বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা গেলে অনেককিছুই করা সম্ভব। সেই অনেককিছু যদি সূচনা করতে হয় তাহলে আমাদেরকে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এই কাজটি করতে হলে আমাদের আবার পিছনে যেতে হবে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে, ঠিক তেমনি দেশের মানুষকে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে হতে হবে। তাহলেই আমরা কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার কাজটি শুরু করতে পারবো।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপি আয়োজিত দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে এসব কথা বলেন তিনি।
বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রায় দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় তিনি সভায় যুক্ত থেকে এসময় তিনি ৩১ দফা বাস্তবায়নে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মতামত ও প্রশ্নের জবাব দেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর কোনো সংস্কারের কথা বলিনি। আমরা বলতে বুঝাচ্ছি জাতীয়তাবাদী দল এবং তার সাথে আন্দোলনকারী গণতান্ত্রিক দল যারা ছিলেন তারা। আমরা এমন একটি সময়ে এই ৩১ দফা প্রণয়ন করেছি, যখন আমরা জানতাম স্বৈরাচারের পতন হবে। হয়তো সঠিক সময়টা আমরা জানতাম না। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যে দেশের জন্য, মানুষের জন্য চিন্তা করি, এটি হচ্ছে তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।’
তিনি বলেন, ‘একটি জবাবদিহিতার সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে এই ৩১ দফা প্রণয়ন করা হয়েছিলো। যখন আমরা মানুষের সামনে এই ৩১ দফা তুলে ধরেছিলাম তখন দেশে স্বৈরাচারের শাসন ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা থেকে সংস্কারের যেসব প্রস্তাব আসছে তার প্রায় সবই এই ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে। হয়তো কোনো শব্দ বা বাক্যচয়নে কিছু হেরফের রয়েছে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা দুর্নীতিকে অ্যাড্রেস করতে চাই, আইনের শাসনকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই, স্বাস্থ্যখাতে এমন পরিবর্তন আনতে চাই যাতে দেশের মানুষ দেশেই উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পায়। আমরা এমন একটি ন্যায্য শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই যাতে শিক্ষার্থীরা দেশেই উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এ লক্ষ্য পূরণের প্রথম শর্তই হচ্ছে জনগণকে আস্থায় রাখা। বিএনপির প্রতি মানুষের যেই আস্থা আছে সেটি ধরে রাখতে হবে। আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক আগামী দিনগুলোতে জনগণের আস্থা ধরে রাখা। এজন্য যা যা করা দরকার সবই করতে হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘গত সরকারের আমলে কোনো ক্ষেত্রেই কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। ১৪ সাল, ২০১৮ সাল তথাকথিত নির্বাচন দেখেছি আমরা। এই ফরিদপুরেই তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হাজার কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর এসেছে। এই যে অর্থপাচার কারা কি করেছে তা ফরিদপুরের মানুষ ভালো করেই জানে। কিন্তু করেছে তো যেই করুক। দেশে যদি জবাবদিহিতা থাকতো তাহলে কি দেশের এই ২ হাজার কোটি টাকা পাচার করা সম্ভব হতো?’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ বিষয়ক এ বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়। এতে বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচটি জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদি আমীন, বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, সেলিমুজ্জামান সেলিম, কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক মোশাররফ হোসেনের গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার, সহ-ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক অ্যাডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আরলীসহ অন্যরা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, বিএনপি নেত্রী হেলেন জেরিন খান, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ঈসা, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ এফ এম কাইয়ুম জঙ্গি, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশ, জুলফিকার হোসেন জুয়েল, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন