এক সময় চিঠি ছিল অন্যের কাছে নিজেকে উপস্থাপন, মনের কথা জানানোর মাধ্যম। আবার কেউ কেউ নিজের মনের কথা জানাতেন খোলা চিঠির মাধ্যমে, যেটা একজনের উদ্দেশে লেখা হলেও জানতেন অনেকেই। দিনকে দিন মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা মুঠোফোনের সংক্ষিপ্ত বার্তায় জানান সে সব কথা। তবে খোলা চিঠি দিয়ে প্রিয়.কমের মাধ্যমে একজন তার কথা জানিয়েছেন মনের মানুষটিকে।
রুপা (ছন্দনাম),
তোমায় ধন্যবাদ। ভালোবাসার রঙিন চশমা পদদলিত করে ভেঙে দিয়েছ বলেই না বাস্তবতাকে চিনতে শিখলাম। আজকের পর হয়তো আর লিখবো না তোমায়। জানো রুপা, যেদিন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম, সেদিনই তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। নদী যেমন সব বাধা পেরিয়ে সাগরে মিশতে চায়, আমিও তেমনি হারাতে চেয়েছিলাম তোমার মাঝে। কিন্তু তুমি তো সারা দিলে না। যে মুখে দেখেছিলাম মায়াবী হাসি, আসলে যা ছিল মরিচিকা, যার মাঝে লুকিয়ে রেখেছিলে একবুক ঘৃণা আমার জন্য... আমি তা ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি। জানো, হাসির মাঝেও যে ঘৃণা লুকিয়ে রাখা যায়, তোমাকে না দেখলে তা আমার অজানাই থেকে যেতো। যেদিন শুনলাম, তুমি আমায় পছন্দ করো না, আমার চরিত্র নয়, আমার চেহারাই আমার প্রেমের পথের বাধা, সেদিন নিজেকে খুব তুচ্ছ , নগণ্য মনে হয়েছে। কিন্তু কী করবো বল, ভাগ্যকে না হয় পরিবর্তন করা যায়, চেহারা সেতো বিধাতার দান। সত্যি বলছি, তোমাকে খুব ভালোবেসেছিলাম, আজও বাসি, আগামীতেও বাসবো। জানি তুমি ভালোবাসবে না, কিন্তু কী করবো, আমার মন জুড়ে যে শুধু তুমি। দেহকে না হয় চার দেয়ালে বন্দী রাখি, আড়াল করে রাখি তোমার চোখ থেকে, মনকে আমি কী দিয়ে বাধব বল, সেতো শৃঙ্খল মানে না, সেতো বাঁধন হারা পাখি, কুল হারা ঢেউ। না, এসব তোমায় বলছি কেন! তুমি তো আমায় ঘৃণা করো। জানতো ঘৃণার বিষ মাখানো তীর, সাপের বিষ মাখানো তীরের চেয়েও বিষাক্ত। তোমার ঘৃণা মাখা মুখটা নিয়ে যখন আমার দিকে তাকাও, তখন খুব কষ্ট হয়। তোমার হাসি মাখা মুখটা যতটা সুন্দর লাগে, ঘৃণা ভরা মুখটা ততোটাই বিশ্রি লাগে। তাইতো তোমায় দেখলেই দূরে সরে যাই। রংধনুর সাত রং যে মুখে লেগে থাকে, আমাকে দেখে তা যেন কালো মেঘে ছেয়ে না যায়। হৃদয়ের রক্ত আমার অবিরত ঝরে। সে রক্ত কেউ দেখে না, শুধু আমি দেখি। যেদিন শুনেছিলাম তুমি আমায় ঘৃণা কর, সেদিনই তোমার ঘৃণার তীর আমার বুকে এসে বিঁধেছিল। শত চেষ্টা করেও তা বের করতে পারিনি। জানি, বেশিদিন বাঁচব না। যে দিন শুনবো তুমি বধূ সেজে অন্যের ঘরণী হয়েছ, সেদিন হৃদয়ের সমস্ত রক্ত ঢেলে দিয়ে তোমার দুটি পা, দুটি হাত রাঙিয়ে দেবো, রক্তিম সাজে। সেদিন থেকে তোমায় আর এ অভাগার মুখ দেখতে হবে না। একটা শুধু অনুরোধ করছি তোমায়, কাফনে যখন জড়িয়ে থাকবো আমি, আমায় দেখতে এসো, আমার মুখটি দেখো! অনুরোধ! ঘৃণাভরা মুখ নিয়ে দেখো না, হাসি মাখা মুখটি নিয়ে দেখো,সেই প্রথম দিনের মতো। তোমার কাছে এর বেশি কিছু চাইবার নেই আমার। তুমি রাজকুমারি হয়ে জন্মেছ, দোয়া করি রাজরানি হয়ে থেকো। আমি না হয় দু:খকে আলিঙ্গন করে চলে যাব ওপারে।
ইতি
অজানা পথের পথিক রুদ্র (ছন্দনাম)।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন