রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সংগঠক কুশ বড়ুয়া অর্ণবকে ‘রাজনীতিমুক্ত’ প্রত্যয়ন দিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা জামায়াতের আমির মুহাম্মদ আব্দুল আলীম। পরে সমালোচনার মুখে সেই ‘প্রত্যয়নপত্র’টি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা আব্দুল আলীম নিজেই জানিয়েছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা না দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছিলেন কুশ বড়ুয়া। এ অভিযোগে গত ১ ডিসেম্বর (রোববার) রাতে তাকে মিরপুর মডেল থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে ছাত্র-জনতা। ডা. কুশ বড়ুয়ার সবশেষ কর্মস্থল ছিল রাজধানীর ইসলামী ব্যাংক কার্ডিয়াক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ।
এদিকে গত মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) জেলা জামায়াতের আমির আব্দুল আলীমের সিল ও সই করা একটি প্রত্যয়নপত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাকে লেখা হয়েছে, ‘শ্রী কুশ বড়ুয়া, পিতা সৌরভ বড়ুয়া, মাতা বেবী বড়ুয়া, সাং- কে কে রায় সড়ক, ওয়ার্ড-৮, ডাকঘর, রাঙ্গামাটি-৪৫০০, থানা- কোতোয়ালি, উপজেলা- রাঙ্গামাটি সদর, জেলা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। তিনি অত্র পৌর এলাকার একজন স্থায়ী বাসিন্দা, তিনি জন্মগতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমার জানামতে তিনি কোনো রাজনৈতিক দল ও কোনোরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। তার স্বভাব ও নৈতিক চরিত্র ভালো। আমি তার জীবনের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।’
প্রত্যয়নপত্রটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন বুধবার (৪ ডিসেম্বর) জেলা জামায়াতে ইসলামীর দলীয় প্যাডে এক বিবৃতি দিয়ে ‘প্রত্যয়নপত্র প্রত্যাহার ও দুঃখ প্রকাশ’ করেছেন জেলা জামায়াতের আমীর।
এতে লেখা হয়েছে, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কিছু পরিচিত লোকের অনুরোধে ভীষণ ব্যস্ততার মাঝে প্যাডবিহীন একটি প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর দিয়েছিলাম। আমি সরল মনে কিছু পরিচিত ব্যক্তিকে বিশ্বাস করে মানবিক বিবেচনা করে স্বাক্ষর করি। এটি আমার অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি তাকে দেওয়া প্রত্যয়নপত্র সচেতনভাবে প্রত্যাহার করলাম।
জেলা জামায়াতের আমির আব্দুল আলীম আরও লিখেছেন, প্রকৃত তথ্যে জানতে পেরেছি, সে একজন অপরাধী, সন্ত্রাসী, হত্যা মামলার আসামি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দলের অন্যতম কর্মী। সে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের সহসভাপতি। তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি দাবি করছি। আর যারা আমাকে বিভ্রান্ত করে ও ব্যস্ততার মাঝে স্বাক্ষর নিয়ে দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে কাজ করেছে, তাদেরও সাবধান করছি।
জানা গেছে, কুশ বড়ুয়া অর্ণব রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস কোর্সের দ্বিতীয় ব্যাচ ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও শাখা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
এদিকে কুশ বড়ুয়া অর্ণবের ঘনিষ্ঠজনদের দাবি, ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের পক্ষে ভূমিকা নেন কুশ বড়ুয়া অর্ণব। এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের তোপের মুখেও পড়েছিলেন।
প্রত্যয়নপত্র প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি জেলা জামায়াতের আমির মুহাম্মদ আব্দুল আলীম বলেন, ‘৩ তারিখে দেওয়া প্রত্যয়নপত্রটিও সত্য, ৪ তারিখে দেওয়া পত্রটিও সত্য। আমাদের পরিচিত কয়েকজন এসে আমার ব্যস্ততার ফাঁকে অনুরোধ করল একটা প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার জন্য। পরিচিতদের অনুরোধে আমি (প্রত্যয়নপত্র) দিয়েছি। পরে জানলাম যে সে ছাত্রলীগের নেতা, সন্ত্রাসী। আমি পরদিন আবার এর বিরুদ্ধে লিখে দিয়েছি।’
আব্দুল আলীম আরও বলেন, ‘স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়েছে। আমরা তো মানুষকে বিশ্বাস করি। এটাই সমস্যা। এখন আমরাও একটু সতর্ক হলাম। মানুষের উপকার করতে হলে ভবিষ্যতে আমাদের আরও বেশি যাচাই-বাছাই করতে হবে।’
সারাবাংলা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন