‘সানজাক ই উসমান’ বইটি মূলত উসমানি সালতানাত তথা অটোমান সাম্রাজ্য নিয়ে লেখা হলেও, এই বই শুরু হয়েছে ইতিহাস কুখ্যাত মোঙ্গল সাম্রাজ্যের উত্থান নিয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সের ছাত্র প্রিন্স মুহাম্মাদ সজল মোবাইলে টাইপ করেই লিখে ফেলেছেন ৪৩২ পৃষ্ঠার এক চমৎকার বই, নাম ‘সানজাক ই উসমান:অটোমানদের দুনিয়ায়’। ইতিমধ্যেই বইটি অনলাইনে ও পাঠকসমাজে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের মুখে মুখে এখন ‘সানজাক ই উসমানে’র নাম। বইটি প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স।
‘সানজাক ই উসমান’ বইটি মূলত উসমানি সালতানাত তথা অটোমান সাম্রাজ্য নিয়ে লেখা হলেও, এই বই শুরু হয়েছে ইতিহাস কুখ্যাত মোঙ্গল সাম্রাজ্যের উত্থান নিয়ে। বইয়ের ভাষাতেই বলা যাক:
‘আপনি কয়জন সিরিয়াল কিলারকে চেনেন? জগতের ইতিহাসে ভয়ংকরতম খুনির সঙ্গে কি আপনার দেখা হয়েছে? বইয়ের নাম “সানজাক ই উসমান: অটোমানদের দুনিয়ায়”। এই বইটি আপনাকে তার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে চলেছে। তাকে দেখতে হলে আমাদের উঁকি দিতে হবে ৮০০ বছর আগের পৃথিবীতে।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতেই মঙ্গোলিয়ান স্তেপ থেকে যেন স্বয়ং আজরাইল হয়ে নেমে এলেন চেঙ্গিস খান এবং তার মোঙ্গল বাহিনী। মাত্র ২০ বছরের ভেতর যেন নরকে পরিণত হলো সারা পৃথিবী। প্রথমে চীন তারপর তুর্কিস্তান, খোরাসান হয়ে মোঙ্গল ঝড় ধেয়ে এলো ককেশাস, আনাতোলিয়া দিয়ে রাশিয়া আর হিন্দুস্তানের দিকে। মরে সাফ হয়ে গেল কোটি কোটি মানুষ। মোঙ্গলদের হাত থেকে কোনোমতে প্রাণ বাঁচিয়ে ইরান-তুর্কিস্তান থেকে আনাতোলিয়ার দিকে রওনা দিল কিছু মানুষ।
তারপর কী হলো? কী করে তারা গড়ে তুলল বিশাল এক সালতানাত? মোঙ্গলদের হাত থেকে কারা বাঁচাল মক্কা-মদিনাকে?’
প্রিন্স মুহাম্মাদ সজল বলেন, ‘এটা কোনো নিয়মিত ইতিহাসের বই বা কোনো ঐতিহাসিক উপন্যাস নয়। এটা একই সঙ্গে ইতিহাস, ফিকশন আর থ্রিলার। আজকের পৃথিবী কী করে নির্মাণ হলো, তা জানতে এই বই আপনাকে দারুণ সহযোগিতা করবে।’
‘সানজাক ই উসমান’ প্রকাশিত হয় গত ১৯ এপ্রিল। এরপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র ১১ দিনের মাথায় শেষ হয়ে যায় প্রথম সংস্করণে বাজারে আনা এক হাজার কপি। ৪৩২ পৃষ্ঠার একটা ইতিহাসের বই কীভাবে এত দ্রুত শেষ হলো তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বইটির প্রকাশকও।
বইটি নিয়ে বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান খান মন্তব্য করেছেন:
‘এটি কোনো সাধারণ ইতিহাসবিষয়ক গ্রন্থ নয়। তাই ইতিহাসবোদ্ধারা এতে ইতিহাসের প্রণালিসিদ্ধ রচনা পদ্ধতির আলোকে বিষয়বস্তু অনুসন্ধান করলে হতাশ হবেন। তবে সাধারণ পাঠকসহ ইতিহাসের পাঠক ও গবেষকের জন্য এ বইটি গুরুত্ব কম হবে না। কারণ, ইতিহাসের জ্ঞাত এবং বিশেষ করে অন্তরালে চাপা পড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলিকে পাদপ্রদীপের আলোয় আনার চেষ্টা রয়েছে বইটিতে। ইতিহাসের ছাত্র বা গবেষক না হয়েও ইতিহাসের প্রতি অনুরাগ থেকে লেখক আলোচ্য গ্রন্থটি রচনার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমি তার এ দুঃসাহসী আন্তরিক প্রয়াসকে স্বাগত জানাই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী, তরুণ লেখকের ব্যতিক্রমী রচনাটিই ইতিহাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক, ইতিহাস অনুরাগী ও সাধারণ পাঠকদের কাছে সমাদৃত হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন