দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ও সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে ‘ভোটারের কম উপস্থিতি’ দলের সাফল্য হিসেবে দেখছে বিএনপি। ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করাকে তাদের ‘একটি বড় অর্জন’ বলেও মনে করছে রাজপথের বিরোধী দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এক বছরের বেশি সময় ধরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল বিএনপি। শেষ পর্যন্ত বিএনপি এবং তার রাজনৈতিক মিত্ররা এ নির্বাচন বর্জন করে।
নির্বাচনের কয়েকদিন আগে থেকে কঠোর কর্মসূচি থেকে সরে এসে বিএনপি লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচি দেয়। আর নির্বাচনের পর তারা সারাদেশে কালোপতাকা মিছিল করে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন ঠেকাতে এসব কর্মসূচি বাহ্যিকভাবে সফলতা না পেলেও ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। তাদের দাবি, সাধারণ মানুষও এই নির্বাচন বর্জন করেছে। আর এটিই বিএনপির বড় অর্জন।
এদিকে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের আহ্বান জানায় বিএনপি। জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করে লিফলেট। নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানিয়ে করা হয় তৃণমূল সভাও।
এর মধ্যে দলটির অনেকের শঙ্কা ছিল দলের বিপুলসংখ্যক নেতা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেওয়াদের সেই সংখ্যা ছিল নগন্য। এটিও সফলতা হিসেবে দেখছে বিএনপি।
৭ জানুয়ারির নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনে যে কয়েকজন স্থানীয় নেতা অংশ নেন, তারা বিএনপিতে বাদ পড়েছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনের পর দেখা গেছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল।
বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গেও তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের তুলনা টানছেন। তাদের ভাষ্য, রাহুল তরুণ প্রজন্মের কাছে আইকন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ১২ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিয়ে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বিএনপি সূত্র বলছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিয়ে দল গোছাতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। আবার এই সুযোগে দলের সিনিয়র নেতাদের একটি অংশ তাদের অনুসারীদের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। ফলে অনেক যোগ্য ও পরীক্ষিত তরুণনেতা মূল নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়ছেন বলেও দলের মধ্যে অভিযোগ রয়েছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সাড়ে ছয় বছর ধরে বন্দি। আবার এর মধ্যে দলের ৫০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই সাজাপ্রাপ্ত। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখাই ছিলো বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে সফল হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিএনপি নেতাদের দাবি, লণ্ডন থেকে দল পরিচালনা করলেও বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বড় কৃতিত্ব। আর এ কারণে ২০১৪, ১৮ এবং ২৩ সালের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পরও কর্মীদের মনোবল ভাঙেনি।
বিএনপি সূত্র বলছে, দলের নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মতামতকে গুরুত্ব দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তবে আন্দোলন-সংগ্রামের বিষয়ে কয়েকজন তরুণ নেতার সঙ্গে সমন্বয় করেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা ঢাকা টাইমসকে জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিনিয়র নেতাদের অলংকার মনে করেন। নীতি-নির্ধারণের বিষয়ে তিনি সিনিয়র নেতাদের মতামতকেই প্রাধান্য দেন।
তিনি বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। তাই এ দলে প্রতিটি সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিকভাবে এবং নীতিনির্ধারণী সভায় সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই তারেক রহমান সিদ্ধান্ত নেন।
এ বিষয়ের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা টাইমসকে বলেন, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে দাবি আদায় করা কঠিন। সেক্ষেত্রে আন্দোলনের পাশাপাশি কিছু কৌশলও অবলম্বন করতে হয়। জনগণ একতরফা ভোট বর্জন করে রাষ্ট্রযন্ত্র এবং মারমুখী প্রশাসনকে জবাব দিয়েছে।
তিনি বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বের কারণে এত জেল-জুলুম ও নির্যাতনের পরও বিএনপি দেশের বৃহত্তর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে আছে এবং থাকবে। আর তারেক রহমানের নেতৃত্বেই এ দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা টাইমসকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ দুর্দশায় পড়েছে। আর নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপিকে আগামী সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে। এবং প্রমাণ হবে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি টিকে আছে এবং থাকবে। নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে জনতার নেতা হিসেবে দেশে বিদেশে তারেক রহমানের গ্রহণযোগ্যতা আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকা টাইমসকে বলেন, নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে জনগণ সাড়া দিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই যে সঠিক ছিলো তা জনগণও উপলব্ধি করতে পেরেছে।
বিএনপির প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও চাঁদপুর জেলার সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত তা জনগণেরই সিদ্ধান্ত। খালেদা জিয়া যেমন জনগণের পালস বুঝতে পারেন তেমনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও বুঝতে পারেন।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন