দুই সন্তানের জনক বাবুল শেখ। চাকরির১৩ বছরে কবে পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটিয়েছেন মনে করতে পারেন না। বছর ঘুরে ঈদ আসে। আনন্দে মেতে ওঠে প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু তাদের কাছে যেন সে আনন্দের ছটা পৌঁছে না। খানিকটা চাপা কষ্টেই পালিত হয় তাদের ঈদ।
বাবুল শেখ ১৩ বছর ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নিরাপত্তা কর্মীর কাজ করছেন। কথা বলে জানা যায় ঈদ নিয়ে তার স্মৃতি, ভাবনা পরিকল্পনা, ভালো লাগা বা খারাপ লাগা। তখনই বললেন এসব কথা।
তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে না পারাটা আসলেই কষ্টের। সবারই তো পরিবার থাকে। সবারই তো সখ আল্লাদ থাকে। এ বিষয়টা আমি বলে প্রকাশ করতে পারব না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালনের স্বার্থে কিছু করার থাকে না আমাদের।
রাত পোহালেই ঈদের আনন্দ। এরই মধ্যে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। সোমবার (১৭ জুন) উদযাপিত হবে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল আযহা। তাই আপনজনদের সঙ্গে এ ঈদ আনন্দকে ভাগাভাগি করতে যার যার গন্তব্যে ছুটে চলেছে সবাই। এ আনন্দঘন মুহুর্তটা বরাবরের মতোই যেন চিরাচরিত চিত্র। তবে চিরাচরিত এ চিত্রের বিপরীত চিত্রও আছে, যা হয়তো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না।
আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই আছে, যাদের ঈদ আছে কিন্তু আনন্দ নেই। পরিবার আছে কিন্তু পরিবারের কাছে যাওয়ার ব্যস্ততা নেই। পরিবারের কাছে যাওয়ার ফুরসতই নেই। অথচ একই সমাজে বসবাস করেও এদিনে আমরা ঠিকই মেতে উঠব ঈদ আনন্দে। তবে বাবুল শেখদের ঈদের আনন্দ ক্যাম্পাসের সবকিছু সুরক্ষিত রাখাতেই।
অতীতের স্মৃতিচারণ করে বাবুল শেখ বলছিলেন, তিনি আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সেখানে একটু কষ্ট হলেও দুই ঈদ পরিবারের সঙ্গে খুব আনন্দে কাটাতে পারতেন। সুযোগ-সুবিধা ও চাকরির নিরাপত্তার কথা ভেবে চাকরি পরিবর্তন করলেও ঈদ আনন্দ নিরাপত্তার কাঁটাতারে আবদ্ধ হয়ে গেছে তার। এখানে চাকরির নিরাপত্তা পেয়েছেন, তবে আনন্দের নিরাপত্তাটুকু পাননি।
দেশের আর কোনও চাকরি এমন আছে কিনা জানা নেই বাবুল শেখের। বছরে দুই ঈদেই দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের। ছুটির নিয়ম নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। বাবুল বলেন, যেহেতু আমরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার চাকরি করি, তাই কাউকে না কাউকে এ দায়িত্ব পালন করতেই হবে। কিন্তু দুই ঈদে আমাদের মধ্যে যদি ছুটি ভাগ করে দিয়ে একটা ঈদ পরিবারের সঙ্গে কাটানোর ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে একটা ঈদ হলেও পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারতাম। এদিনে যদি কেউ সাপ্তাহিক ছুটি পেয়ে যাই তাহলে সেটার মতো আনন্দের ব্যাপার আর নেই।
ঈদ ভাতা নিয়ে তিনি বলেন, ঈদে আমাদের একটা বোনাস দেওয়া হয়, যা আমাদের পরিবারের সাথে ঈদ কাটাতে না পারার কষ্ট কিছুটা হলেও ভুলিয়ে দেয়। তখন নিজের কাজের প্রতি দায়িত্ব-অনুভূতিও বেড়ে যায়। এইতো গত ঈদে যে বোনাস পেয়েছিলাম, তা দিয়ে মেয়েকে একটা খাট কিনে দিয়েছি। এটাই আমার ঈদ আনন্দ।
ঈদের দিনে দায়িত্বরত সবাই মিলে আলাদা কোনো ভোজের আয়োজন করেন কিনা- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের দিন শুধু ঈদের নামাজ পড়ে এসে আবার দায়িত্ব পালন করতে হয়। আলাদাভাবে আয়োজন করার কোনো সুযোগ নেই।
বাবুল শেখ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি ঈদের এ দিনগুলোতে ছুটি সমন্বয় করে সবাইকে পালাক্রমে ছুটির ব্যবস্থা করে দিতো, তাহলে সবাই ঈদ আনন্দটা আপনজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারতো। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের মানবিক দিক বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন