বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার অবস্থান লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনা ঘটেছে ঢাকাসহ সারা দেশের ১২ জেলায়। ইতিমধ্যেই গুলিবর্ষণকারী ১২৬ জনকে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চট্টগ্রামে শনাক্ত হয়েছে ১২ জন অস্ত্রধারী। এর মধ্যে এ যাবৎ গ্রেপ্তার হয়েছে দুইজন।
নগর পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা রবিবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে দেশ রূপান্তরকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত ১৬ জুলাই নগরের মুরাদপুর এবং ১৮ জুলাই বহদ্দারহাট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করলে পাঁচ শিক্ষার্থীসহ ছয়জন নিহত হন। সবশেষ গত ৬ অক্টোবর রাতে নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে এইচ এম মিঠু নামে মহানগর যুবলীগের এক কমীর্কে ‘গ্রেপ্তার’ করে পুলিশে সোপর্দ করে র্যাব-৭। পরে চান্দগাঁও থানা পুলিশ যাচাই করে গণমাধ্যমকে জানায়, র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ব্যক্তি যুবলীগ কর্মী এইচ এম মিঠু নন। মূলত তার প্রকৃত নাম জাহিদুল আলম মিঠু। তিনি একজন কাঠ ব্যবসায়ী। গত ১৮ সেপ্টেম্বর নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর একে-৪৭ রাইফেল দিয়ে গুলিবর্ষণের অভিযোগে যুবলীগকর্মী সোলায়মান বাদশাকে নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানা এলাকা থেকে মো. মিজান (৩৩) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৭।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, কোতোয়ালী, নিউমার্কেট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি মহানগর যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের কিছু নেতাকর্মীকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও ঘটনার সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ১২ জনের পরিচয় ইতিমধ্যেই নিশ্চিত হয়েছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ।
নগর পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, নগরে মুরাদপুর ও বদ্দারহাট এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা গেছে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী ওরফে বাবরকে। তিনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া যুবলীগের কর্মী মো. তৌহিদ ও মো. ফিরোজকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা গেছে। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে আরও যারা মহড়া দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মহিউদ্দিন মাহমুদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী মো. দেলোয়ার, মোহাম্মদ জালাল ওরফে ড্রিল জালাল, যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ ফরিদ, ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ তাহসিন, যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ জাফর, এইচ এম মিঠু ও সোলেমান বাদশা।
বাকি ১০ জন অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘থানায় হামলা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় মাঝখানে অভিযান চালানো যায়নি। অস্ত্রধারীদের বেশির ভাগই গা-ঢাকা দিয়েছেন। এখন অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন