আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেশত্যাগ করেছেন। ক্ষমতাচ্যূতির তিন মাস পর চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সিলেটের সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এখনো তিনি সেখানেই আছেন বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছে। পালিয়ে গিয়ে দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতাও দেশ রূপান্তরকে বলেন, ওবায়দুল কাদের মেঘালয়ে আছেন।
কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হওয়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলেও তিন মাসের বেশি সময় দেশের নানা জায়গায় পালিয়ে থাকতে হয়েছে ওবায়দুল কাদেরকে।
এদিকে, এ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাদেরকে আটকের অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ক্ষমতাচ্যূতির পর দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় হত্যা মামলাসহ প্রায় দুই শতাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে তাকে। ওবায়দুল কাদেরকে আটকের চেষ্টায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু কাদেরকে আটকের অভিযান ব্যর্থ হয়। চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর ভাইকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করে পরে তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে আটক হয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী।
গত ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় আওয়ামী লীগ। এরপর আত্মগোপনে চলে যায় দলটির সকল কেন্দ্রীয় নেতা, সংসদ সদস্য (এমপি) ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আত্মগোপনে থাকা বেশিরভাগই ইতিমধ্যে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যেতে সক্ষম হয়েছেন। খুবই অল্প সংখ্যক নেতা দেশে রয়েছেন। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা দেশ ছেড়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছাড়ার পাশাপাশি দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে দলের অসংখ্য নেতা বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত চলে যান। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা ভারত হয়ে ইউরোপ-আমেরিকায়ও পাড়ি জমিয়েছেন। আবার এমপি, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাগারে রয়েছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এত সতর্ক অবস্থানে থাকলেও কিভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলছে আওয়ামী লীগ নেতাদের তা নিয়ে। আওয়ামী লীগ নেতাদের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে মুখরোচক নানা গল্পও শোনা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। মূলত বড় অংকের টাকার লেনদেন করেই বিশেষ একটি মহল আওয়ামী লীগ নেতাদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিছু নেতার পালিয়ে যাওয়ার এসব খবরে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরাও।
ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সেসব প্রভাবশালীদের অপরাজনীতি আওয়ামী লীগকে এ পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়েছে। ক্ষুব্ধ অংশটি দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, তাদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ মেলায় বেশ অবাক নিজেরাও।
অপরাজনীতি চর্চার মূল হোতা ওবায়দুল কাদের দাবি করে সেসব নেতারা বলেন, এসব নেতাদের শোধরানোর জন্য বিচার হওয়া উচিত। তাদের বিচারের আওতায় এনে আওয়ামী লীগকে পরিশুদ্ধ হতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন