ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ফুল না দেওয়ায় ওই স্কুলের শিক্ষককে মারধর করে আহত করার অভিযোগ উঠেছে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় কপালেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ের এক অভিভাবক সদস্য ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। শনিবার (৮ জুন) বিকেলে কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের কপালেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ে মিটিং চলাকালে ইউএনওর সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক (৪৪) কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি কপালেশ্বর গ্রামের ফাইজ উদ্দিন পালোয়ানের ছেলে এবং কপালেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক। এ ঘটনায় শিক্ষক বাদী হয়ে ওইদিন রাত ১২টার পর প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে কাপাসিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত বিল্লাল হোসেন (৪২) উপজেলর সোহাগপুর গ্রামের আব্দুল হাই হারুর ছেলে এবং কপালেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য। অপর সহযোগীরা হলো একই উপজেলার নামিলা গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (৪৫), কপালেশ্বর গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে সোহেল রানা সাহেল (৪২), মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান (৪৪) এবং মৃত গিয়াস উদ্দিন মাঝির ছেলে নাসির উদ্দিন রবিন (৪১)।
কপালেশ্বর উচ্চবিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম লুৎফর রহমান জানান, সভাপতি হিসেবে আমি ফুল প্রত্যাশা করিনি। তারপরও আমার সামনে অভিভাবক সদস্য বিল্লাল হোসেন সিনিয়র শিক্ষক মোজাম্মেল হককে পিটিয়ে আহত করেছে। পরে আমি দু’পক্ষকে নিবৃত করার চেষ্টা করে থামাতে না পেরে কাপাসিয়া থান পুলিশের সহযোগিতায় পরিবেশ শান্ত করেছি।
কাপাসিয়ার কপালেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসাইন জানান, স্কুলের অভিভাবক সদস্য বিল্লাল হোসেন আমাকে বলেছিলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) জন্য ফুলের ব্যবস্থা করতে। আমি বলেছি, ইউএনও স্যারকে উপজেলায় ফুল দেওয়া হয়েছে। এরপরও ফুল দিতে চাপ দিলে আমি বুঝানোর চেষ্টা করেছি। শনিবার স্কুলে মিটিং চলাকালে বিল্লাল হোসেন ইউএনও স্যারের সামনে আমাকে গালি দেয়। শিক্ষক মোজাম্মেল হক এর প্রতিবাদ করে। এ সময় বিল্লাল হোসেন, সাবেক সভাপতি ও তার লোকজন শিক্ষক মোজাম্মেল হককে মারধর করে আহত করে।
আহত শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক জানান, শনিবার দুপুরের পরে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইউএনও এ কে এম লুৎফর রহমানের উপস্থিতিতে ম্যানেজিং কমিটির মিটিং চলছিল। মিটিংয়ে অভিভাবক সদস্য বিল্লাল হোসেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসাইনকে গালি দেয়। আমি এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে বিল্লাল হোসেন ও তার চারজন সহযোগী আমাকে আহত করে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই বিল্লাল হোসেনের সহযোগী অজ্ঞাতনামা ৩৫-৪০ জন সন্ত্রাসী বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে প্রবেশ করে আমাকেসহ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসাইন ও ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদেরকে সুযোগে পেলে যে কোন সময় উচিত শিক্ষা দেওয়ার হুমকি দেয়। তাদের হুমকি আহত শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
অভিযুক্ত কপালেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বিল্লাল হোসেন বলেন, আমি মারধর করিনি। ইউএনওকে ফুল দিতে বলেছিলাম। প্রধান শিক্ষক ফুলের ব্যবস্থা করেননি। আমি এর প্রতিবাদ করায় শিক্ষক মোজাম্মেল হক আমাকে মা-বাবা তুলে গালিগালাজ শুরু করেন। এতে আমি তাঁর হাতে শুধু ধাক্কা দিয়েছি। মারধরের বিষয়টি অতিরঞ্জিত।
কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান বলেন, যারা শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া দরকার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন