ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও দেশের চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকালে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে দীর্ঘদিন পর দেশের বাম ও ডান ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে দেখা যায়, যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে জামায়েতে ইসলামীর সঙ্গে দেশের বাম দলগুলোকে দেখতে পেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে সরব হয়েছেন।
এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘এগুলো ভারতীয় মিডিয়ার মতো একটি স্বার্থান্বেষী মহলের অপপ্রচার। যে গণঅভ্যুত্থান হলো সেখানে সবাই অংশ নিয়েছি। কেউ জিজ্ঞেস করিনি কে কোন দলের। সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষটাও এতে অংশ নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে বৈঠকে সব দল অংশ নিয়েছিল। আমরাও ছিলাম। এর সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্যের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এই আলোচনা হয়েছে যার যার রাজনৈতিক অবস্থান অক্ষুণ্ণ রেখে। প্রকৃত জনকল্যাণে স্বাধীন অবস্থানে থেকে সিপিবি বামজোট ও অন্য প্রগতিশীল দলগুলোকে নিয়ে সরকার গঠনের জন্য সংগ্রাম করে যাবে।’
এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘সবার আগে বাংলাদেশ। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থান ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন পতিত ফ্যাসিস্ট ও দেশি-বিদেশি দোসররা চাইছেন এই অর্জনকে নস্যাৎ করতে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা সবাই এক জায়গায় কথা বলেছি। সেখানে আদর্শিক-মতাদর্শিক পার্থক্য আছে। ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকে তাদের সরকার, বিজেপি যেভাবে উৎসাহিত করছে, পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে— তাতে আমরা মনে করি জাতীয় স্বার্থে সকল জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এই সরকার সকলের সমর্থিত সরকার। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ডেকেছেন, আমরা গিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
বৈঠকে অংশ নেয় যারা
বুধবারের বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেয়। এছাড়া জামায়েত ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানসহ চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নিয়েছিল।
অপরদিকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মো. শাহ আলম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু ও যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির শহীদউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হক লালা, জাতীয় জোটের এহসানুল হুদা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের (একাংশ) নুরুল আমিন ব্যাপারী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের আবদুল বাসিত আজাদ ও জাহাঙ্গীর হোসেন, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের আবদুর রব ইউসুফী ও মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, ইসলামী ঐক্যজোটের আব্দুর রকিব, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (মার্ক্সবাদী) হারুন চৌধুরী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মুফতি ফখরুল ইসলাম, গণ অধিকার পরিষদের (ফারুক) সদস্যসচিব ফারুক হাসান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, জাগপার (একাংশ) রাশেদ প্রধান, এনডিপির আবু তাহেরসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন