বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সোমবার রাতের এক বৈঠকে ছয় ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছে দলটি। এগুলো হলো- ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলার রায়, ইসকন ও ভারতের আগরতলায় হাইকমিশনের হিন্দুদের হামলা, ব্যাংকে নতুন টাকা দেওয়া, বিগত ১৫ বছরের বিদেশে টাকা পাচার নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপন এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়া বহিষ্কৃত নেতাদের ফেরানো। দলটির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। সূত্র জানায়, ভারতের প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে বিএনপি। ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুর এবং জাতীয় পতাকা পোড়ানোর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সামনে আনার কথা ভাবছে বিএনপি। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায় হাইকমান্ড। সূত্র আরও জানান, বৈঠকের শুরুতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে খালাস দেওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করা হয়। তারা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নতুন করে ছাপিয়ে দুর্বল ৬ ব্যাংকে দেওয়া হয়েছে। আমানতকারীদের সুরক্ষার জন্য দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হলে আদৌ কি গ্রাহকরা নিশ্চিন্ত হতে পারবেন! কারণ এসব ব্যাংক পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের লুটপাট ও অনিয়মের কারণে তারল্য সংকটে পড়েছে। এখনো তাদের অনুসারীরা প্রতিটি ব্যাংকে বসে রয়েছে। তাই ব্যাংক খাত থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের সরাতে না পারলে অর্থনীতির অস্থিরতা সামাল দেওয়া যাবে না। বৈঠকে দুজন সদস্য বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বলেছিল, ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে দেশের অর্থনীতি ঠিক হয়েছে যাবে। চার মাস হতে চললেও তারা করতে পারছে না। উল্টো বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলছে, তাদের চাপ দিলে তার পক্ষে থাকা সম্ভব হবে না। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থায়ী কমিটি।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের ২৪ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হওয়ার শ্বেতপত্র প্রকাশ করায় অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হয়। তখন কোনো কোনো নেতা বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের রাঘববোয়াল, আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। এই ভয়াবহ দুর্নীতির বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করে ডকুমেন্টারি (প্রমাণ্যচিত্র) আকারে প্রকাশ করা যেতে পারে। এতে করে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ব্যাপক আকারে প্রচার হবে এবং জনগণের কাছেও পৌঁছানো যাবে। বৈঠকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিগত নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের ফেরানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাদের ফেরানোর ব্যাপারে হাইকমান্ডের পজিটিভ মনোভাব রয়েছে। রাজধানীর গুলশানে সোমবার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে এই বৈঠক শুরু হয়ে চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি), স্থায়ী কমিটির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ (সিঙ্গাপুর থেকে ভার্চুয়ালি), বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীরবিক্রম), অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
৩১ দফা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। গতকাল রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল এবং বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটি। তারেক রহমান বলেন, বিএনপি দুই বছর আগে ৩১ দফা দিয়েছে।
তারও আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ দিয়েছিলেন। দুই বছর আগে আমরা জানতাম না যে, ৫ আগস্ট আমরা স্বৈরাচারকে পালাতে বাধ্য করব। কিন্তু দুই বছর আগে দেশ এবং দেশের মানুষের ভাগ্য কীভাবে পরিবর্তন করা যায়, সে নিয়ে চিন্তা ছিল আমাদের।
বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে দেশজুড়ে বৃক্ষরোপণ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি আগামীতে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এলে সারা দেশে আমার পাঁচ বছরে ৫ কোটি বৃক্ষ রোপণ করব। যেগুলো বড় বৃক্ষ, রেইনট্রি। আমাকে এই কাজে সবার সহযোগিতা আশা করি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন