শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যু নিয়ে সম্প্রতি একটি পত্রিকার সম্পাদকের কাছে সাক্ষাৎকার দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সেখানে বলা হয়, শেখ হাসিনা পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই। মূলত সাক্ষাৎকারে দেওয়া রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্যকে ঘিরে দেশজুড়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে গত মঙ্গলবার বঙ্গভবন ঘেরাও করে কয়েকটি সংগঠন। একই দিন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে আলটিমেটামও দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
পরদিনই বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে তারা জানান, এই মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকট তৈরি হোক সেটি তারা চান না।
এরপর শনিবার বিএনপির সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বৈঠক করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।
কিন্তু ছাত্র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও তাদের আগের অবস্থানে অনড় ছিল বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা এই ইস্যুতে সংকট বা সাংবিধানিক শূন্যতা চাইছি না দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রে উত্তরণের স্বার্থে।
কারণ হিসেবে বিএনপি অবশ্য বলছে এই মুহূর্তে এই সংকট তৈরি হলে তা অন্য কোনো অসাংবিধানিক শক্তিকে সুযোগ করে দিতে পারে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন সাংবিধানিক সংকটের চেয়ে রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুটি আরও বেশি রাজনৈতিক।
বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান বলেন, বিএনপি খুব ভালো করে জানে এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে সরকার গঠন করতে পারবে। আর রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যু সামনে আসলে তখন নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। সে কারণেই হয়তো বিএনপির আপত্তি।
এর আগে ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছিলেন, ‘আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আজ বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা হয়। শুরুতেই সেনাপ্রধান বিরাজমান সার্বিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাঁর আলোচনা সম্পর্কে আমাকে অবহিত করেন। রাজনৈতিক নেতারাও এ সময় তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।’
এরপর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের মতামত জানতে চাওয়া হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে আপিল বিভাগের সব বিচারপতি মতামত দেন। এর ভিত্তিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয় ৮ আগস্ট। সেদিন সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন