নতুন কারিকুলামে শুরু হয়েছে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা। তবে এই কারিকুলামের পরীক্ষায় প্রশ্ন সম্পর্কে ভালো ধারণা পায়নি শিক্ষার্থীরা। যা তাদেরকে বেশ দুশ্চিন্তা ও বিপাকে ফেলেছে। অন্যদিকে স্ব স্ব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অ্যাপস ও মেইলের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র প্রদান করায় ফাঁসের অভিযোগও উঠেছে। বিষয়টি অভিভাবকদের ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষাবীদ কুদরত-ই-খুদা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগের সৃজনশীল পদ্ধতি ভালো ছিল। সেটি শিক্ষকরা বুঝতে না পারার কারণেই পদ্ধতির পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে কারিকুলামে প্রশ্নপত্র আগেই অ্যাপস বা ইমেইলে দেওয়া ও ফাঁস হওয়া শিক্ষার্থীকে দুর্নীতিতে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে বিভ্রান্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীদের পড়ার আগ্রহ নষ্ট হচ্ছে। যা শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্নীতি ও দুর্দশাগ্রস্ত করা হচ্ছে। তাই সরকারের শিক্ষায় আর্দশ নীতিমালা তৈরি করা উচিত।
জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ আলোকে খুলনার ৯ উপজেলায় (কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, রূপসা, ফুলতলা, দিঘলিয়া ও তেরখাদা) অন্তত ৫০০ মাধ্যমিক পর্যায়ের মাদ্রাসা ও বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে গত বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৯ম শেণি পর্যন্ত ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে নতুন কারিকুলামের পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কারণ অভিযোগ উঠেছে প্রশ্ন সম্পর্কে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ভালো ধারণা দিতে পারেনি। এছাড়া প্রশ্নপত্র স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাপস ও মেইলে প্রশ্ন একদিন আগে পাঠিয়ে দেয় এনসিটিবি। এতে ডাউনলোড থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে দেওয়া পর্যন্ত বিড়ম্বনায় পড়তে হয় শিক্ষকদের। এছাড়া নানাভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসেরও অভিযোগ উঠেছে। যা অভিভাবকদের ভাবিয়ে তুলেছে। তারা ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।
খুলনা জিলা স্কুলের পরীক্ষার্থী তানভির ইসলাম দেশ রূপান্তরকে জানায়, প্রশ্ন সম্পর্কে আগে ভালো ধারণা পাওয়া যায়নি। পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তাও ছিল। ফলে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়েও বিপাকে পড়তে হয়েছে। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে বন্ধুদের কাছে শুনেছে এই শিক্ষার্থী।
মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষার্থী আরাফাত ইসলাম তামিম দেশ রূপান্তরকে জানান, প্রথম দিনে তাদের জীবন-জীবিকা বইয়ের পরীক্ষা ছিল। প্রশ্ন বুঝতে তার বেশ অসুবিধা হয়। তবে গ্রুপ করে দেওয়াতে সেটি অসুবিধা অনেকটা দূর হয়।
ডুমুরিয়া চুকনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিনতি কুন্ঠু জানান, অ্যাপসে আগেরদিন প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। ডাউনলোড হচ্ছিল না। পরে বিকাল ৫ টায় ডাউনলোড করা হয়। পরের দিন সকাল ৮টায় ফটোকপি করে সকাল ১০টায় পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে একদম গ্রামের স্কুলে ফটোকাপি মেশিন না থাকায় তারা বিপাকে পড়েছে বলে জানান তিনি।
নাসির শেখসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন সম্পর্কে ভালো ধারণা পায়নি। তারা জানতে পেরেছে ফেসবুকে প্রশ্নফাঁস হয়েছে। তাই পড়ালেখা বাদ দিয়ে ফেসবুকে প্রশ্ন খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এটা ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কার বিষয়। তারা আরও বলেন, পরীক্ষার আগেরদিন প্রশ্নপত্র পাঠানো এবং বিদ্যালয় বাইরের দোকান থেকে ফটোকপি করায় ফাঁসের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
খুলনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফারহানা নাজ বলেন, খুলনাতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। তবে প্রতি বিদ্যালয়ে পরীক্ষার কিছু নির্দেশনা ছিল। আগের পাঠ্যবই পড়ানো হয়েছে। তবে ২০দিন আগে কোন কোন অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসবে জানানো হয়। সেই অনুযায়ীই প্রশ্ন করা হয়েছে। সুতরাং দুশ্চিতার কিছু এতে নেই।
আজ বুধবার ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা, সপ্তম শ্রেণির ধর্ম, অষ্টম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা এবং নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরীক্ষায় লিখিত অংশের মূল্যায়ন ৬৫ ও দলীয় কার্যক্রমভিত্তিক অংশের মূল্যায়ন হবে ৩৫ মার্কে। এই ১০০ মার্কের মূল্যায়ন পাঁচ ঘণ্টায় শেষ করতে হয় শিক্ষার্থীদের।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন