জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) সংলগ্ন বাহাদুর শাহ পার্ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাগুলোতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন অধিকাংশই ছাত্রীরা। সর্বশেষ রবিবার (১৩ অক্টোবর) এক ছাত্রী ছিনতাইকারীর হামলার শিকার হয় বলে জানা যায়।
ছিনতাইকারীর হামলার শিকার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, আমরা রিকশায় যাচ্ছিলাম। খুব ভোর হওয়ায় রাস্তায় তেমন লোকজন ছিল না। গলির মধ্যে ঢোকার সাথে সাথে একটা বাইক আমাদের রিকশা ওভারটেক করে সামনে গিয়ে থামায়। হাতে রামদা-ছুরি এসব নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। আমার কাজিন ছিল সাথে। ওর গলায় রামদা ধরে যা আছে সব দিয়ে দিতে বলে, না হলে লাশ ফেলে দিবে। আমরা সব দিয়ে দেই। ব্যাগে দুইটা ফোন, কিছু টাকা, আইডি কার্ড, চাবি এসব ছিল।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে থানায় গেলে ওরা তেমন গুরুত্ব দেয় না। একজন আরেকজনের কাছে পাঠায়। তারপর বলে বাইরে কম্পিউটারের দোকান থেকে জিডি করে নিয়ে যেতে, কম্পিউটারের দোকানে গেলাম, কেউ প্রোসেসিং বুঝতে পারে না। আমরা পরদিন প্রক্টর অফিসে গেলে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। তারপর আমরা কয়েকজন মিলেই থানায় যাই। গিয়ে পরিচয় দেওয়ার পরে ওরা জিডি নেয় আর ঘটনাস্থলে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ কালেক্ট করে।
হল এবং নানা সুযোগ সুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থীরা টিউশনসহ নানাবিধ কাজ করে নিজের খরচ নিজে বহন করার চেষ্টা করে। ক্যাম্পাস থেকে বাইরে বের হলে একটা নারী শিক্ষার্থী নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারছে না। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে এমন কিছু ঘটনা উঠে এসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমি রায়সাহেব বাজারের দিকে টিউশন করাই। টিউশনের বাসা থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। প্রায়ই আসার পথে আমি সমস্যা ফেস করি, মাঝ বয়সি এক লোক একদিন নানান ভাবে হেনস্তা করে। আরেকদিন আসার পথে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে এক ছেলে নাম, পরিচয়, ফোন নাম্বার জানতে চায়। বিষয়গুলো খুবই ভয়ানক। নারী হিসাবে আমার নিরাপত্তা কোথায়?
তাছাড়া নানান সময় এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় নারী শিক্ষার্থীদের। রিকশাওয়ালা অবধি সুযোগ নিতে ছাড়ে না। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে বাসে উঠব। এমন সময় এক রিকশাওয়ালা চিল্লাইয়া বলতাছে ওড়না কই ওড়না, মাথায় দেওয়া যায় না। আরও নানান কুরুচিপূর্ণ কথা তিনি বলেছেন।
গত ৩ এপ্রিল ছিনতাইয়ের শিকার হন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সিনথিয়া আক্তার। পরে তিনি সূত্রাপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ওইদিন সকাল সাড়ে ৭টায় বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে বাস থেকে নামার পর হঠাৎ এক মোটরসাইকেল আরোহী তার গলায় ছুরি ধরে ফোন দিতে বলে। ভয়ে তিনি ফোনটি দিয়ে দেন। এরপর তার সামনে আরেকজনের হাতে ছুরি মেরে তার ফোনটিও নিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।
গত ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বাহাদুর শাহ পার্কে ছিনতাইয়ের শিকার হন নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ২৮ মার্চ বিকেলে বাহাদুর শাহ পার্কে যাওয়ার পথে অপরিচিত এক ব্যক্তি আমার পিছু নেয়। পার্কের ভেতরে বন্ধুর সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্পের পর ওই বন্ধু চলে যায়। আমি আরও কিছু সময় পার্কে অবস্থান করি। পরে যখন বের হব তখন ওই ব্যক্তিসহ আরও চার-পাঁচজন আমার গতিরোধ করে এবং জোর করে পার্কের ভেতরে নিয়ে যায়। তারা আমার ওড়না ধরে টানাটানি করে এবং আমার মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেয়। আমার কিছু ছবিও তারা তুলে রাখে। ওই ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরে প্রায় ১০টির মতো ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানেও অভিযোগ জমা হচ্ছে অভিযোগের খাতায়। কিন্তু মিলছে না এর প্রতিকার। কি ভূমিকা পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষার্থীরা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. তাজাম্মুল হক বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। ভুক্তভোগীরা আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসে, আমি তাৎক্ষণিক থানায় কল দিয়ে জিডি নিতে বলি। ক্যাম্পাসের ভেতরের বিষয় হলে আমরা অতি দ্রুত বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করি। যেহেতু বাইরের ইস্যু তাও আমরা দেখছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের আরও সর্তক হতে বলব। তাছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরেও যেন নিরাপত্তা থাকে সেজন্য কি করা যায় আমরা আলোচনা করব।
ছিনতাই প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ছিনতাইয়ের বিষয় যেগুলো ঘটছে তা সম্পর্কে আমি অবগত নই। আর যেহেতু ক্যাম্পাসের বাইরের বিষয়, তাই তারা যদি লিখিত কোনো অভিযোগ দেয় তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা দায়িত্বরত আছেন, তাদেরকে ব্যবস্থা নিতে আমরা অবগত করব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন