো এগিয়ে রয়েছেন। বেসরকা্রী ফলাফলে জোকো উইডোডো ৫৪.৫% ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন, যদিও নির্বাচনের রাষ্ট্রীয় ফলাফল এখনো ঘোষনা হয়নি। জোকো উইডোডোর প্রধান প্রতিদ্বন্দি সাবেক প্রেসিডেন্ট সৌহার্তের জামাই, সাবেক সেনা অফিসার ও জাতীয়তাবাদী দল গেরিন্দ্রা বা গ্রেট ইন্দোনেশিয়ান মুভমেন্ট পার্টির প্রধান প্রাবোও সুবিয়ান্তো পেয়েছেন ৪৪.৫% ভোট।পিডিআইপি দলটি আদর্শিকভাবে বামপহ্না হলেও এই নির্বাচনে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সংগঠন " নাহদাতুল উলামা" এর সহযোগীতায় জোকো উইডোডোর বিজয় সহজ হয়েছে। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে কুরআনকে অবমাননা করে মন্তব্য করায় জাকার্তার মেয়রের বিরুদ্ধে গনআন্দোলন গড়ে তুলেছিলো এই সংগঠনটি। সেই গণআন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের বড় উত্থান ঘটে। নাহদাতুল উলামা এর চেয়ারম্যান মারুফ আমীন জোকো উইডোডোর রানিংমেট হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন।
এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে রাজনৈতিক দলগুলো মুলত দুই জোটে বিভক্ত হয়ছেন। সেখানে জোকো উইডোডোর জোটে রয়েছে বামপহ্নি দল পিডিআইপি, মধ্যম বামপহ্নি দল গলকার, নাসদেম, হানুরা, পেরিনডো, পিএসআই, পিকেপিআই, ডানপহ্নি দল পিকেবি ও পিপিপি বা ইউনাইটেড ডেভেলপমেন্ট পার্টি। অপরদিকে বিরোধী জোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী প্রাবোও সুবিয়ান্তোর পক্ষে রয়েছেন তার নিজের জাতীয়তাবাদী দল গেরিন্দ্রা বা গ্রেট ইন্দোনেশিয়ান মুভমেন্ট পার্টি, ইন্দোনেশিয়ার প্রধান ইসলামিক রাজনৈতিক দল পিকেএস বা প্রসপারাস জাস্টিস পার্টি (ইখওয়ান আদর্শিত দল হিসেবে পরিচিত), ডানপহ্নি দল প্যান বা ন্যাশনাল ম্যান্ডেট পার্টি, মধ্যমপহ্নি দল ডেম ও বারকারিয়া। উনিশ কোটি ভোটারের দেশ ইন্দোনেশিয়ার এই নির্বাচনে সর্বমোট ২৭ টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। দেশটির সংসদীয় আসন সংখ্যা ৫৭৫ এবং প্রাদেশিক আসন সংখ্যা ২২০৭।
ইন্দোনেশিয়ায় ইতিপূর্বের নির্বাচন গুলোতে দেশটির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট সুকন্য এর রাজনৈতিক দল পিডিআইপি এবং দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট সৌহার্তের
রাজনৈতিক দল গেরিন্দ্রা এবং তাদের আদর্শিক উত্তরসুরীদের মধ্যই বেশিরভাগ প্রতিযোগীতা হতো।কিন্তু ২০১৬ সালের জাকার্তার ঘটনার পর দেশটিতে ধর্মের প্রভাব বেড়ে যায়। ফলে এই নির্বাচনে ধর্ম গুরুত্বপূর্ন ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো ধর্মের সেই প্রভাবকে সহজে কাজে লাগাতে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় সংগঠন যা বাংলাদেশের অনেকটা হেফাজতে ইসলামের মত " নাহদাতুল উলামা" কে নিজেদের কাছে টানতে একটু দেরি করেনি। যদিও ইন্দোনেশিয়ার বেশিরভাগ ইসলামি ও ডানপহ্নি দলগুলো জোকো উইডোডো বা মেঘবতি সুকন্যপুর্তির বিরোধী অবস্থানে রয়েছেন।
লেখকঃ
মোস্তফা ফয়সাল
পিএইচডি গবেষক
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
গাজি ইউনিভার্সিটি, আংকারা, তুরষ্ক।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন