নতুন কারিকুলামে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস থামছেই না। যদিও এনসিটিবি চেয়ারম্যান ও শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্নফাঁস বিষয়টি মানতে নারাজ। তবে অভিভাবক ও অনেক শিক্ষক বিষয়টিকে প্রশ্নফাঁস বলেই ধরে নিচ্ছেন। কারণ পরীক্ষার আগের দিন রাতেই শিক্ষার্থীরা পরের দিনের পরীক্ষার প্রশ্ন হুবহু পেয়ে যাচ্ছে। ফলে মূল্যায়নের নামে তামাশা হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
অভিভাবকদের মতো নতুন চালু হওয়া মূল্যায়ন ব্যবস্থায় হতাশ শিক্ষকরাও। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে উদ্দেশ্যে এই কারিকুলাম তৈরি করেছে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে মনে করছেন তারা। মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য সুদূরপ্রসারী হলেও যে সিস্টেমে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে তাতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নতুন কিছু শেখার বদলে নকল শিখতেছে। আর আমাদের তা দেখতে হচ্ছে, যেটা খুবই দুঃখজনক।
মিরপুর-১৩ এলাকার একজন অভিভাবক সেলিনা রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা কেন হবে? প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? যদিও ফাঁস রোধ করা না-ই যায়, তাহলে পরীক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ করা উচিত। না হয়, ওপেন প্রশ্নই তৈরি করা হোক। তখন সেটা সবার জন্যই প্রযোজ্য হবে।
এমি মার্তিনেজকে বিশ্বসেরা গোলকিপার বললেন মেসিএমি মার্তিনেজকে বিশ্বসেরা গোলকিপার বললেন মেসি
তিনি আরও বলেন, বাচ্চারা এখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে মোবাইল নিয়ে শুধু ইউটিউব আর ফেসবুক ঘাটে। কখন প্রশ্ন আসবে। রাত জেগে থাকছে। এটা কী আদৌ ঠিক হচ্ছে? কেউ পাচ্ছে আবার কেউ পাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে তো বাচ্চাদের মূল্যায়ন সঠিকভাবে হবে না।
সেলিনা রহমান আরও বলেন, একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বলেছেন তারা যেন রাত ১২টার পর ইউটিউব দেখে। সেখানে প্রশ্ন পাওয়া যায়। শিক্ষকরাই যদি শিক্ষার্থীদের এমন কথা বলেন তাহলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তো প্রশ্ন তোলাই উচিত।
এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলার নামকরা এক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কী মূল্যায়ন করব সেটাই বোঝা কঠিন। কারণ শিক্ষার্থীরা ফেসবুক ও ইউটিউব কল্যাণে আগেই প্রশ্নসহ সমাধান পেয়ে যাচ্ছে। সেই সমাধান পরীক্ষায় খাতায় লিখে দিচ্ছে। এতে কার্যত শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ক্ষতি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আগে অন্তত আমরা অনেকগুলো বিষয় পড়িয়ে সেখান থেকে প্রশ্ন করতাম৷ শিক্ষার্থীরা তখন নানা বিষয় জেনে পরীক্ষা দিত। এতে অনেক কিছু আয়ত্ত্ব করতে পারত। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না। তাই আমরাও হতাশ।
নতুন কারিকুলামে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নে আজ ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি, সপ্তম শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি, অষ্টম শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নবম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার আগের রাতেই এসব শ্রেণির প্রশ্ন ইউটিউব ও ফেসবুকে সমাধানসহ ছড়িয়ে পড়ে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান (রুটিন দায়িত্ব) দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশ্ন বাহিরে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছি। যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশ্ন বাহিরে যাচ্ছে তা আমরা তদারকি করছি। তাদের বিরুদ্ধে অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন