ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে কিভাবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন—তা ভারত জানে এবং ভারতই ভালো বলতে পারবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, যুক্তরাজ্যে আগামী ৮ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একটি বড় সমাবেশ করতে যাচ্ছে সেখানকার আওয়ামী লীগ। ওই সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন শেখ হাসিনা।
তিনি কিভাবে এই সুযোগ পাচ্ছেন?
জবাবে রফিকুল আলম বলেন, “আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি, এ রকম একটি রাজনৈতিক মিটিং আছে। উনি (শেখ হাসিনা) বত্তৃদ্ধতা দেবেন। আপনারা যে রকম জানেন আমরাও সে রকম জানি। কিভাবে এটা ‘ফেসিলেটেড’ হচ্ছে—এটা আমার বক্তব্য দেওয়ার বিষয় নয়।
তিনি ভারতে আছেন, ভারত সরকার কিভাবে এটা ‘হ্যান্ডেল’ করছে—তারা এটা ভালো বলতে পারবে।” এদিকে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনতে আদালত এখনো পর্যন্ত কোনো চিঠি দেননি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম। উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনার নামে সারা দেশে অসংখ্য হত্যা মামলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও তার নামে একাধিক গুম ও খুনের মামলার আবেদন করা হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের আসন্ন সফরে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা হবে কি না তা-ও এখনো ঠিক হয়নি বলে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব বৈঠকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত আনা প্রসঙ্গ আসবে কি না তা এখনো নির্ধারিত নয়। কারণ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে এখনো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কিছু বলেনি।
’
আগামী ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান মুখপাত্র। রফিকুল আলম বলেন, ‘দিল্লিতে অবস্থান করে শেখ হাসিনা যেন উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকেন, ভারতকে এ বিষয়টি নিশ্চিতে আহবান জানালেও কোনো উত্তর দেয়নি দেশটি।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ৯ ডিসেম্বর ইইউয়ের ২৮ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম জানান, আগামী ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭টি দেশের রাষ্ট্রদূত (২০ জন অনাবাসী রাষ্ট্রদূতসহ) এবং ইইউ রাষ্ট্রদূতসহ মোট ২৮ জন সমবেতভাবে বৈঠক করবেন। ইইউয়ের সব সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের একত্র হয়ে সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগটি এবারই প্রথম। এ সভা বাংলাদেশ ও ইইউয়ের সম্পর্কে আরো সুসংহত করবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা করছে।
মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউয়ের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক পর্যালোচনা, সহযোগিতার নতুন ও সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী ‘জিএসপি প্লাস’ বাণিজ্য সুবিধা, জলবায়ু পরিবর্তন সৃষ্ট অস্তিত্ব সংকট মোকাবেলা, দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি একটি টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে উভয়ের অঙ্গীকার ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো বৈপরীত্য দেখা যাবে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ দশকের সম্পর্কে বাংলাদেশ ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় দলের অধীন সরকারের সঙ্গে কাজ করেছে। আমাদের পাঁচ দশকের সম্পর্ক পর্যালোচনা করলে এটা সহজেই অনুমেয় যে ক্ষমতাসীন দলের পরিবর্তন হলেও তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি ও কৌশলগত অবস্থান এবং জাতীয় লক্ষ্যসমূহ অনেকটাই অপরিবর্তিত থাকে। আমরা পূর্বের ট্রাম্প সরকারের সঙ্গেও কাজ করেছি।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন