উর্দু ভাষার বিখ্যাত কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজের ‘হাম দেখেঙ্গে’ ঘিরে বিতর্ক ভারতে। সম্প্রতি ভারতে সংগঠিত এনআরসি ও সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে কানপুর আইআইটির শিক্ষার্থীরা ফয়েজ আহমদের লেখা গজল গান। এরপর এ গজল হিন্দু-বিরোধী কি না তা নির্ণয়ে তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়।
এ তদন্ত কমিটিকে হাস্যকর বলে অভিহিত করেছেন ফয়েজ আহমদ ফয়েজের মেয়ে সালিমা হাশমি। পাকিস্তানের পিটিআইকে দেওয়া মন্তব্যে তিনি বলেন, গোটা বিষয়টি একই সঙ্গে দুঃখজনক এবং হাস্যকর। শুক্রবার ওই সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, একে অন্যভাবেও দেখার সুযোগ আছে, এর ফলে তারা উর্দু কবিতার এবং এর মেটাফোরের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। ফয়েজের শক্তিকে কখনো খাটো করে দেখা যাবে না।
ফয়েজ আহমদের মেয়ে বলেন, আমি মনে করি কবি এবং তাদের কবিতার প্রতি যেকোনো সময়ে পৃথিবীর যেকোনো জায়গার মানুষের অধিকার আছে। কবিরা তাদের সামনে সেসব শব্দ হাজির করে যা মানুষ নিজেরা খুঁজে পায় না।
তিনি বলেন, কবিতা তরুণদের আকৃষ্ট করার, আবেগতাড়িত করার জন্য আকর্ষক হিসেবে কাজ করে- তাদের সামনে থেকে পথ দেখায় এবং বুঝতে শেখায় তাদের কীভাবে সামনে আগাতে হবে- যা শাসকদের জন্য হতাশার হয়ে ওঠে যে, তরুণরা শাসকদের ভঙ্গুরতা টের পায়, মানুষ তার শক্তি সম্পর্কে ধারণা পায় (কবিতার মাধ্যমে)। সে জন্য বলি কবি, লেখক, শিল্পীসহ সব সৃষ্টিশীলরা স্বভাবতই স্বৈরশাসনের শত্রু। আমি আনন্দিত যে আমার বাবা কবরে থেকেও মানুষের সঙ্গে যোগযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
তিনি আরো বলেন, এখানে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে সীমান্তের এপার কিংবা ওপারে ফয়েজকে প্রয়োজনীয় মনে হবে। আমি কয়েক বছর আগে বলেছি, নেপালে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে যখন গণতান্ত্রিক সংগ্রাম চলছিল, তখন সেখানেও এ গান (হাম দেখেঙ্গে) গাওয়া হয়।
সালিমা হাশমি বলেন, ‘কবিতা নিজে গোঁড়ামিকে মোকাবিলা করতে পারে না, কিন্তু কবিতা পরিবর্তনের জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে যা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে সহায়তা করে। তাদের কোনো লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে এবং ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখায়’।
১৭ নভেম্বর দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় পুলিশি নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান কানপুর আইআইটির শিক্ষার্থীরা। সে বিক্ষোভে তারা ফয়েজের এ গান গান। এর আগে জামিয়াতেও শোনা গিয়েছিল এ গান।
তবে কানপুর আইআইটিতে এই গানের পর সেখানকার শিক্ষক বশীমন্ত শর্মার অভিযোগ, এই গজল হিন্দু বিরোধী। ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয় একটি তদন্ত কমিটিও।
১৯৭৯ সালে লেখা এই গজল তৎকালীন পাক এক নায়ক জিয়া উল হকের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ।
সালিমা বলেন, ‘ফয়েজের কবিতা যখন লেখা হয়েছিল, তখনো তা প্রাসঙ্গিক ছিল। এবং এখনো এটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যদিও ওই কবিতা কখনই হিন্দু বা মুসলিম-বিরোধী ছিল না’।
সালিমার মতো এ নিয়ে সরব হয়েছেন বলিউড চিত্রনাট্যকার তথা কবি জাভেদ আখতার।
তিনি বলেন, ‘ফয়েজের ওই কবিতা লেখা হয়েছিল জিয়া উল হকের মতো এক নায়ক তথা মৌলবাদীর বিরুদ্ধে। এটা লক্ষণীয় যে সব মৌলবাদীরাই এই কবিতা অপছন্দ করেন।’
জাভেদের মতোই এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরিচালক বিশাল ভরদাজ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন