নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় গতকাল বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন। এবারই প্রথম কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। এরপর তা স্কুলগুলোতে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষার আগের দিন গত মঙ্গলবার রাতে পাঠানো এই প্রশ্ন কিছু শিক্ষার্থীর হাতে চলে যায়। প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই প্রশ্নফাঁসে সামগ্রিক মূল্যায়ন কার্যক্রমে কোনো ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি হবে না বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান (রুটিন দায়িত্ব) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জরুরি নির্দেশনায় বলা হয়, প্রশ্নপত্রের আলোকে সমাধানও বাসায় বসেই শিখেছে শিক্ষার্থীরা। স্কুলে গিয়ে শুধু সেগুলো করে দিয়ে এসেছে তারা। এখানে প্রশ্নফাঁস হলেও সামগ্রিক ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নে কোনো সমস্যা হবে না। নির্দেশনায় শিক্ষকদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয় এনসিটিবির পক্ষ থেকে। মূল্যায়ন কার্যক্রমের মূল্যায়ন নির্দেশনাগুলো বিস্তারণের মতো এরকম স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এতে বলা হয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ এর আলোকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ২০২৪ সালের ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন ৩ জুলাই, ২০২৪ হতে সমগ্র দেশব্যাপী একসঙ্গে শুরু হয়েছে। এই ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের ‘মূল্যায়ন নির্দেশনা’ প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়নের আগের দিনে নৈপুণ্য অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিজস্ব আইডিতে পাঠানো হচ্ছে। এই ‘মূল্যায়ন নির্দেশনাসমূহ’ কোনো শিক্ষার্থী আগে থেকে জেনে গেলেও সামগ্রিক মূল্যায়ন কার্যক্রমে কোনো ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি হবে না, তারপরও পরীক্ষার হলে প্রবেশের পূর্বেই এই ‘মূল্যায়ন নির্দেশনাসমূহ’ কতিপয় প্রতিষ্ঠান প্রধান বিভিন্ন মহলের সঙ্গে শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। যার ফলে, কতিপয় অসাধু ব্যক্তি এবং সংস্থা এই ‘মূল্যায়ন নির্দেশনাসমূহ’ বিভিন্ন অসত্য, ভুল, অপ্রাসঙ্গিক এবং বিভ্রান্তিকর সমাধান ইউটিউব এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এই বিভ্রান্তিকর সমাধান শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের ব্যাপকভাবে বিভ্রান্ত করছে এবং মূল্যায়ন কার্যক্রম বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র নৈপুণ্য অ্যাপের মাধ্যমে আগের রাতে প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিজস্ব আইডিতে পাঠানো হচ্ছে। কোনো কোনো শিক্ষক তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। যা শিক্ষকতার নৈতিকতা বিরোধী কার্যক্রম এবং চরম অ-শিক্ষকসুলভ আচরণ। নৈপুণ্য অ্যাপস ট্রাকিং আওতায়। কোনো শিক্ষক যদি এ ধরনের কার্যক্রম করেন তাকে চিহ্নিত করা সম্ভব। কোনো শিক্ষক যদি এ ধরনের কার্যক্রম করেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া বলে।
দেখা গেছে, ষাণ্মাসিক মূল্যায়নের প্রশ্নপত্র মঙ্গলবারই হাতে পেয়েছেন শিক্ষকরা। তারা সেই প্রশ্নপত্র ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ, শিক্ষাবিষয়ক পেজ, শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের নামে চালানো ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন। প্রশ্নপত্র পেয়ে যাওয়ায় অনেক প্রাইভেট ও টিউশন শিক্ষক দ্রুত সেটির সমাধান করে ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
গতকাল প্রথমবারের মতো পাঁচ ঘণ্টার ষাণ্মাসিক মূল্যায়নে ষষ্ঠ শ্রেণিতে বাংলা, সপ্তমে ধর্ম, অষ্টমে জীবন ও জীবিকা এবং নবম শ্রেণিতে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের মূল্যায়ন করা হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে ২০ হাজার ৬৩৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয় বলে জানা গেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন