ফেরদৌসী আলম নীলা। তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। তার চেয়ে স্থানীয়দের পরিচিত ছিলেন সাবেক নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীরের আস্থাভাজন হিসেবে। আর এ সুযোগে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হন নীলা। স্থানীয়রা জানান, নীলা ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পর অনিয়ম-দুর্নীতর মাধ্যমে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি-বেসরকারি মালিকাধীন জায়গা, পূর্বাচলে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা দখল করে নিজ নামে মার্কেট বানানোর অভিযোগ রয়েছে। নীলা এসব অপকর্ম করেছেন মন্ত্রী গাজীর মদদে। তাই এ নিয়ে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনি।
জানা যায়, নীলার থাবা থেকে বাদ যায়নি প্রতিবন্ধী এমনকি হিন্দুদের শ্মশানের জায়গাও। তাই গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে সরব রূপগঞ্জবাসী। এ নিয়ে কালসরি শিলা পাল ও সুমন কর্মকার বলেন, সাবেক এমপি গাজীর সহয়তায় নীলা তাদের বাড়ি ও ক্ষেত মিলে ২৪ শতাংশ জমি দখল করেছেন।
আরও জানা যায়, পূর্বাচলে ৩০০ ফুট রাস্তার পাশে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের জন্য সংরক্ষিত বিশাল সম্পত্তির ওপর নীলা নিজ নামে মার্কেট বানিয়ে দোকান ভাড়া দিয়েছেন। মার্কেটের পাশেই আরেকটি প্লট দখল করে বানিয়েছেন ক্লাব। প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত জায়গার ওপর তৈরি করেছেন লেডিস ক্লাব। পূর্বাচলে একটি কনভেনশন সেন্টারের জন্য বরাদ্দ করা শতকোটি টাকার ৭৬ কাঠা জমি নিয়ে রেখেছেন নিজের কব্জায়। শীতলক্ষ্যার তীরে প্লট দখল করে সেখানে চালিয়েছেন কয়লা-পাথর-বালুর ব্যবসা। তৎকালীন সময়ে তার এসব দুর্নীতি নিয়ে খবর প্রকাশ হলেও ছিলেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। কেননা তার শক্তির খুঁটি ছিলেন গাজী গোলাম দস্তগীর।
নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নীলাকে ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট তলব করে দুদক। ‘পূর্বাচল কনভেনশন লিমিটেড’-এর নামে বরাদ্দ করা প্লট অবৈধভাবে নাম পরিবর্তন করে ‘পূর্বাচল নীলা কনভেনশন লিমিটেড’ করার অভিযোগে তাকে তলব করা হয়। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগও ছিল। ওই সময় দুদকের সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাস ও আফনান জান্নাত কেয়ার সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দলও গঠন করা হয় নীলার দুর্নীতি তদন্ত করার জন্য।
এদিকে নীলার এসব দখল-দৌরাত্মে আর ক্ষমতার অপব্যবহারের জেরে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে ২০২২ সালের আগস্টে তাকে বহিষ্কার করা হয়; কিন্তু গাজীর প্রভাবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে বাধ্য হয় জেলা আওয়ামী লীগ। মাস না পেরোতেই আবার স্বপদে পুনর্বহাল হন নীলা। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি।
পলাতক থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে নীলার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন