শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা
শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা
শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যার বিচার এবং ব্লক রেইড দিয়ে গণগ্রেফতারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা। পাশাপাশি অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে প্রতিবাদ র্যালি ও সংহতি সমাবেশে এসব দাবি জানান নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা।
সমাবেশে শিক্ষকদের হাতে ‘পুলিশের নির্যাতন বন্ধ করো’, ‘আটক শিক্ষার্থী-জনতার মুক্তি চাই, ‘আহত শিক্ষার্থী-জনতার সুচিকিৎসা চাই’, ‘কারফিউ তুলে নাও, ক্যাম্পাস খুলে দাও’, ‘ব্লক রেইড দিয়ে শিক্ষার্থী-জনতার হয়রানি ও গণগ্রেফতার বন্ধ করো’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
সমাবেশে শিক্ষকরা বলেন, ‘আমরা রাস্তায় থাকতে চাই না, ক্লাসে ফিরতে চাই। শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত মেনে নিন। শিক্ষার্থীরা এ দেশের হৃদয়ের স্পন্দন, তাদের ওপর আর গুলি চালাবেন না। প্রশাসনের ভাইয়েরা, এই আন্দোলনের সুফল আপনার সন্তানরাও নেবে। আপনারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করবেন না। মেধাবী শিক্ষার্থীদের হত্যার মাধ্যমে যে অভাব তৈরি হলো, তা পূরণ করবে কে, এতগুলো মায়ের কোল খালি হলো, তার অভাব পূরণ করবে কে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষকরা আরও বলেন, ‘আইনের চোখে সবাই সমান, অপরাধীদের শাস্তি অবশ্যই পেতেই হবে। আমাদের সোনার সন্তানদের নির্বিচারে মেরে ফেলা হয়েছে, এই বিচার কার কার কাছে দেবো আমরা। যে সরকার, যে গুণ্ডাবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে; তাদের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
এই রাষ্ট্র আজ বিচারহীন উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘সরকারি হিসাবে দেড়শত মানুষ মারা গেছে, তাদের অধিকাংশই শিশু-কিশোর। কি অপরাধ ছিল তাদের? তারা কি কোনও অপরাধ করেছে? আমরা একটু লক্ষ করলে দেখবো, একটা সময় পর্যন্ত তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল। বিভিন্ন সচেতন মহল আন্দোলনকে যৌক্তিক বলেছে। তাদের ওপর কেন এমন অমানবিক হত্যাযজ্ঞ চালানো হলো। আমরা এসব দেখে আর বসে থাকতে পারলাম না, তাদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রাস্তায় এসেছি।’
আমার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, আমরা কীভাবে ঘরে বসে থাকি উল্লেখ করে ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রাজীক মিয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দেশের স্পন্দন। তাদের থামিয়ে দিতে আর একটি গুলিও দয়া করে ছুড়বেন না। বাধ্য হয়ে তাদের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি আমরা। এই হত্যাকাণ্ডের অবশ্যই বিচার করতে হবে।’ এ সময় শিক্ষার্থীদের হতাহতের বর্ণনা গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই শিক্ষক।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনা-৭১-এর সামনে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা একে একে জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান থেকে একটি প্রতিবাদী র্যালি বের করেন তারা। র্যালিটি গোলচত্বর হয়ে এক কিলোমিটার প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলামসহ অনেকে। এতে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, সিনিয়র শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন