সংবিধানে উপরাষ্ট্রপতি, উপপ্রধানমন্ত্রী, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাসহ ৬২টি সংস্কার চায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। পাশাপাশি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে চায় দলটি। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে নিজেদের লিখিত প্রস্তাব জমা দেয় বিএনপি।
পরে দলীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, ব্যাপক ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন তাঁরা। যাতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়। তিনি জানান, সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে তফসিল পর্যন্ত ৬২টি জায়গায় বিভিন্ন সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবনার মূল অংশে কিছু নতুন প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদের রক্তের অঙ্গীকার, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে যাতে সংসদীয় একনায়কতন্ত্র সৃষ্টি না হয়, সেগুলো মাথায় রেখে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
দলীয় প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে সালাহ উদ্দিন আহমদ জানান, একই ব্যক্তি পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এমন বিধান, সংসদে উচ্চকক্ষ সৃষ্টি, অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ যাতে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে থাকে, গণভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তনের প্রস্তাব করেছে বিএনপি। প্রস্তাবনায় প্রজাতন্ত্র, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, তফসিলসহ সব বিষয় অ্যাড্রেস করা হয়েছে, যাতে সংবিধানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সাধিত হয়। রাষ্ট্রের সব অঙ্গে যাতে সব ক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি হয়, সেই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সংবিধান পুনর্লিখনের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সংসদ না থাকায় সংবিধান সংশোধন কীভাবে হবে এমন প্রশ্নে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাবগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পেশ করবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিশেষজ্ঞসহ সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তারা চূড়ান্ত করবেন। এ ক্ষেত্রে দেখা যাবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সবাই একমত হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত থাকতেই পারে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য থাকবে, সেগুলো তারা যদি অঙ্গীকার করেন, নির্বাচনি ইশতেহারে প্রতিফলন করেন, তাহলে সবার অঙ্গীকার থাকবে পরবর্তী নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা সংবিধান সেভাবে পরিবর্তন করবে।
বিএনপির প্রস্তাবনা বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধান সংস্কারে সব ধরনের মানুষের মতামত নিতে সারা দেশে জরিপ করা হবে। আগামী সপ্তাহে সারা দেশে একটা জরিপ শুরু করব। এটির মাধ্যমে যাতে সবধরনের মানুষের মতামত আমরা পাই। কমিশন প্রধান বলেন, সংস্কার কমিশনের কাছে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই দায়িত্ব অনুসারে আমাদের কিছু সুপারিশ করার কথা। আমাদের একটা নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে, সেটা হলো ৯০ দিন। এর মধ্যে আমরা প্রস্তাবগুলো দেব। নির্বাচন প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রস্তাবে নির্বাচন সংক্রান্ত যে মতামতগুলো এসেছে সেগুলো থেকে আমরা সুপারিশ তৈরি করব। ফলে সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনের বিষয়টা কবে হবে, কী প্রক্রিয়ায় হবে সেটা সরকার বলতে পারবে। এটা সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে আমাদের সুপারিশগুলো করতে চাই। নির্বাচনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে এবং আমরা সারাংশ নিয়ে কাজ করব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিশনের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা সংস্কারের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব, পরামর্শ বা সুপারিশ করছেন তা নিয়ে শিগগিরই একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। তারপর সেই প্রতিবেদন দেওয়া হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে। তাই একটি দলের প্রস্তাবনা নিয়ে আলাদাভাবে কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই কমিশনের কাছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন