ঈদের নামাজ খোলা জায়গা, মসজিদ কিংবা যেখানেই পড়া হোক না কেন, অবশ্যই তা জামাতের সঙ্গে পড়তে হবে। জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য যেসব শর্ত প্রয়োজন, ঈদের নামাজ আদায় করার জন্যও একই শর্ত প্রযোজ্য। জুমা সাপ্তাহিক ঈদ আর ঈদ হচ্ছে বাৎসরিক আয়োজন। এ আয়োজনে কিছুটা শিথিলতা রয়েছে। জুমার নামাজ ফরজ আর ঈদের নামাজ ওয়াজিব।
জুমার নামাজের পূর্বে দুটি খুতবা দিতে হয়। জুমার খুতবা ওয়াজিব। ঈদের নামাজের খুতবা ওয়াজিব নয়, সুন্নত। ঈদের খুতবা দিতে হয় নামাজের পর।
জুমার সঙ্গে ইদের নামাজের আরেকটি পার্থক্য হচ্ছে, ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির দিতে হয়। প্রথম রাকাতের শুরুতে আর পরের রাকাতে রুকুর আগে তিন তিনটি তাকবির দেয়ার নিয়ম। রাসূল সা. ইদের দিন সম্পর্কে বলেন, হাযা ইদুনা ইয়া আহলাল ইসলাম। হে মুসলিম উম্মাহ! এটা আমাদের ইদ। (বুখারী ১/১৩৪)
ঈদের শর্তগুলো কিছুটা সহজ রাখার কারণ ঈদের গুরুত্বহীনতা নয় বরং কড়াকড়ি করে ঈদের আনন্দ যেন মাটি না হয় সে উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তায়ালা ঈদকে সহজ করেছেন। ঈদের নামাজ ফরজ করলে স্বত:স্ফূর্ত জামাত আদায়ের আনন্দ থাকত না।
আল্লাহ তায়ালা এ জন্যই ফেরেশতাদের সামনে মুমিনদের নিয়ে গর্ব করেন। ঈদের জামাতে যারা অংশগ্রহণ করে তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেন।
রাসূল সা. ইরশাদ করেন, ‘আসমানে ঈদের দিনকে পুরস্কার দিবস নামকরণ করা হয়। ঈদের নামাজ শেষে ফেরেশতারা ঘোষণা করতে থাকে, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের পাপসমূহ মাফ করে দিয়েছেন, তোমরা পূত পবিত্র হয়ে গৃহে ফিরে যাও। (তাবারানি কাবির, সাদ ইবন আউস রা. থেকে বর্ণিত, তারগিব ২/১৫৯)
ঈদের জামাত না পেলে করণীয়
বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ বলেন, ঈদের সালাতে যদি কেউ অংশগ্রহণ করতে না পারেন, তাহলে ঈদের সালাত কি তিনি কাজা করবেন অথবা একাকী পড়বেন, এই মাসআলা নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছেন। বিশুদ্ধ বক্তব্য হচ্ছে তিনি ঈদের সালাত একাকী আদায় করবেন না। একদল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে, যেহেতু তিনি ঈদের সালাত আদায় করতে পারেননি, সেহেতু তিনি একাকী সালাত আদায় করে নেবেন।
তিনি বলেন, যদি অধিক সংখ্যক লোক হয়, তাহলে তিনি সেখানে জামাত করে ঈদের সালাত আদায় করতে পারেন। কিন্তু যদি এমন হয় যে, জামাত বা ইমামতি করার মতো কোনো লোক নেই, তাহলে তিনি ঈদের সালাত একাকী আদায় করবেন না। এর জন্য কোনো কাজা নেই। তিনি কাজা করবেন না। এটা হলো বিশুদ্ধ মত।
ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ বলেন, রাসুল (সা.)-এর সুস্পষ্ট কোনো দলিলের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়নি যে, রাসুল (সা.) ঈদের সালাতকে কাজা করতে বলেছেন। একদল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে, যারা অংশগ্রহণ করেছে তারা সালাত আদায় করলে যদি কোনো কারণে কেউ আদায় করতে না পারে, তাহলে তার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। এককভাবে সালাত আদায় করার বিষয়টি রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।
রাসূল সা. বা সাহাবায়ে কেরাম কখনও একাকী ঈদ আদায় করেননি। কোনো একটি বর্ণনায়ও একাকী ঈদের নামাজ আদায়ের কথা পাওয়া যায় না।
তবে মসজিদ ছাড়া ঘরে ঈদের জামাত করা যাবে যদি শর্ত পাওয়া যায়। শর্ত হচ্ছে ইমাম ছাড়া কমপক্ষে তিন জন বয়স্ক পুরুষ থাকতে হবে। বড় ঘরের বৈঠক খানায় অথবা বাড়ির ছাদে বা উঠানে অথবা যে কোনো খোলা জায়গায় ইদের নামাজ আদায় করা যাবে।
হযরত আনাস রা. একবার ঈদের নামাজ পড়তে পারেননি, তো তিনি বাড়ির সবাইকে একত্র করে তার গোলামকে ঈদের নামাজের ইমামতি করতে বললেন। (বুখারী শরীফ ১/১৩৪)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন