কবিতা লিখতে রীতিমতো প্রার্থনাও করে এসেছি
‘হৃদয়ের ধর্ম নিয়ে কোন কবি করে না কসুর।’ —এই মন্ত্রে ‘ভাষার শপথ আর প্রেমময় কাব্যের শপথ’ নিয়ে আজও প্রাণ উজাড় করে লিখছেন তিনি, তিনি আল মাহমুদ। কবিতার শব্দ ব্যবহারের নিপুণতাই কেবল নয়, ‘স্বতঃবেদ্য স্বাভাবিকতা’ এবং ‘বিশ্বাসের অনুকূলতা’ নির্মাণে আল মাহমুদ নিঃসংশয়ে আধুনিক বাংলা ভাষার একজন অগ্রগামী কবি। আধুনিক জীবনের কর্মকাণ্ডের Multiplicity বা বহুলীকৃত অজস্রতা অনেক কবিকে অস্থির করলেও, তাঁদের কবিতায় ভাষার অস্পষ্টতা এবং জটিলতা আসলেও— আল মাহমুদের কবিতা এই সংকটে পতিত হয়নি। আন্তরিক সত্যের সমীপ্যে তাঁর কবিতা স্পষ্টবাক প্রকৃতির মতো উন্মুক্ত ও স্বাভাবিকই থেকেছে। ফলে তিনি আজও তার স্থান অঘটনে নয়— অসংখ্য পাঠকের হৃদয়ে, লোক-লোকান্তরে। উজ্জ্বল, স্বতন্ত্র ও একনিষ্ঠ এ কবি ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার মোড়াইল গ্রামের মোল্লাবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মীর আব্দুর রব, মাতা রওশন আরা মীর। কবির একটি ‘তরতাজা’ আলাপচারিতা পত্রস্থ হল। যেখানে উঠে এসেছে একেবারে সাম্প্রতিক বিষয়াদি। কবি আল মাহমুদের সাথে আলাপচারিতার মাধ্যমে উঠে আসা সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেনতরুণ লেখক ও সাংবাদিক আবিদ আজম।
----------------------------------------------------------------------------------------------------
কবিদের শোনার কোনো শেষ নেই। জানার কোনো শেষ নেই। শুনতে শুনতে জানতে জানতে একদিন চলে যান কবিরা। যাবার আগে যা জানলেন, শুনলেন, দেখলেন তারই কিছু কথা রেখে যান মানুষের জন্য, দেশ ও জাতির জন্য। জাতি যা নিয়ে স্বপ্ন দেখে তা হলো কবির রেখে যাওয়া সারৎসার। কবি আল মাহমুদ এর জ্বলন্ত প্রমাণ। কবির বাসায় গিয়ে দেখি তিনি গান শুনছেন। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত গান, আমারও পরানও যাহা চায়, তুমি তাই, তুমি তাই গো... গান শোনা শেষ হলে আপন মনে নিজেই গানটি আবার গাইলেন, আমিও কণ্ঠ মেলাতেই ফলবান বৃক্ষের মতো বয়সের ভারে (শারীরিকভাবে) প্রায় ন্যুব্জ হয়ে পড়া কবির ভুবন-ভোলানো হাসি। রিপিটেশন এড়াতে গতানুগতিক প্রশ্ন রেখে কবিকে প্রশ্ন করলাম, মাহমুদ ভাই এই তুমিটা কে? কবি বললেন, আমি তো জানি না।’ একটু পরে হেসে ফের বললেন, ‘হয়তো রবীন্দ্রনাথের প্রিয়তমা, মনের মানুষ। অথবা তাদেরই মতো কারো না কারো উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেছেন...।’
আবিদ : কিন্তু আপনার ‘তুমি’টা কে?
আল মাহমুদ : প্রেম-ভালবাসার এই যে, তুমি এই তুমিটা কে? —নারী হলে পুরুষ। আর পুরুষ হলে নারী। এই তুমি ছাড়া মানুষের আর কোনো গত্যান্তর নেই। তা ছাড়া এই তুমিটা মানব-মানবীকে ছাড়িয়ে অসীম কোনো সৌন্দর্যও হতে পারে।
আবিদ : আপনি প্রায়ই বলেন, রবীন্দ্রনাথ আপনার প্রিয় লেখক। পূর্বসূরি লেখক হিসেবে আপনার ভেতর তার প্রভাব কেমন?
আল মাহমুদ : নিঃসন্দেহে। তিনি আমার প্রিয় লেখক। রবীন্দ্রনাথ আমি আগা-গোড়া পড়েছি। আমিতো আগেও বলেছি, শিক্ষিত হতে হলে আগে রবীন্দ্রনাথ পড়তে হবে। আমার ভেতর কেন, সবার মধ্যেই তার প্রভাব আছে-থাকতে পারে। আমাদের মধ্যে নজরুলের প্রভাব কী নেই? তবে আমাদের সাহিত্যতো আধুনিক সাহিত্যই।
আবিদ : নজরুলের প্রভাব? কিন্তু আপনারাতো সেই দেয়াল ভেঙ্গে নিজেদের পথে হেঁটেছেন...
আল মাহমুদ : এটা তুমি ঠিক বলেছ। আমরা ৫০-এর কবিরা সব বলয় থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। আমাদের একটি দেশ আছে। আমাদের ভাব-ভাষা-কল্পনা সবই আছে অন্যদের চেয়েও ব্যতিক্রম, আধুনিক। কারণ আমি এখন লিখছি। আর উনারা ৫০ বা ১০০ বছর আগে লিখেছেন। তুলনামূলকভাবে আমাকে তো এগিয়ে থাকা উচিত। নেই কী? এখন তুমি বলো আমি সফল না ব্যর্থ! তোমরা বলো আধুনিক সাহিত্য’, এটা আর কতকাল আধুনিক থাকবে?
আবিদ : আপনি বলেন, কবিরা প্রেম ভাঙিয়ে খায়, কবির মূল পূঁজি কি প্রেমই?
আল মাহমুদ : হতেই পারে। প্রেমটা যার যার মতো করে কবিরা রচনা করে। প্রেম দিয়ে সে উপরে উঠে যায়। তবে সবাই প্রেমটাকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারে না। আমাদের পৃথিবীটা প্রেমময়। প্রেম-ভালবাসা কবির অন্যতম অনুষঙ্গ। কবিরা প্রেমিকই হয়ে থাকেন। যেমন ধরো নজরুল, তাঁর রচনা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। সাহিত্যিক হিসেবে তিনি ছিলেন বড় মাপের একজন পণ্ডিত। নজরুল ছিলেন মহাপ্রেমিক। তার নায়িকারাও অসাধারণ।
আবিদ : মাহমুদ ভাই, এই যে, এত বছর ধরে লিখছেন এর মূল উদ্দেশ্য কী? কী জন্য লেখেন?
আল মাহমুদ : আসল উদ্দেশ্য হলো প্রেম। মানুষের সাথে মানুষের যে সম্পর্ক হয় তার নাম প্রেম।
“গাছ তুলে মুখ চুল তুলে মুখ— সন্ধ্যা হলে আলোর বিনয়,
সবাই মিলে গান ধরেছে প্রেমের মতো আর কিছু নয়।”
—এই হলো প্রেম। সাহিত্যের উদ্দেশ্য নিয়ে এত কথা বলতে নেই। আনন্দ সৃষ্টিও সাহিত্যের অন্যতম উদ্দেশ্য।
মানুষের ভেতরে নাই-নাই বলে একটা শব্দ আছে এটাকে সাহিত্য তৃপ্ত করে। বিরহীকে সাহিত্য সুখ দেয়। আনন্দ দেয়। সমাজ বাস্তবতায় সাহিত্য। সমাজ ছাড়া বাস্তবতা ছাড়া তো আর সাহিত্য চলে না। সাহিত্য শব্দটাই আসছে সহিত থেকে। সহিত মানে সঙ্গে। সঙ্গে লেগে থাকা। অর্থাৎ সমাজ-বাস্তবতাকে বাদ দিয়ে সাহিত্য আছে? থাকতেই হবে। কোনো না কোনোভাবে এর সম্পর্ক আছে। যোগসূত্র থাকতেই হবে।
আবিদ : এখনকার সাহিত্যের সঙ্গে সমাজ কতটা সম্পর্কিত?
আল মাহমুদ : অলিক কল্পনার বিষয় নিয়ে সাহিত্য রচনা হচ্ছে। খামখেয়ালী সাহিত্যও হচ্ছে। তবে কোনো কিছু শূন্য থেকে হয় না। কিছু না কিছু মৌলিকত্ব তো থাকতেই হবে।থাকবে শেকড়ের সাথে সম্পৃক্ততা।
আবিদ : সাহিত্যের ফসলী জমিনকে আপনার রচনা ঊর্বর করে তুলেছে, বিনিময় আশা করেছেন কখনো?
আল মাহমুদ : কাজ করলে বিনিময় এমনিতেই পাওয়া যায়। তুমি কি মনে করো আমার একটা পরিচিতি নেই? সমস্ত দেশে আমার একটা পরিচিতি আছে। এটা কি এমনিতেই হয়েছে। আমি পথ চলতে গেলে লোকে বলে ঐ তো কবি যায়। এটা কেন? এটা আমার বিনিময়। আমি লিখে যা দিয়েছি তার বিনিময়।
আবিদ : আপনি তৃপ্ত? নিজেকে সফল মনে করেন?
আল মাহমুদ : সম্পূর্ণটা তৃপ্ত না হলে আমি খানিকটা তৃপ্ত। আমার এ লেখালেখি বৃথা যায়নি। বৃথা যেতে পারে না। আমার এ কাব্যকথা আমার লেখা গল্প-কবিতা একটা জায়গায় এসে পৌঁছে গেছে। বাক দিয়েছে সুদূর প্রত্যাশিত দিকে। আর এ জন্যই আমার এ নাম। আমার পরিচয়। আমাকে সবাই চেনে। ঘাম ঝরিয়ে আমার এ নামটুকু কিনতে হয়েছে। এই স্বার্থকতার শেষ কোথায়? এর পরিণতি কী? তা আমি জানি না। আমি ভবিষ্যৎ বক্তা নই। আমি কবি। নই গণক ঠাকুর।
আবিদ : বর্তমানে আপনি ডিকটেশনে লিখছেন। এতে কি আপনি আপনার সম্পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছেন?
আল মাহমুদ : কেন পারব না। একটা দাড়ি, কমার জায়গা আসলেও আমি বলে দেই। ডিকটেশনে আমি একটা জায়গায় পৌঁছে গেছি। এভাবেইতো গত দশ বছর লিখে এসেছি।
আবিদ : আপনার চারপাশের সবাইকেই কি আপনার বন্ধু মনে হয়?
আল মাহমুদ : আমার কোনো শত্রু নেই। আমি তো দেখি সবাই আমার বন্ধু। যারা আমার সমালোচনা করে হয়তো তারা ভুল বোঝেন। আমি সবাইকে ভালবাসি, শ্রদ্ধা করি। আমি প্রতিশোধপরায়ণ নই। আমার পায়ে পাড়া দিতে চায় এমন মানুষও কি আছে?
আগে কেউ কেউ এ কাজটা করতে চাইত। এখন আর কেউ এটা করে না। এখন একবাক্যে সবাই আমার কথা স্বীকার করে বলে— আল মাহমুদ ইজ ভেরি ইমপর্টেন্ট পোয়েট এন্ড ভেরি ক্রিয়েটিভ।
আবিদ: কবির ভালবাসা কি কখনো ফুরায়? কবি অফুরন্ত ভালবাসার গাঙচিল। এই বয়সে এসে আপনি কতটা প্রেমের কবিতা লেখেন। দেহের কবিতা লেখেন। এটা কী করে সম্ভব?
আল মাহমুদ : সম্ভব। সবই আল্লাহ্র ইচ্ছা। পৃথিবীতে আরও অসংখ্য কবি আমার মতো বুড়ো বয়সে লিখেছেন। প্রেমিক একটা ভাব আমার মধ্যে আছে বলেই এই কাজটা আমি সহজে করতে পারি। নারীর দেহের দোলাচালটা আমার মধ্যে অহরহ ঢেউ খেলে যায়। আমি লিখতে পারি। প্রেমটা হয়তো শরীরে নেই, মনেতো আছে।
আমার প্রেমটা কি মানব-মানবিকে ছাড়িয়ে অসীমতার দিকে চলে গেছে? —মাঝে মধ্যে যায়। তবে আমি সম্পূর্ণ সে শক্তি অর্জন করতে পারিনি। যা দিয়ে ইশকে এলাহীর কাছে যাওয়া যায়। সেখানে আমি পৌঁছাতে পারিনি।
সেখানে যাওয়ার জন্য আমি সাধনা করি। ধ্যান করি। আমি চোখ বুজে মহান আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করি। একটি ভাল কবিতা লিখতে আমি রীতিমতো প্রার্থনাও করে এসেছি। প্রার্থনায় বলি, হে আল্লাহ্! আমার কাছে তোমার রহস্য খুলে দাও। আমরা তোমাকে জানি না। তুমি তোমাকে জানাও। তোমার পথে চলতে দাও... ইত্যাদি।
আবিদ : একবার আপনি বলেছেন আপনার কোনো আদর্শ নেই, ফিকশন দ্বারা চালিত হন। আপনার মূলত দর্শনটা কী?
আল মাহমুদ : আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ্ ইলাহ— যার কাছে সবাই নত হয়। এ রকম একজন মালিকের আমি বিশ্বাস করি। আমাদের কিতাবে আছে ছয় দিনে তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। সপ্তম দিনে তিনি আরশে সমাসীন হলেন। আর বর্তমানে এই নিয়মেই পৃথিবী চলছে। দেখ আমরা ছয় দিন কাজ করি। এক দিন বিশ্রাম করি। এই বিশ্বাস ও দর্শনটা আমার মধ্যে আছে। আমাদের অন্তরই তো আল্লাহ্র উত্তম জায়গা। তিনি আমাদের অন্তরেই আছেন। তুমি ধ্যানমগ্ন হয়ে দেখ তোমার মধ্যে একটা অপ্রার্থিব খ্যাতি কাজ করবে।
খ্যাতি-সুনাম এমনি এমনি আসে না। এ জন্য একটা জীবন উৎসর্গ করতে হয়। আমি করেছি বলেই আমার ধারণা, এ সব কিছুই উপর থেকে নির্ধারিত।
আবিদ : গড গিফটেডে বিশ্বাস করেন?
আল মাহমুদ : হ্যাঁ, সবই গড গিফটেড। আমার চেষ্টা আমাকে আসলের এই আসনে নিয়ে আসতে সহায়তা করেছে। একটা কথা আছে না। বিনা প্রেমসে নাহি মিলে নন্দলালা। বিনা ভালবাসায় প্রেমিক মিলে না।
আবিদ : আপনার সাহিত্যে ব্যক্তি আল মাহমুদও কি হাজির?
আল মাহমুদ : হ্যাঁ, হাজির। পড়ো না। আমাকে পড়ো। দেখবে সব খানেই আমি আছি। যেভাবে বেড়ে উঠি। তাতে আমি সব লিখেছি। আমার কাবিলের বোন পড়ে দেখ। বইটা তেমন পঠিত হয়নি। আমার বিশ্বাস একটা সময় মানুষ সেটা পড়বে, ডেফিনেটলি পড়বে। নিজেকে জানতে হলে মানুষের... মানুষের জন্য মানুষের যে... হাহাকার ভালবাসা তার স্বরূপ আমি এখানে তুলে ধরেছি।
আবিদ : গদ্যে আপনি কী করতে চেয়েছেন?
আল মাহমুদ : গদ্যে-পদ্যে আমি একই কাজ করতে চেয়েছে। আমি কবি তো। আমি আমার লেখার মধ্যে এক জায়গায় পৌঁছাতে চেয়েছি। সারাদেশের মানুষ আমাকে চেনে। এটা কেন? আমি কি ঘরে ঘরে গেছি। মানুষ আমাকে চেনে কেন? আমি আমার লেখা দিয়ে একটা জায়গায় পৌঁছে গেছি বলে সবাই আমাকে চেনে। আর এ কাজটাই আমি গদ্যে-পদ্যে করতে চেয়েছি। আমি সফল। আমার কাজ ও পরিশ্রমে আমি সফল। আমি বিশ্বাসী মানুষ। আমি প্রেম করি। আমাকে পাগলের মতো ছেড়ে দেওয়া হয়নি। আমি মুসলমান। মুসলমানদের একটা নিজস্ব সত্তা আছে। নিজস্ব রীতি-নীতি আছে।
[কথা বলতে বলতে কবি একটু থামলেন। এরপর ফের শুরু করলেন।]
আল মাহমুদ : শোন মিয়া, আমি নিজে কিন্তু দরবেশ। তুমি আমাকে যতই গৃহা দেখ, আসলে তো আমি দরবেশ মানুষ। আমার কোনো ঘর-বাড়ী নাই। আমি দরবেশ, আমি উদাসীন। অথচ আমার কিনা ছিল। বাড়ী ছিল, গাড়ী ছিল, নারী ছিল।... আমার বাড়ী ছিল আজ কিছুই নেই। কেন নেই? আমি উদাসীন বলে এখন আমার কিছু নেই।
এই যে সারাদেশের মানুষ আমাকে ভালবাসে এর কি মূল্যে দেওয়া যায়? অবশ্যই দেওয়ার আছে। আমি মানুষের ভালবাসার মূল্যে দেই। ভালবাসলে ভালবাসা দিতে হয়। প্রেম কী জিনিস মানুষ তা আগে শিখতে হবে। আমার বাঁধা নেই। আল্লাহ্ তাঁর পাগলদের সব সময় মুক্ত করেই রেখেছেন। এরপর এই মুক্তির আরেক নাম ইশ্ক। আমার এক সময় পাগল-ফকীর হওয়ার ইচ্ছা জাগত।
আবিদ : ভবিষ্যতে আপনি আর কী করতে চান?
আল মাহমুদ : সব সময় আমি কিছু না কিছু করছি লিখছি। ও-ভাবে কল্পনা করে আমি আর পারি না। আমার এই টুকরো টুকরো কাজগুলো একদিন আমার ঠিকঠাক কর্মের সঙ্গে যুক্ত হবে। আমার ধর্মের সঙ্গে যুক্ত হবে। আমি হব বিশাল মহীরূহ।
আবিদ : বিশেষ কোনো অনুতাপ আপনার ভেতর কাজ করে কি?
আল মাহমুদ : করে। আমি কখনো কখনো ভাবি ঐ কাজটা আমি কেন করলাম। তাকে কোনো ব্যথা দিয়েছিলাম? কারও কাজ ও চেহারা মনের মণিকোঠায় ভেসে ওঠে, আহ্ আমি তাকে অযথাই কষ্ট দিয়েছিলাম। এখানে নারী-পুরুষ সবাই আছেন। যাদের আমি একটা সময় ঠকিয়েছিলাম বলে মনে হচ্ছে। যাদের আমি ঠকিয়েছি তাদের মধ্যে নারীই বেশী। কারও নাম আমি বলতে চাই না।
আবিদ : আপনার জন্মদিন নিয়ে কিছু বলবেন?
আল মাহমুদ : আমি মানুষকে ভালবাসতে চাই। তাদের ভালবাসা পেতে চাই। মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই। মানুষ হলো রহস্যের আধার। তুমি গণনা করে কুল পাবে না। মানুষকে দেখতে খুব ভাল লাগে। নারী-পুরুষ বলে কোনো কথা নেই।
আমাদের চারপাশের যে অস্থিরতা, অপরাজনীতি এর জন্য দায়ী। এর থেকে উত্তরণের পথ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। দেশ-জাতির কাছে কৃতজ্ঞগতার শেষ নেই আমার।
আবিদ : মৃত্যু নিয়ে কী আপনার ভাবনা হয়?
আল মাহমুদ : ডেথ্ ইজ ডেথ্। মৃত্যুর দুয়ার থেকে কেউ ফিরে এসে বলেনি মৃত্যু ঐ। মৃত্যুর বিষয়ে কারও কোনো হাত নেই। মৃত্যু আসলে মরে যাব। মৃত্যুই সত্য, আর সব মিথ্যা। আমি যাব তো বেঁচে গেলাম। আমি পুনর্জন্মে বিশ্বাসী নই। আমার মৃত্যু আসবে, আমি গভীর আলোর মধ্যে দিয়ে পথ হেঁটে হেঁটে চলে যাব। অজানার উদ্দেশে। মৃত্যুর দুয়ারে। এখানেই শেষ নয়। সাহিত্যে, আমার কীর্তিতে আশা করি হাজার বছর বেঁচে থাকব।
কবিকে সালাম দিয়ে উঠতে চাচ্ছি। মনের মাঝে বাজছে তাঁর কবিতার পঙ্ক্তিমালা—
“কিন্তু একজন কবিকে কী দেবে তোমরা? যে ভবিষ্যতের দিকে
দাঁড়িয়ে থাকে বিষণ্ন বদনে? অঙুলী হেলনে যার নিসর্গও
ফেটে যায় নদীর ধারায়। উচ্চারণে কাঁপে মাঠ,
ছত্রভঙ্গ মিছিল, মানুষ, পাক খেয়ে এক হয়ে যায়।…”
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন