দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। শিক্ষকদের আন্দোলনে ক্লাস-পরীক্ষাসহ যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয় অচলাবস্থায় পড়েছে। এবার শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা একযোগে আন্দোলনে নেমেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান বর্জন করে শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন। অন্য ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন আহুত আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করে ঘোষিত ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছে। শিক্ষক নেতারা তাদের আন্দোলনে নামার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, ইস্কন চেতনাধারী এই শিক্ষামন্ত্রী দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অধিকারের ক্ষেত্রে কোনো ভুমিকাই রাখতে পারছেন না। শিক্ষামন্ত্রীর অদক্ষতা, অদূরদর্শিতা এবং বালখিল্য কথাবার্তা শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিচ্ছে।
অন্যদিকে ঈদের ছুটির পর সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে রাজপথে নেমেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ও শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মহাসড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
শিক্ষকদের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ করে কর্মবিরতী, মানববন্ধন কর্মসূচি এবং শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিরের দাবিতে আন্দোলনে ৩৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যাল অচল হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আর শিক্ষকরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মসূচি : সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিমকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস- পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রেখেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের এ আন্দোলনে সর্বাত্মক সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল, অনুষদ, ইনস্টিটিউট, বিভাগীয় অফিস এমনকি মেডিক্যাল সেন্টারের সেবা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। ফলে এক অচলাবস্থা বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
ধারাবাহিক আন্দোলনেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস না পেয়ে গত রোববার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের মোর্চা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেয়৷ তাঁদের দাবি তিনটি হলো ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।
শিক্ষক সমিতির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, গতকাল সকাল থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিন সকাল ১২ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জিনাত হুদাসহ শতাধিক শিক্ষক। অবস্থান কর্মসূচিতে তারা সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবি জানান।
শিক্ষক সমিতির এ কর্মবিরতির ফলে কার্যতই বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অ্যাকাডিক ও দাফতরিক কার্যাবলী। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি থেকে শুরু করে মেডিকেল সেন্টার সবই বন্ধ ছিল। অনুষদ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর আগে গত রোববার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলো স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া ইনকিলাবকে বলেন, অসুস্থতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করতে পারেননি। তিনি আরো জানান এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আশ্বাস পাওয়া যায়নি। ফলে এ আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের জন্য চলমান থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে কথা বললে তারাও বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে।
সর্বাত্মক কর্মবিরতির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবারের অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জিনাত হুদা বলেন, আধুনিক ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য, প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্যই আমাদের এই আন্দোলন। এই আন্দোলন ততক্ষণ পর্যন্ত চলমান থাকবে যতক্ষণ না ঐ বৈষম্যমূলক প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার না করা হবে। সেই সাথে ২০১৫ সালে আমাদের যে সুপারগ্রেড দেওয়ার কথা ছিলো সেটা চালু করতে হবে। আমাদের জন্য স্বতন্ত্র পে স্কেল চালু করতে হবে। বিভিন্ন আইন দেখিয়ে আমাদেরকে এসব দেওয়া হচ্ছে না এবং আমাদের দাবিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই শিক্ষক নেতা আরও বলেন, শিক্ষক সমাজ জ্ঞানী প্রজ্ঞাবান, নির্ভীক, নির্লোভ হওয়ায় সকল স্বৈরাচাররা আমাদেরকে ভয় পায়, হোক সেটা সামরিক কিংবা বেসামরিক। কত টাকা বেতন-বোনাস পাই আমরা সেটা কখনো হিসাব করি না। তাহলে কোন হিসেবে আমাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন? কোন হিসেবে আমাদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ থেকে ৫৯ করার চিন্তা করেন? কোন হিসেবে আমাদের নমিনি নির্বাচনের ক্ষেত্র সংকুচিত করেন? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। নাহলে এই পেনশন স্কিম কখনোই সর্বজনীন হবে না।
অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছি। সারা দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এতে একাত্মতা ঘোষণা করে কর্মবিরতি শুরু করেছেন৷ আমরা সরকারের কাছে ৩টি দাবি জানিয়েছি। বৈষম্যমূলক ও মর্যাদাহানিকর প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন, প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২০ মে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। তার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে ২৬ মে বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এরপর ২৮ মে দুই ঘন্টা এবং ২৫-২৭ জুন তিনদিন সারাদেশে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরবর্তীতে গত রোববার ৩০ জুন পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করা হয় এবং গতকাল থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন : অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহারসহ তিন দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষকেরা।
তাদেব দাবিগুলো হলো- অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন করা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মোতাহার হোসেন বলেন, আমাদের তিনদফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাবো এবং ক্লাসে ফিরবো না। আমরা গত তিনমাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। প্রথমে মানববন্ধন করেছি, এক ঘণ্টা কর্মবিরতি দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি দিয়েছি। পরে অর্ধদিবস, পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছি তখন পরীক্ষা সমুহ চলমান ছিল। কিন্তু আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্য আমরা আন্দোলন করছি। কারণ আমাদের যেটুকু সুবিধা ছিল সেটুকু বাতিল হলে এই পেশায় আর মেধাবী শিক্ষার্থীরা আসবে না। মেধাবীরা শিক্ষকতায় না আসলে জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
এদিকে সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিন সকাল থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের নিচে একটি প্রতিবাদ সমাবেশও করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতি।
অফিসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম মিয়া বলেন, একই দেশে দুই ধরনের পেনশননীতি চলতে পারে না। আমরা এই পেনশন প্রথা বাতিল করে পূর্বের প্রথা বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো।›
অচল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ‘প্রত্যয়’ স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে সমর্থন জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একযোগে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ থাকে। এতে ভোগান্তিতে ভোগান্তিতে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কর্মচারীদের কর্মবিরতির কারণে দাপ্তরিক কাজ করতে এসেও হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে অনেককে।
এদিন সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা নিজেদের ক্লাসকার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন। এসময় শিক্ষকরা চবি শিক্ষক সমিতির অফিস ও কর্মকর্তারা চবি অফিসার সমিতির অফিসে অবস্থান নিতে দেখা গেছে৷ এছাড়া, সকাল থেকে কাজে যোগ দেননি কর্মচারীরাও। বেলা বারোটা থেকে প্রশাসননিক ভবনের সাননে কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়ন আলাদা আলাদা ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
জবির শিক্ষকদের কর্মবিরতি : একই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবি অনুযায়ী পূর্নদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। গতকাল সোমবার জবি শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে এ কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। দুপুর বারোটা থেকে একটা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেন তারা। শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এই কর্মবিরতি আগামী ৩জুলাই পযন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাবি শিক্ষার্থীদের কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি : প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল সংক্রান্ত আদালতের রায় প্রত্যাহার ও ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে লাগাতার আন্দোলনের সূচনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৩০ শতাংশ মুক্তিযুদ্ধ কোটা বাতিল চেয়ে বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, মলচত্বর, ভিসি চত্বর, টিএসসি হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে একটি বড় সমাবেশে করেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই কর্মসূচি আয়োজিত হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুর আরেকবার”, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, “কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’’- ইত্যাদি স্লোগান দেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে)। এ ছাড়া সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
কোটা বাতিল চেয়ে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের শিক্ষার্থী সারজিস আলম। তিনি বলেন, বর্তমানে শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটার পাশাপাশি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও গলাকাটা পোষ্য কোটা দেওয়া হয়েছে। এই পৌষ্য কোটার ফলে কর্মচারী শ্রেণিকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। একটি পরিবারের একজন যেখানে চাকরিতে রয়েছে সেখানে অন্যদেরও সেই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে৷ অথচ আমার আপনার বাবা-মা যারা শ্রমজীবী, কৃষক, কর্মজীবী খেটে খাওয়া মানুষ তাদেরকে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, স্বাধীন এই বাংলায় কোটা বৈষম্যের কোন স্থান নাই। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বৈষম্যমূলক, নিপীড়নমূলক, নির্যাতনমূলক কোটা ব্যবস্থার কবর দিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী যখন সংসদে দাঁড়িয়ে, আপামর ছাত্র জনতার কথা বিবেচনা করে তিনি কোটা বাতিল করেছিলেন সেখানে হাইকোর্ট থেকে কিভাবে সেই পরিপত্র আবার বাতিল করা হয় সেটা আমরা জানি না। আজকে সারাদেশের ছাত্রসমাজ একযোগে আন্দোলন শুরু করেছে। এই কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
এ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ঢাবি শিক্ষার্থী আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম ৩০ জুনের মধ্যে অবশ্যই সরকারকে হাইকোর্ট থেকে ‹১৮ এর পরিপত্র বাতিল করা রায়ের স্থগিতাদেশ আনতে হবে এবং সকল ধরণের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় রেখে কোটাকে সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সরকার আমাদের দাবি আমলে নেয়নি। যার কারণে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা আজ থেকে অলআউট আন্দোলনে নেমেছি। যতদিন আমাদের দাবি আদায় না হবে, আমরা রাজপথ ছাড়বো না, শ্রেণিকক্ষে ফিরবো না। প্রয়োজনে এদেশের শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে সারাদেশ অচল করে দিবো। সরকারকে যেকোন উপায়ে আমরা বাধ্য করবো, দাবিতে কোন আপোষ হবে না। মাসুদ আরো বলেন, পাশাপাশি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছি এবং দাবি জানাচ্ছি আগামীকাল সকালের মধ্যে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী ও মেডিকেল সার্ভিস সচল করতে হবে। না হয় তা সচল করার দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা নিজ হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ : ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দাবিতে ছাত্র সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এই ছাত্র সমাবেশ করেন তারা। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো, ২০১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে, সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শুন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আগামী ৪ জুলাই কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা না করা হলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করা হবে হুশিয়ারি দেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম। তিনি বলেন, ‘বৈষম্য দূর করার জন্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। পাকিস্তান যে বৈষম্য চাপিয়ে দিয়েছিল সেই বৈষম্য দূর করার জন্য লাখ লাখ জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই বৈষম্য কোটার মাধ্যমে আবার ফিরিয়ে এনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে। আগামী ৪ জুলাই এই কোটা বাতিল না হলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। এই বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে দেওয়া হবে।’
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। এরপর ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রতীকী অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডেইরি ফার্ম থেকে সিএন্ডবি পর্যন্ত যানযটের সৃষ্টি হয়।
চবিতে বৃষ্টিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : বৃষ্টিতে ভিজে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল ও ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাধারণত শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন।
রাবি ক্যাম্পাস উত্তাল : কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে রাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এর মধ্যে ‘কোটা প্রথায় নিয়োগ পেলে দুর্নীতি বাড়ে প্রশাসনে’, ‘মেধাবীদের যাচাই করো কোটা পদ্ধতি বাতিল করো’, ‘মেধাবীদের কান্না আর না আর না’ ‘১৮ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ ইত্যাদি। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন।
স্টুডেন্টস রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে এসেও সাম্য প্রতিষ্ঠা হয়নি। আমাদের দেশে একজন কোটাধারী শিক্ষার্থী তার জীবদ্দশায় একাধিকবার কোটার সুবিধা পান। এই পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া মুহিবের সঞ্চালনায় রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান বলেন, কোটা সম্পূর্ণ বাতিল হোক, সেটি আমাদের দাবি নয়। এদেশের স্বাধীনতায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অতুলনীয়। তবে তাই বলে তাদের জন্য বৃহৎ পরিমাণ কোটা রাখার কোনো মানে হয় না। একজন কোটাধারী একাধিকবার কোটা সুবিধা ভোগ করায় কোটাবিহীন শিক্ষার্থীরা সর্বক্ষেত্রেই তাদের থেকে পিছিয়ে থাকে। আমরা কোটা বাতিল চাই না, কোটা পদ্ধতির সংস্কার চাই। চাকরিতে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হোক। সেই সঙ্গে কোটা সুবিধা ভোগকারী কোনো ব্যক্তি যেন জীবনে যেকোনো একটি ক্ষেত্রে কোটার সুবিধা নিতে পারেন। এসময় কর্মসূচিতে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
জবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : এদিকে চলমান কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে ছাত্রছাত্রীরা ৪ দফা দাবি জানান। গতকাল সোমবার সকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে ক্যাম্পাসে প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি রায়সাহেব মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
এসময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবিগুলো পেশ করেন। ১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। ২. ‘১৮-এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। ৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। ৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘চাকরিতে কোটা, মানি না, মানবো না’, শেখ হাসিনার বাংলায়/শেখ মুজিবের বাংলায়, কোটার ঠাঁই নাই’, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, কোটার ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে কোটা প্রথা কবর দে’, ‘কোটা পদ্ধতি নিপাত যাক মেধাবীরা মুক্তি পাক’ সহ নানা স্লোগান দেন।
ইবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি : অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় গতকাল থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। তাই সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকছেন শিক্ষকরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে, প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মবিরতি পালন করছেন কর্মকর্তারা। এসময় কর্মকর্তাদের সাথে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন সহায়ক কর্মচারীরা। অন্যদিকে অনুষদ ভবনের নিচতলায় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে অবস্থান কর্মবিরতি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এসময় সংগঠনটির সভাপতি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মামুনুর রহমানের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষকরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, বৈষম্যমূলক ও মর্যাদাহানিকর প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ সর্বাত্মক কর্মবিরতি তারা চালিয়ে যাবেন।
কুবিতে শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন : অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনে কর্মবিরতি এবং কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.মো. আসাদুজ্জামানের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল সোমবার (১জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি এবং ২৫ তম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক সমিতি। এর আগে ৩০ জুন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষাসহ সকল ধরণের কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড.আবু তাহের বলেন, এ উপাচার্য আসার পর থেকে শিক্ষকরা বৈষম্যমূলক আচরণে শিকার হয়েছে। দীর্ঘ দুই বছর ধরে করে যাওয়া উপাচার্যের অনিয়ম, দুর্নীতি ও বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ করতে গেলে গত ২৮ এপ্রিল উপাচার্য ও ট্রেজারার নেতৃত্বে বহিরাগত ও অছাত্রদের দিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলা করা হয়। এ হামলায় উপাচার্য নিজেও জড়ায়। উপাচার্য পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আমরা আন্দোলন চালিয় যাবো যতদিন পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ না করেন। এছাড়াও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন তিনি।
শিক্ষক সমিতির সহ সভাপতি কাজী কামাল উদ্দিন বলেন, দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এক দফা আন্দোলন চলবে। তিনি যে একজন দুর্নীতিবাজ এটা বিভিন্নভাবে প্রমাণিত। ইনক্রিমেন্ট চুরি করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনৈতিকভাবে সুবিধা নিয়েছেন। আত্মীয় নিয়োগ দেওয়ার একটা কল রেকড়ও ফাঁস হয়েছে। এছাড়াও আইনের লঙ্ঘন করে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। অবৈধ নিয়োগ বন্ধের জন্য আমরা আদালতে রিট পর্যন্ত করেছিলাম কিন্তু ওনি ওনার পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়েছেন। সুতরাং এই দুর্নীতিবাজ উপাচার্য যতদিন থাকবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির আখড়া আরও বেশি শক্তিশালী হবে। উপাচার্য নিজেই কনুই দিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে ওনি একজন সন্ত্রাসী উপাচার্য। ওনার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমরা শিক্ষক সমিতি আন্দোলন করে যাবো।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন