গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসিনার পলায়নের পর দেশের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের গুরুদায়িত্ব দেয়া হয় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। ছাত্র-জনতার আন্দোলন, আওয়ামী সরকার পতন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন—সব মিলিয়ে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশের পরিস্থিতি অনেকটাই চরাই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝেও দেখা দিয়েছে সংকট, অস্বস্তি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি দ্রুততম সময়ে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন চাইছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই নির্বাচনের তাগাদা দিয়ে আসছে দলটি।
সম্প্রতি দেশের এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে নির্বাচন ও রাজনীতির হালচাল নিয়ে কথা বলেছেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
একান্ত সাক্ষাৎকারে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, নির্বাচনের পর সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে বিএনপি।
সাক্ষাৎকারে খসরু বলেন, “আমরা ৩১ দফা সংস্কারের কথা বলেছি। যুগপৎ আন্দোলনে আমরা যারা আছি তাদের মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্য আছে। এর বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোও যোগ হয়েছে।
তাদের সঙ্গেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটা ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। সুতরাং এখানে জাতীয় ঐকমত্যের একটা বিষয় রয়েছে। ৫০টির কাছাকাছি দল এ ঐকমত্যে আমাদের সঙ্গে আছে। কাজেই বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে যে নির্বাচনের পর আমরা সবাই মিলে একটা জাতীয় সরকার গঠন করব। আমরা যারা ৩১ দফার সঙ্গে আছি এবং আলাপ-আলোচনা করে তৈরি করেছি তারা সবাই মিলে সেগুলো বাস্তবায়ন করব।
এটি একটি বিরাট কমিটমেন্ট। এটা জাতির কাছে বিএনপির প্রতিশ্রুতি। আমরা কতটা সিরিয়াস তারই প্রতিফলন।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিএনপির অবদান সম্পর্কে খসরু বলেন, “বিএনপির আন্দোলন তো ১৬-১৭ বছর ধরেই চলতেছে। ১৬ বছর ধরে বিএনপির ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে লাখ লাখ মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে। গুম করা হয়েছে। বাড়িঘর, ব্যবসাবাণিজ্য হারিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকেও লড়াই করছেন। ওনার শক্ত ও অটল অবস্থানের ফলে জাতি সাহস পেয়েছে এবং দাঁড়াতে পেরেছে। গত ১০-১৫ বছর নির্যাতন-নিপীড়নের পরেও বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী দল ছেড়ে যায়নি। এমন একটি দল আর একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর বিদেশে থেকেও যে নেতৃত্ব দেওয়া যায় এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা যায় এবং মোটিভেট করা যায় তার প্রমাণ তারেক রহমান নিজে। তাঁর যে ত্যাগ ও অবদান সেটিও অনস্বীকার্য। কারণ তিনি দিনরাত পরিশ্রম করে অনলাইনে বৈঠক করে যেভাবে দলটাকে আজকের এ অবস্থানে নিয়ে এসেছেন, তা অতুলনীয়।”
অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক নির্বাচনি রোডম্যাড ঘোষণার বিষয়ে বিএনপি এ নেতা বলেন, “নির্বাচনের ব্যাপারে এ সরকারকে সময় বেঁধে দিয়ে কোনো চাপ সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করছি। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়েছি। তারা যাতে সবার সহযোগিতা নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটা নির্বাচিত সরকারের কাছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারে, সেটিই হলো আজকের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
নির্বাচন নিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দল নিজেদের মতামত জানিয়েছে অন্তবর্তী সরকারের কাছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী চায় আনুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন। জামায়াতের এমন দাবি প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা বলেন, “আনুপাতিক হারে তো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা যে ওয়েস্ট মিনস্টার ডেমোক্র্যাসি প্র্যাকটিস করি, এটা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেটা আছে, সেই ধারাতেই চলতে হবে।”
বর্তমানে দেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল করা সহ দেশ-বিদেশ থেকে নিয়মিত ষড়যন্ত্র চলছেই। চক্রান্ত থেমে নেই। এ প্রসঙ্গে খসরু বলেন, “স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও তাঁর দোসররা এখনো রয়ে গেছে। প্রশাসনেও রয়েছে। এগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে দেখতে হবে। এদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। পুরো জাতি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে তারা তেমন কিছুই করতে পারবে না। এজন্য সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।”
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন