শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ডাস্টবিনে পরিত্যক্ত একজন নেত্রী। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের চেষ্টায় হাজারেরও বেশি মানুষ হত্যা করেছেন। রংপুরের আবু সাঈদ, খুলনার মুগ্ধদের রক্তে রঞ্জিত তার হাত।
ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট তিনি রাজনৈতিক মুরুব্বি ভারতে পালিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং মন্ত্রী-এমপিদের বিপদে ফেলে তিনি বোন রেহানাকে নিয়ে পালিয়েছেন। লক্ষণ সেনের মতো তার এ পালানোর ঘটনায় তিনি ধিকৃত হচ্ছেন। পৃথিবীর প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাকে জায়গা দিচ্ছে না গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায়। কিন্তু ১৫ বছর ভারতের তাবেদারি করায় ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে। দিল্লিতে নিরাপদে থেকে শেখ হাসিনা ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতন, জুডিশয়াল ক্যূ, ১৫ আগস্টে ঢাকায় ১০ লাখ লোকের সমাগম বিশৃংখলা সৃষ্টি, আনসারদের দিয়ে সচিবালয় ঘেড়াও, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দাবি দাওয়ার আন্দোলনে উস্কে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি এমনকি পাহাড়ে বিশৃংখলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ফলে শেখ হাসিনা একজন মিথ্যাবাদী, দুর্নীতিবাজ, কপট, হিংসুটে নেত্রী হিসেবে চিহ্নিত। মানুষ তার নাম শুনলেই থুথু ফেলেন। সেই পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার হারানো ইমেজ উদ্ধারে মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে ভারত ও বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া। তারা লুটেরা হাসিনাকে আর্থিকভাবে দুর্বল হিসেবে প্রচার করে জনগণের অনুকম্পা আদায়ের চেষ্টা করছেন। ভারত ও বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া ‘ভারতে ৩০ হাজার টাকার শপিং করে বিপাকে হাসিনা’ ফেইক নিউজ প্রচার করে। সামাজিক যোগাযো মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। সত্যিই কি হাসিনা আর্থিকভাবে দুর্বল? আরেক খবরে প্রচার করা হয় শেখ হাসিনা দিল্লিতে একটি পার্কে হাটতে বেরিয়েছেন।
ভারতের একাধিক মিডিয়া এবং বাংলাদেশে শেখ হাসিনা রেজিমে সুবিধাভোগী এবং সেবাদাস মিডিয়াগুলোতে প্রচার করা হয় ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে মাত্র ৪৫ মিনিটেই ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। তখন দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানসেনাদের ঘাঁটিতেই রয়েছেন। হাতে নামমাত্র সময় পাওয়ায় আসার সময় জামা-কাপড়, নিত্যব্যবহৃত জিনিসপত্র কিছুই নিয়ে যেতে পারেননি কেউ। ৫ আগস্ট থেকে ৪৫ দিনের বেশি সময় ধরে ভারতের আশ্রয়েই রয়েছেন হাসিনা। সামনে কোথায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেবেন হাসিনা, তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। হাসিনা গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানসেনা ঘাঁটিতে একটি শপিং সেন্টারে নিজের এবং বোনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে যান। জামাকাপড়ের পাশাপাশি অন্যান্য জিনিসও কেনেন হাসিনা ও তার সহযোগীরা। সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার কেনাকাটা করেন তিনি। ভারতীয় মুদ্রায়ই দাম মেটাতে যান হাসিনা। কিন্তু কিছু টাকা কম পড়ে। এরপর বাংলাদেশের মুদ্রা দিয়ে বাকি দাম মিটিয়ে দেন তিনি।’
ভারতীয় মিডিয়ার গাঁজাখুরি এ খবর ঢাকা থেকে প্রকাশিত কয়েকটি গণমাধ্যম ফলাও করে প্রচার করে। ভাবখানা এই যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা পয়সা নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাননি। বাস্তবতা কি তাই বলে? ৫ আগস্ট পালানো দুই দিন আগে গণভবনে বস্তায় বস্তায় টাকা তিনি পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন আইন শৃংখলা বাহিনী যাতে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করে আন্দোলন দমন করে। সম্প্রতি চাকরিচ্যুত মনিরুল ইসলাম নামের এক কর্মকর্তাই ২৫ কোটি টাকা ভাগে পেয়েছেন। এ খবর দেশি বিদেশী গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। ভয়ঙ্কর খুনি চাকরিচ্যুত মনিরুল ইসলাম টাকা নেননি দাবি করলেও তার সহযোগীরাই জানিয়েছে তিনি আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে দিতে গণভবন থেকে টাকা নিয়েছেন। ওই সময় হাসিনা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাসহ আরো কর্মকর্তাদের ওইদিন টাকা দিয়েছেন আন্দোলন ঠেকানোর জন্য। শুধু তাই নয় শেখ হাসিনা যখন পালিয়ে যান তখন সঙ্গে নিয়ে যান কয়েকটি ব্রিফকেস। ওই ব্রিফকেসে কি ছিল? তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া হোক শেখ হাসিনার কাছে টাকা নেই। কিন্তু তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল থাকেন দিল্লিতে, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় থাকেন আমেরিকায়, সঙ্গে ছিলেন ব্রিটেনের পাসপোর্টধারী বোন শেখ রেহানা, কার ভাগিনি টিউলিপ যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী তারা কি শেখ হাসিনাকে টাকা দিতে পারেননি? এটাকি বিশ্বাসযোগ্য যে শেখ হাসিনা মার্কেটে নিয়ে শপিং করে টাকা দিতে না পেরে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। বাস্তবতা কি বলে?
বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনা দিল্লির অনতিদূরে গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানসেনাদের ঘাঁটিতে নামেন। সেখানে তাকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়। পরবর্তীতে তাকে দিল্লিতে এক নির্জন বাসায় কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে রাখা হয়েছে।হাসিনাকে এমন নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে যে দিল্লিতে অবস্থানরত তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থানরত পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি আসতে চেয়েছিলেন, ভারত থেকে তাকে জানিয়ে দেয়া হয় দিল্লি আসতে বাধা নেই তবে নিরাপত্তার কারণে তাকে মা হাসিনার সঙ্গে দেয়া করতে দেয়া হবে না। দিল্লিতে হাসিনার এই যখন অবস্থা তখন তিনি মার্কেটে শপিং করতে যান কিভাবে? মার্কেটে যাওয়ার কি সুযোগ আছে? শেখ হাসিনা দিল্লির পার্কে ঘুড়েন কিভাবে? তার কি সে সুযোগ রয়েছে? ভারত ও বাংলাদেশের হাসিনার অলিগার্ক মিডিয়াগুলোর এমন ফেইক নিউজ প্রচারের রহস্য কি? রহস্য আর কিছুই নয়, শেখ হাসিনার হারানো ইমেজ উদ্ধারের চেষ্টা। ‘হাসিনা পালায় না, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা পালিয়ে যায় না’ এমন দম্ভোক্তি করার কিছুদিন পরই তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান। উল্লেখ বাংলাদেশের আর কোনো নেতা গণঅভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে জনরোষ থেকে বাঁচতে পালিয়ে যাননি।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার লাল পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। আর ভারতে বিনা পাসপোর্টে ৪৫ দিন থাকার মেয়াদও শেষ হয়েছে। এখন হাসিনাকে ভারত কিভাবে আশ্রয় দেবে তা জানা যায়নি। তবে শেখ হাসিনা পালানোর পর য্ক্তুরাষ্ট্র তার ভিসা বাতিল করে দিয়েছে। যুক্তরাজ্য জানিয়ে দিয়েছে তারা গণহত্যাকারীদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিবেন না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলোও কোনো গণহত্যাকারীকে আশ্রয় দেয় না। তবে শেখ হাসিনা ভারতের পাশাপাশি রাশিয়া, বেলারুশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের চেষ্টা করছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন