রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সময় জমা দেওয়া এইচএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার নম্বরপত্র (মার্কশিট) পোকায় খেয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর কাগজ এভাবে নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিভাগের এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। এজন্য একে অন্যকে দায়ী করেছেন শিক্ষার্থী ও বিভাগটির শিক্ষক-কর্মচারীরা।
পোস্টে শিক্ষার্থী লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সময় আমাদের কাছ থেকে যে অরিজিনাল সার্টিফিকেট নেওয়া হয়েছিল, এগুলার অবস্থা দেখেন। নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০-৩০ জন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এটি হয়েছে। এ বিষয়টি কোনোভাবেই এক্সিডেন্ট কিংবা আনসার্টেইন কিছু বলে পার করে দেওয়ার মতো না।
তিনি বলেন, আমাদের অনেকের তিনটি মার্কশিট বা সার্টিফিকেট পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে, যা রিস্টোর করার জন্য শিক্ষাবোর্ডে কয়েক মাসের একটা লম্বা প্রসেসের মধ্যে যেতে হয়, ফিনান্সিয়াল বিষয়ের কথা বাদই দিলাম। তার ওপর আমাদের অনেকের এসএসসি বা এইচএসসি আলাদা বোর্ডের, এক্ষেত্রে তাদের ঝাট-ঝামেলা আরও বেশি।
শিক্ষার্থী আরও বলেছেন, ডিপার্টমেন্ট আমাদের লাইফের এত গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি, এটা অবশ্যই আনপ্রফেশনাল এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। আমরা ডকুমেন্টস যেভাবেই জমা দিয়েছি, ঠিক সেভাবেই ফেরত চাই। অন্যের দায়িত্বহীনতার দায়ভার আমরা কেন নিতে যাব?
দীর্ঘদিন ধরে রেজাল্ট দুর্নীতি, আওয়ামী সরকারের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে নির্যাতন, হেনস্তা, হুমকি ধামকি দিয়ে এসেছেন দীর্ঘদিন ধরে। তারা এখন শিক্ষার্থীদের জরুরি কাগজপত্রের দায়িত্ব পালন করতেও ব্যর্থ। যে ডিপার্টমেন্ট শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের নিরাপত্তা দিতে পারে না, তারা কীভাবে শিক্ষার্থীদের একটা ভালো ভবিষ্যৎ উপহার দেবে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এ বিষয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী ইত্তেহাদুল ইসলাম প্রণুত লিখেছেন, এখানে অফিসের স্টাফদের অবশ্যই গাফিলতি আছে। তারা অজুহাত দিচ্ছে যে, তিন মাস বিভাগ বন্ধ ছিল- এজন্য এমন অবস্থা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাগজপত্রগুলা বিভাগের অফিসের ফ্লোরে পড়ে ছিল। এজন্য সহজেই পোকা কেটে নিছে। তারা এটি উঠিয়ে নিতে বলেছিল তিন-চার মাস আগে। এখন তারা এটা বলারও চেষ্টা করছে যে, আমরা ডকুমেন্টস ফেরত নিতে বলেছি। আপনারা নেননি, এক্ষেত্রে আপনাদের দোষ। সোজা বাংলায় ভিক্টিম ব্লেমিং করার ট্রাই করছে আমাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, কোনো জবাবদিহিতা নেই। একের পর এক ঘটনা ঘটে গেছে। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক রেজাল্ট খারাপ করিয়ে দেওয়া, হুমকি দেওয়া থেকে শুরু করে সব করেছে। কিন্তু শেষমেষ ডিপার্টমেন্ট প্রায় ২০-৩০ জন শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ধ্বংস করে ফেলল। এজন্যই কি আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম?
এ বিষয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক কাজী রবিউল আলম বলেন, ঘটনাটি জানার পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। যাদের মার্কসিটের ফটোকপি নেই, তাদের বিভাগ থেকে সহযোগিতা করার আশ্বাসও দিয়েছি। আর এ বিষয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্তের জন্য কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে। কারণ অ্যাকাডেমিক কমিটির মিটিং এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিনি বলেন, ভর্তির কিছুদিন পর বিভাগে কাগজপত্রগুলো আসলে শিক্ষার্থীদের জানানো হয়, যেন তারা সেগুলো তুলে নেয়। অনেকে তুলে নিলেও কিছু সংখ্যক থেকে যায়। শিক্ষার্থীদেরও গাফিলতি আছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন