সময়টা ২০১৯ থেকে ২০২৪। মাত্র ৫ বছর। দলের জেলা শাখার সভাপতি হন এবং সেই সভাপতির জোরে উপজেলা চেয়ারম্যান ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হন। আর এ পাঁচ বছরেই শতকোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দিয়ে ১ম পক্ষের এক ছেলেকে রাজউকে চাকরি দিয়েছেন। আরেক ছেলেকে রাতারাতি বানিয়ে দিয়েছেন শিল্পপতি। তার বিপক্ষে গেলে দলের নেতাদের পদ-পদবি তো যেতই, মিথ্যা মামলায় জেলেও যেতে হতো। আলোচিত ব্যক্তি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য সাবেক এমপি মজিবর রহমান মজনু। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ১১ গুণ। জানা যায়, মজনু বগুড়া জেলা
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর সভাপতি নির্বাচিত হন। এ বছরই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ক্যাশ কামাল খ্যাত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামালের আস্থাভাজন হওয়ায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট বাগিয়ে নেন তিনি। পদবাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের শিক্ষক নিয়োগ, হাট-বাজার ইজারা, পুকুর-জলাশয় ইজারা- সবকিছুতেই কমিশন নিতেন মজনু। এমপি হওয়ার পর থেকে টিআর-কাবিখা প্রকল্পে লুটপাট শুরু করেন। তার ইশারায় চলত ধুনট- শেরপুর উপজেলা ও বগুড়া জেলা প্রশাসন। কামাল হোসেনের যোগসাজশে পদবাণিজ্য করে গত চার বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছন মজনু।
শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট তোজাম্মেল জানান, কমিটি ঘোষণার আগের দিন তার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। তিনি কামালের পিএসের কাছে তিন লাখ টাকা দিলে পরদিন তার নাম ঘোষণা হয়। কিন্তু পরে ২ লাখ টাকা দিতে না পারায় মূল কমিটিতে তাকে অন্য পদে রাখা হয়। এ ছাড়া সম্মেলনের আগে রাতে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বিক্রি করেন সাবেক বিএনপি কর্মী মৎস্য ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের কাছে।
বগুড়ার ১০৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে টাকার বিনিময়ে দলের ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মজনুর বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে ধুনট উপজেলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হেলাল উদ্দিন জানান, টাকা দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছ থেকে টিকিট নেননি। তাই দলীয় মনোনয়নও পাননি। এমপি হওয়ার পর থেকেই মজনুর ১ম পক্ষের সন্তান ও ২য় স্ত্রী সবাই মিলে বিভিন্ন টেন্ডারবাজি ও বালুমহাল দখল করতে থাকে। তার ২য় স্ত্রীর অত্যাচারে দলের নেতাকর্মীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা তুলে নিয়েছেন ধুনট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ স্বপনের মাধ্যমে।
ধুনটের ভা-ারবাড়ি ইউনিয়নের পুখুরিয়া ঈদগাহ মাঠের সভাপতি আমজাদ হোসেন বলেন, ঈদগাহ মাঠ সংস্কারের জন্য বরাদ্দ টাকার পুরোটাই স্বপন গায়েব করে দেন। ভা-ারবাড়ি ইউপি সদস্য সুলতান মাহমুদ জানান, ১টি রাস্তার প্রকল্পে তিনি সভাপতি হলেও স্বপন নিম্নমানের ইট ব্যবহার করে রাস্তার কাজ শুরু করেন। এভাবে প্রতিটি প্রকল্পের সভাপতিকে দিয়ে জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে বিল পাস করিয়ে কাজ করেছেন মজনু ও ছাত্রলীগ নেতা স্বপন।
এদিকে শেরপুর টাউন ক্লাব পাবলিক লাইব্রেরি মহিলা কলেজের সভাপতি থাকাকালে মজনুর দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে তৎকালীন অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করায় অধ্যক্ষকে বহিষ্কার করা হয়। নানান অভিযোগে মজনুর সভাপতির পদ বাতিল হলেও তিন মাস পর ক্ষমতার জোরে তিনি আবার ওই কলেজের সভাপতি হন।
শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বিয়া জানান, পৌর নির্বাচনে মজনুর ছেলের বিরুদ্ধে নমিনেশন তোলায় আমাকে বহিষ্কার করা হয়। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই সপরিবারে আত্মগোপনে আছেন মজনু। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২০টি মামলা দায়ের হয়েছে। পলাতক থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে মজনুর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন