রাতের আঁধারে নয়, বরং দিনের আলোয় আওয়ামী লীগকে বিএনপিতে মিশতে হবে- এমনটাই পরামর্শ দিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে ফরিদপুরের নগরকান্দার ডাংগীতে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত এক উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রীয়ভাবে একটা নীতিগত সিদ্ধান্তই যে, আওয়ামী লীগের কেউ যেন দলে ঢুকতে না পারে। কেননা ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে ঘোষণা করেছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা।
যদিও শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ চান আওয়ামী লীগ নির্বাচন করুক, কিন্তু সেটি শর্তসাপেক্ষ। অর্থাৎ গণহত্যার দায়ে আগে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে তাদের।
সেই দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা হয়ে শ্যামা ওবায়েদ কীভাবে জনরোষে পতিত ও পলাতক একটি দলের নেতাকর্মীদের দলে আসা কিংবা ঠাঁই দেওয়ার পথ বাতলে দেন?
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শামা ওবায়েদের পরামর্শটা কী সেটি দেখি, ‘আওয়ামী লীগকে বিএনপিতে মিশতে হলে রাতের আঁধারে আসলে হবে না, দিনের আলোয় অফিশিয়াল নিয়মে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নেতা মেনে, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক মেনেই দলটিতে আসতে হবে।’
তার এই বক্তব্য নিয়ে স্থানীয় ও রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। শ্যামার বাতলে দেওয়া নিয়ম মেনে বিএনপিতে এলেই কি ফ্যাসিস্ট দলের নেতাকর্মীরা পরিশুদ্ধ হয়ে যাবেন? সেটি অবশ্য তার বক্তব্যে পরিষ্কার করেননি শ্যামা ওবায়েদ।
তবে আওয়ামী লীগের নেতাদের দলে না ভেড়াতে প্রতিদিনই হুঁশিয়ার করে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। শ্যামা যেদিন ওই বক্তব্য দেন, সেদিনই অনুষ্ঠিত পৃথক দৃটি সমাবেশে দলের দুজন কেন্দ্রীয নেবতার বক্তব্য তারঠিক উল্টো।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর সুযোগে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের লোকজন দলে ঢুকে যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে বলেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশুবিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী।
শুক্রবার টা্ঙ্গাইলের তিনি বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারে বিদায় করেছি। এত দিন যারা আওয়ামী লীগ করত, তারা বিএনপির ভেতরে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির যেসব নেতা তাদের আশ্রয় দেবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একই দিন দেশের অন্য প্রান্তে আরও কঠোর বার্তা দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান। তিনি আওয়ামী লীগের কাউকে তো নয়ই, এমনকি যারা বিগত সরকারের সময় তাদের ছত্রচ্ছায়ায় ছিলেন তাদেরও প্রশ্রয় না দিতে হুঁশিয়ারি করেছেন। বলেছেন, 'যারা এত দিন আওয়ামী লীগের লোকজনের ছত্রচ্ছায়ায় ছিলেন, ওই সমস্ত লোকজন নিয়ে যারা দল ভারী করার পরিকল্পনা করছেন, তাদের কপালে দুঃখ আছে।' অবশ্য শ্যামা ওবায়েদ আওয়ামী লগের নেতাকর্মীদের বিএনপিতে আসার নিয়ম বাতলে দেওয়ার পাশাপাশি দলের নেতা-কর্মীদেরও সতর্ক করেছেন পতিত দলের সঙ্গে না মিশতে। কারণ হিসেবে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। তাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মেলামেশা করা যাবে না।’
বিএনপির এই সাংগঠনিক সম্পাদকের দুই বক্তব্য স্ববিরোধী বলছেন দলের তৃণমূল কর্মীরা, জানান আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি।
শ্যামা ওবায়েদ তার বক্তব্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশে যে ধ্বংসস্তূপ তৈরি করে রেখেছে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশকে সেখান থেকে পুনরুদ্ধার করা হবে।’ সেই জন্য শামা ওবায়েদ।
শুক্রবারের ওই উঠান বৈঠকে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবুল তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান মুকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত আলী শরীফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন