আমাদের আশাপাশে প্রকৃতি অত্যন্ত উপকারী কিছু সবজির ডালি সাজিয়ে দিয়েছে। এসব সবজি নিয়মিত খেলেই রোগ-বালাই কাছে ঘেঁষার সাহস পায় না। এই উপকারী সবজির তালিকায় কিন্তু প্রথমের দিকেই নাম আসে কাঁচকলার।
কাঁচকলার রয়েছে একাধিক গুণ। এতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবারের ভাণ্ডার। এমনকি বিভিন্ন ধরনের উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও মজুত রয়েছে এই কলায়। তাই প্রায়ই এই কলা খেলে একাধিক ক্রনিক অসুখ পিছু ছাড়ানো যায়।
তবে মুশকিল হলো, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এই সবজি পছন্দ করেন না। তারা কাঁচকলা দেখলেই মুখ সিঁটকান। বাড়িতে কাঁচকলার তরকারি রান্না হলে বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে খান। কিন্তু কিছুতেই কাঁচকলা মুখে তুলে দেখেন না। এই কারণেই একটি অত্যন্ত উপকারী সবজির পুষ্টিগুণ থেকে তারা বঞ্চিত হন।
এখন প্রশ্ন হলো, আপনিও কি সেই দলেই পড়েন নাকি? উত্তর হ্যাঁ হলে আজই সাবধান হয়ে কাঁচকলার একাধিক গুণ সম্পর্কে জেনে নিন। তারপর নিয়মিত এই সবজি খাওয়া চালু করুন। আশা করছি হাতেনাতে উপকার পাবেন।
প্রেশার থাকে নিয়ন্ত্রণে
ব্লাড প্রেশারের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর প্রতিদিনের ডায়েটে কাঁচকলা থাকা দরকার। এতে রয়েছে পটাশিয়ামের ভাণ্ডার। এই খনিজ রক্তনালীকে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। ফলে ব্লাড প্রেশার কমে। তাই রক্তচাপ বেশি থাকলে অবশ্যই এই সবজি নিয়মিত পাতে রাখার চেষ্টা করুন।
তবে শুধু ব্লাডপ্রেশারই নয়, হার্টের খেয়াল রাখার কাজেও অত্যন্ত কার্যকরী কাঁচকলা। এতে উপস্থিত উপকারী উপাদান হার্টের রক্তনালীতে প্লাক বা নোংরা জমতে দেয় না। ফলে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
সুগার কমাতেও সিদ্ধহস্ত
শেষ কয়েক দশকে ভারতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই নিয়েই চিন্তায় রয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ ব্লাড সুগার অসুখটিকে সঠিক সময়ে বাগে না আনতে পারলে একাধিক অঙ্গের ক্ষতি হয়।
তাই যেভাবেই হোক সুগার কমাতে হবে। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে কাঁচকলা। এই কলার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম। ফলে দেহে ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কমে। তাই সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে নিয়মিত কাঁচকলা খেতে ভুলবেন না যেন।
তরতরিয়ে কমবে ওজন
ওজন বেশি থাকাটা কোনো কাজের কথা নয়। এই ভুলের ফাঁদে পা দিলে শরীরের পিছু নিতে পারে একাধিক শারীরিক সমস্যা। তাই সুস্থ থাকতে ঝটপট ওজন কমিয়ে ফেলাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করবে কাঁচকলা।
কারণ এই কাঁকলায় রয়েছে ফাইবারের ভাণ্ডার, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখার কাজে সিদ্ধহস্ত। এমনকি এই উপাদানের গুণে বাড়ে বিপাকের হারও। মূলত এই দুই কারণেই নিয়মিত কাঁচকলা খেলে তরতরিয়ে কমবে ওজন।
বিপাকের হার বৃদ্ধি করে
হাই প্রেশার, কোলেস্টেরল, ইউরিক অ্যাসিড ও ডায়াবেটিসের মতো অসুখগুলোর মধ্যে একটা বিষয়ের মিল রয়েছে। তা হলো, এসব অসুখগুলোই বিপাকীয় সমস্যা। এক্ষেত্রে মেটাবলিজমের গতির তারতম্যের জন্যই এই ধরনের সমস্যা পিছু নেয়।
তবে কাঁচ কলায় রয়েছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি৬। এই দুই ভিটামিন কিন্তু একত্রে মিলে বিপাকের হারকে স্বাভাবিকের গণ্ডিতে বেঁধে রাখে। এই কারণে সহজেই একাধিক ক্রনিক অসুখের ফাঁদ এড়ানো যায়।
ইলেকট্রোলাইটস ব্যালেন্স ফেরায়
কাঁচকলা কিন্তু শরীরে ইলেকট্রোলাইটস ব্যালেন্স ফেরাতে পারে। আসলে এতে রয়েছে খনিজের ভাণ্ডার। এই সব খনিজগুলোই দেহের ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য ফেরায়। অত্যধিক গরমে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যায় ইলেকট্রোলাইটস। ফলে হিট স্ট্রোক ও হিট এক্সহউশনের মতো সমস্যায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
তাই এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে চাইলে আগেভাগেই কাঁচকলার তরকারি খাওয়া চালু করে দিন। এতেই সুস্থ থাকতে পারবেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এই ভিটামিন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সিদ্ধহস্ত। ইমিউনিটি তুঙ্গে থাকলে হেলায় হারানো যায় কয়েকটি জটিল সংক্রামক অসুখকে। জ্বর, সর্দি, কাশির মতো সমস্যা আর সহজে কাহিল করতে পারে না। তাই নিয়মিত কাঁচকলার পদ পাতে রাখার চেষ্টা করুন।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন