জঙ্গিতত্ত্ব ফেরি করে ভারতসহ ইসলামবিদ্বেষী আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সমর্থনে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর অবৈধ ফ্যাসিস্ট শাসন ধরে রাখে গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে উৎখাত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া দিল্লির এই সেবাদাসীকে পুনর্বসানে এবার সেই জঙ্গি খোঁজার মিশনে নেমেছে তারই দোসররা।
ভারতের মদদে দেশে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়ে এবার সেই পুরনো ‘জঙ্গি ব্যবসায়’ নামতে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী দোসরদের। সেইসাথে আধিপত্যবাদী ভারতকেও বাংলাদেশে জঙ্গি কানেকশন খুঁজতে তৎপর দেখা যাচ্ছে। এসবই একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি যশোর জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় বার্ষিক প্রতিযোগিতায় ছাত্রদের পারফরম্যান্সের একটি ভিডিওকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সমাবেশ বা জিহাদের আহ্বান হিসেবে হিসেবে প্রপাগাণ্ডা চালায় ফ্যাসিবাদের দোসর ও ভারতীয় এজেন্টরা। হইচই ফেলে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
অন্যদিকে, ভারতেও নিরীহ মুসলিমদের আটক করে জঙ্গি সাজিয়ে বাংলাদেশের সাথে কানেকশ খুঁজে বের করার ষড়যন্ত্রে নেমেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। শুক্রবার ভারতীয় মিডিয়ায় বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও কেরালা থেকে আনসারুল্লা বাংলার আট জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ।
পুলিশের পক্ষে দাবি করা হয়, শিলিগুড়ি করিডর 'চিকেন'স নেক'-এ নাশকতা চালানোই নাকি এই জঙ্গিদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া ভারতের নাগরিক মিনারুল একাধিকবার বাংলাদেশে আসে। সেখানে গিয়ে সে একাধিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
মূলত আওয়ামী দোসরদের জঙ্গি খোঁজা ও ভারতীয় পুলিশের বাংলাদেশের সঙ্গে জঙ্গি কানেকশন বের করাকে একই সূত্রে গাঁথা মনে করছেন সচেতন মহল।
খুনি হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, ভারতে নির্বাসিত বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন, শাহবাগী নাস্তিক ইমরান এইচ সরকারসহ পতিত স্বৈরাচারের ফেসবুক যোদ্ধারা বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র প্রমাণে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশে যে কোনো কিছুতেই এখন তারা জঙ্গিবাদের উত্থান খুঁজে পাচ্ছে। সীমান্তের ওপারে ভারতীয় হলুদ মিডিয়া তো আছেই।
রক্তচোষা হাসিনাকে পুনর্বাসন করতে পুত্র জয় জঙ্গি মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেই সাথে ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিতর্কিত তসলিমা বাংলাদেশে জঙ্গি কানেকশান খুঁজছেন। যশোরে গত ১৭ ডিসেম্বর বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেমন খুশি তেমন সাজোর একটি চিত্র ভাইরাল করে জঙ্গি কানেকশন দাবি করা হচ্ছে। অথচ ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা বলেছেন, বাংলাদেশে ‘জঙ্গিবাদের উত্থান’ দাবি করা ভিডিওটি গুজব।
ফ্যাসিবাদের দোসর ভারতীয় এজেন্টরা জঙ্গিবাদের উত্থান প্রমাণে ইসলামি অনুষ্ঠান, সমাবেশ, মাহফিল এবং মাদরাসাগুলোকে বিতর্কিতভাবে তুলে ধরতে ওৎ পেতে রয়েছে। যেমন খুশি তেমন সাজো অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও নিয়ে তোলপাড় ফেলে দিয়ে তারা সেটারই প্রমাণ দিয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সাথে স্বাভাবিক বাণিজ্য বিনিময়কেও জঙ্গিবাদের উত্থান হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে দিল্লির সেবাদাসরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে র্যাব এবং পুলিশ নিয়মিত জঙ্গি নাটক মঞ্চস্হ করত। প্রধানত: গ্রামের দরিদ্র, অসহায় মানুষদের ধরে এনে নারী-শিশুসহ বোমা মেরে উড়িয়ে হত্যা করা হতো। তাই ভুয়া ইসলামী জঙ্গি দমনের অজুহাতে বাংলাদেশে হাজার হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যা করেও নরপিশাচ হাসিনা। এরমধ্য দিয়ে সে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভারতসহ মুসলিম বিদ্বেষী প্রভাবশীল পশ্চিমা সরকারগুলোর সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল।
হাসিনার এসব ঘৃন্য কর্মকান্ডে দিল্লি তো মহা আনন্দিত হয়েছেই, পশ্চিমা বিশ্বও অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে রেখে মুসলমান নিধনে উৎসাহ জুগিয়েছে। কথিত ইসলামী জঙ্গি এবং ইসলামপন্থিদের নির্মমভাবে দমনের পুরস্কারস্বরূপ হাসিনাকে ক্রমেই একবিংশ শতকের সবচেয়ে অত্যাচারী শাসকে পরিণত করা হয়।
অবশেষে আবু সাইদ, মুগ্ধ এবং হাজারো শহীদের অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের সুদক্ষ নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সকল চ্যালেঞ্জ ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতো সফলতা আসতে শুরু করেছে। এমন অবস্থায় হতাশালীগের সদস্যরা সেই পুরনো জঙ্গিতত্ব ফেরি করে বাংলাদেশকে একটি অস্থিতিশীল ও উগ্র রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে তৎপরতা শুরু করেছে।
কিন্তু বর্তমানে বাস্তবতা সম্পূর্ণ পাল্টিয়েছে। দেশের জনগণ জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাই এখন আর জঙ্গি ব্যবসা করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কোনো লাভ হবে না বলে মনে করেন পর্যবক্ষেকরা।
যশোরের ঘটনায় এক্স হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন ফ্যাসিস্ট হাসিনাপুত্র জয়। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আর এক জঙ্গি নেতাকে দেখুন। আইএসদের কায়াদায় মুখ ঢেকে, দুপাশে মুখোশধারী, সশস্ত্র দেহরক্ষীদের নিয়ে চরমপন্থার উপদেশ দিচ্ছে। জনতার উদ্দেশে কথা বলার সময় এমন আগ্নেয়াস্ত্র প্রকাশ্যে আনা আওয়ামি লিগের শাসনকালে বন্ধ ছিল। চরমপন্থীদের দমন করেছিল প্রশাসন। কিন্তু ইউনুস সরকারের আমলে আবার তারা মাথাচারা দিচ্ছে। যা উদ্বেগের বিষয়।’
একই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তিনি লেখেন, ‘যশোরে জিহাদের ডাক। দলে দলে জিহাদে যোগ দিন। জিহাদিস্তান থেকেই শুরু হবে খেলাফতের আন্দোলন।’
দিল্লির সেবাদাসী হাসিনামুক্ত বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র প্রমাণে মরিয়া ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, শেখ হাসিনার শাসনকালে বাংলাদেশে চরমপন্থা মাথাচারা দিতে পারেনি। কিন্তু এখন ওপার বাংলার রাজনৈতিক চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। ড. মহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার জেল থেকে মুক্তি দিয়েছে একাধিক জঙ্গিনেতাকে।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও ভারতীয় আধিপত্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশে জঙ্গি খুঁজে পেতে মরিয়া শাহবাগী ইমরান এইচ সরকার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশকে উগ্র জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র প্রমাণের জন্য আমেরিকার যা যা দরকার মাস্টারমাইন্ড আর সমন্বয়কেরা তাই তাই করে চলেছে। অভিনন্দন।’
সম্প্রতি আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এক প্রবন্ধে বলেন, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ৫ আগস্টের এক মহান বিপ্লবে উৎখাত হওয়া পর্যন্ত মূলত: জঙ্গীতত্ত্ব ফেরি করেই প্রায় ১৬ বছর শেখ হাসিনা তার অবৈধ ফ্যাসিস্ট শাসন বজায় রাখতে পেরেছিল।বিগত ষোল বছরে অন্তত: শ’খানেক এমন নাটক করা হয়েছে যাতে বহু নিরাপরাধ, দরিদ্র মানুষকে হত্যা করেছে স্যাডিস্ট আওয়ামী সরকার। এখন সময় হয়েছে সব হত্যাকান্ডের নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে শেখ হাসিনাসহ সকল অপরাধীদের সাজা দেয়ার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন