জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ আলোকে আগামীকাল ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পাঁচ ঘণ্টার পরীক্ষায় বসতে হবে। এই পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। কারন পরীক্ষার প্রশ্ন কেমন হবে, কীভাবে খাতা মূল্যায়ন হবে সে বিষয়ে শিক্ষকদেরই পূর্ণাঙ্গ ধারণা নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামীকাল বুধবার ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা, সপ্তম শ্রেণির ধর্ম, অষ্টম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা এবং নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষায় লিখিত অংশের মূল্যায়ন ৬৫ ও দলীয় কার্যক্রমভিত্তিক অংশের মূল্যায়ন হবে ৩৫ মার্কে। এই ১০০ মার্কের মূল্যায়ন পাঁচ ঘণ্টায় শেষ করতে হবে শিক্ষার্থীদের। তবে নতুন এই পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ঢাকার নামকরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামীলের পরীক্ষার প্রশ্ন আজ দুপুর তিনটায় অনলাইনের মাধ্যমে হাতে পেয়েছেন তারা। প্রশ্ন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কাছে তা হস্তান্তর করা হয়। শিক্ষকরা সেই প্রশ্ন যাচাই বাচাই করে দেখেছেন। তারপর প্রশ্নগুলো আজই ফটোকপি করতে হবে। আগামীকাল সেই প্রশ্নই শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে।
আগামীকালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই প্রশ্নে পাঁচ ঘণ্টা লেখার মতো তেমন কিছু নেই। তবে আমরা আগামীকাল পরীক্ষা নিয়ে দেখতে চাই শিক্ষার্থীরা কীভাবে বিষয়গুলি উপস্থাপন করবে। তার ওপর ভিত্তি করে আগামীতে কিছু ভাবার থাকলে সেটা দেখা প্রয়োজন বলে মনে করি। মূলত এখন এনসিটিবি প্রশ্ন তৈরি করে আমাদের কাছে সরবরাহ করছে।’
এ বিষয়ে এক পরীক্ষার্থী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা যা পড়েছি তা আসবে কিনা সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কারণ শিক্ষকরাও আমাদের কাছে বিষয়টি ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারছেন না। কারণ তারাও নাকি এই পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন জানেন না। আগামীকাল পরীক্ষায় বসলে বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা মিলবে।
এদিকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা বিষয়ে আগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়ে হয়েছে। এতে বলা হয়-
১. মূল্যায়ন কার্যক্রম চলাকালে, অর্থাৎ ৩ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত নির্দিষ্ট দিবসে মূল্যায়ন কার্যক্রম ব্যতীত ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির কোনো শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।
২. প্রেরিত সময়সূচি অনুসারে নির্ধারিত দিনে একটি বিষয়েরই মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ নির্ধারিত বিষয়ের মূল্যায়ন কার্যক্রম নির্ধারিত দিনেই শেষ করতে হবে। পূর্বের মতো কোনো শ্রেণির একটি বিষয়ের মূল্যায়ন কার্যক্রম একাধিক দিনে সম্পন্ন করা যাবে না;
৩.বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন কার্যক্রম নির্ধারিত দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। তবে মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করে একটি মধ্যবর্তী বিরতি দেওয়া যেতে পারে।
৪. মূল্যায়ন কার্যক্রমে হাতে-কলমে কাজ এবং কার্যক্রমভিত্তিক লিখিত অংশ উভয় ধরনের কার্যক্রম আছে। হাতে-কলমে কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও লিখিত অংশের জন্য প্রয়োজনীয় খাতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহ করতে হবে।
৫. বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নে উপকরণে বৈচিত্র্য রয়েছে, যা বিস্তারিত মূল্যায়ন নির্দেশিকায় উল্লেখ করা থাকবে। মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক উপকরণ সরবরাহের জন্য সাধারণ নির্দেশনাগুলো হলো-
১. উপকরণ সরবরাহের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, কোনো উপকরণই যেন ব্যয়বহুল না হয়। রিসাইকেল, রিউইজ, আপসাইকেল উপকরণ ব্যবহার করতে হবে।
২. অভিভাবক বা শিক্ষার্থীকে উপকরণ সরবরাহের জন্য কোনো নির্দেশনা প্রদান করা যাবে না;
৩. মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের নিকট থেকে সীমিত পরিমাণে মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা ফি নেওয়া যেতে পারে।
৪. মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মূল্যায়ন নির্দেশনা মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরুর পূর্বের দিন নৈপুণ্য অ্যাপের প্রতিষ্ঠান ড্যাশবোর্ড (master.noipunno.gov.bd) এবং সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন নির্দেশনা মূল্যায়ন কার্যক্রমের সময়সূচি অনুসারে নির্ধারিত দিনের পূর্বের দিন পাওয়া যাবে।
৫. মূল্যায়ন নির্দেশনায় শিক্ষকের জন্য করণীয়, শিক্ষার্থীদের জন্য করণীয়, মূল্যায়নপত্র, শিক্ষকের জন্য পর্যবেক্ষণ চেকলিস্ট ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক উপকরণের বিবরণ থাকবে।
৬. ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা শেষে শিক্ষার্থীর অর্জিত পারদর্শিতার রেকর্ডের ভিত্তিতে নৈপুণ্য অ্যাপে পারদর্শিতার নির্দেশক (পিআই) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইনপুট দিতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন