জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) এখনো চলছে পতিত আওয়ামী লীগের দোসরদের দখরদারিত্ব। অথচ বিগত এক যুগ ধরে প্রতিষ্ঠানটির মূল জনশক্তি তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। দেশে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার তীব্র গণ-আন্দোলন সফল হওয়ার পরেও নায়েমের মূল জনবল কাঠামোর ২৮ জন শিক্ষক প্রশিক্ষকসহ মোট ৬৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এখনো তাদের ন্যায্য পাওয়া তথা প্রমোশন, টাইমস্কেল ও সিলেকসন গ্রেড থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সূত্র মতে, ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আওয়ামী লীগের দোসররা বিদায় হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রশিক্ষণের একমাত্র প্রতিষ্ঠান নায়েমের শীর্ষ পদ থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদেই পতিত সরকারের সুবিধাভোগীরা বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। তারাই মূলত বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন।
অন্য দিকে মূল অর্গানোগ্রামের বাইরের জনবল হিসেবে নায়েমে পদ নিয়ে আসা কর্মকর্তারা তাদের ইচ্ছেমতো নিয়মনীতি প্রয়োগ করে মূল জনবলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবজ্ঞা করে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক প্রশিক্ষণের নামে প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা ইচ্ছেমতো বিল-ভাউচার দেখিয়ে লুটপাট করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে নায়েমের নানা ধরনের অনিয়ম আর বৈষম্যের বিষয়ে ইতঃপূর্বে শিক্ষা সচিব বরাবরে স্মারকলিপি দেয়া হলেও সে বিষয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে নায়েমের বৈষম্যের বিষয়ে লিখিতভাবে এর আগে একাধিক স্মারকলিপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও সেগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে গায়েব করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল সোমবার নায়েমের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রমোশন, টাইমস্কেল, সিলেকসন গ্রেড, নিয়োগবিধি, অর্র্গ্রানোগ্রাম ও বিভিন্ন কোর্সে চলমান বৈষম্যের প্রতিবাদে সকালে এক ঘণ্টার প্রতীকী কর্মবিরতি ও সমাবেশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ও বঞ্চিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। কর্মসূচিতে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রশাসনিক ভবন চত্বরে উপস্থিত থেকে নায়েমে চলমান বৈষম্যের অবসান দাবি করেন।
পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নায়েমের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মো: সেলিমুজ্জামান, উপপরিচালক ড. মো: আরিজুল ইসলাম খান, উপপরিচালক মো: শহীদুল ইসলাম, প্রোগ্রামার মো: শাহ আলম, শিক্ষক প্রশিক্ষক আইরিন রহমান, শাহ মো: আব্দুল মাবুদ, শাহ আবু মোহাম্মদ আজিজুল করিম, নাহিদ ফেরদৌস ভূঁঁঞা, একাউন্টস্ অফিসার কাজী মো: হুমায়ুন কবীর, অফিস সহায়ক মো: দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল হালিম, মো: তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।
গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে নায়েমের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের প্রতি নানা ধরনের বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে পদোন্নতি বঞ্চিত সব স্তরের অর্থাৎ সব গ্রেডের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অনতিবিলম্বে বিধি অনুযায়ী প্রাপ্যতাসাপেক্ষে পদোন্নতি দিতে হবে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে যেসব কর্মকর্তা/কর্মচারী পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছেন আগামী দুই কর্ম দিবসের মধ্যে অগ্রায়ণ করারও দাবি জানানো হয়। একইসাথে নায়েমের সব স্তরের স্থায়ী ও রাজস্বখাতে নিয়মিতকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্যতাসাপেক্ষে টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেডসহ অন্যান্য প্রাপ্য সুবিধাদি দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া নায়েমের সকল প্রশিক্ষণ কোর্সে তথা নায়েম কর্তৃক আয়োজিত এফটিসি ও প্রকল্পের প্রশিক্ষণ কোর্সসহ সব প্রশিক্ষণ কোর্সে সব অনুষদ/কর্মকর্তাগণকে বৈষম্যহীনভাবে সমমর্যাদায় কোর্স সমন্বয় ও অধিবেশন পরিচালনাসহ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে সমান সুযোগ-সুবিধা দেয়ারও দাবি জানানো হয়। নায়েমে বিদ্যমান কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, ২০০৫ সংযোজন ও সংশোধন করে নায়েমের সকল স্তরের স্থায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পদোন্নতির ব্যবস্থা রেখে নিয়োগবিধি কার্যকর করতে হবে এবং নায়েমের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এর দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণসহ সকল প্রকার সেমিনার ও কর্মশালায় সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বঞ্চিত কর্মকর্তারা আরো জানান নায়েমের যেসব স্থায়ী ও রাজস্ব খাতে নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ পাঁচ বছরের বেশি চাকরিতে কর্মরত আছেন তাদেরকে যোগ্যতা ও প্রাপ্যতা সাপেক্ষে পরবর্তী উচ্চতর পদে চলতি দায়িত্বে পদায়ন হবে। পাশাপাশি সব কোর্সে কর্মচারীদের পর্যায়ক্রমে কোর্সের শিক্ষা সফরে অংশগ্রহণ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও দিতে হবে। একইসাথে প্রশিক্ষণ একাডেমির আইন তৈরি করে নায়েমের সব কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ৩০% বিশেষ ভাতা দেয়ারও দাবি জানান বঞ্চিত কর্মকর্তারা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন