বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি করে ভোটে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের নিশ্চয়তা পাওয়ার পর মনোনয়নপত্র জমা দেন জোটের নেতারা। এবার মহাজোট শরিকদের আলাদা রেখেই এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় পার হলেও আসন বণ্টন করেনি দলটি। শরিকদের মাত্র দুটি আসন ছেড়ে ২৯৮ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এটি নিয়ে রাজনীতিক মহলে চলছে নানা আলোচনা।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, বিষয়টি শিগগির স্পষ্ট হবে। অন্যদিকে, শরিকরা বলছেন এটি দলীয় মনোনয়নের তালিকা। এখানে জোটের প্রার্থীদের নাম থাকার প্রশ্নই আসে না। তবে জোট নির্বাচনের আগে-পরে সব সময়ই থাকবে। রাজনৈতিক প্রয়োজনে জোট হয়েছে, সেই প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি বরং বেড়েছে।
বর্তমান সংসদে মহজোটের আসন ১০টি। এসব আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। এতে শঙ্কা তৈরি হয়েছে সমঝোতা না হলে এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত হ্যাভিওয়েট নেতারা মাঠে থাকলে শরিকদের পাস করে আসা কঠিন হবে। পাশাপাশি ডামি প্রার্থী হিসেবে ধরার মতোও নেতা নন তারা।
‘আওয়ামী লীগের মনোনীত নেতাদের মোকাবিলায় শরিক দলের প্রার্থীদের পাশ করে আসা সম্ভব নয়। কারণ আওয়ামী লীগের কর্মীদের সামনে দাঁড়ানোর মতো কর্মী ও জনবল নেই তাদের।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসন থেকে তিন বার সংসদ সদস্য হয়েছেন। তিনি এবারও মনোনয়নপত্র কেনেন এ আসনে। কিন্তু এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে দেওয়া হয়েছে দলীয় মনোনয়ন। এখানে মনোনয়নপত্র জমা দেননি রাশেদ খান মেনন। তিনি পরে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদি) এ দুটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার আসন রাজশাহী-২ এ রাজশাহী মহানগর সভাপতি মোহাম্মদ আলীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির আরেক নেতা মোস্তফা লুৎফুল্লাহর সাতক্ষীরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের ফিরোজ আহমেদ স্বপন পেয়েছেন মনোনয়ন।
কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগ কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। তবে কুষ্টিয়া-২ আসনে ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দলটির সাধারণ সম্পাদকের আসনে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এপিএস আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে দেওয়া হয়েছে। জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এর আগে ফেনী-১ আসনে নৌকা প্রতীকে ভোট করে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
‘সামনের দিনগুলো খুব সুখময় হবে না। অর্থনৈতিক স্যাংশনস এর কথাও আসছে। সুতরাং জোট সঙ্গীদের লাগবে।’
দলটির আরেক নেতা একেএম রেজাউল করিম তানসেনের বগুড়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগ হেলাল উদ্দিন কবিরাজকে মনোনয়ন দিয়েছে।
১৪ দলের জোটের আরেক শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) একমাত্র সংসদ সদস্য দলটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তার পিরোজপুর-২ আসনে কানাই লাল বিশ্বাসকে প্রার্থী করছে আওয়ামী লীগ।
বিকল্প ধারার আব্দুল মান্নানের লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ফরিদুন নাহার লাইলী এবং মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মহিউদ্দিন আহমেদকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বাশার মাইজভাণ্ডারীর চট্টগ্রাম-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন খাদিজাতুল আনোয়ার।
একইভাবে ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল বলে খ্যাত মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির একটি বাদে বাকি আসনগুলোতেও প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘‘আওয়ামী লীগের মনোনীত নেতাদের মোকাবিলায় শরিক দলের প্রার্থীদের পাস করে আসা সম্ভব নয়। কারণ আওয়ামী লীগের কর্মীদের সামনে দাঁড়ানোর মতো কর্মী ও জনবল নেই তাদের।’’
‘১৪ দলীয় জোট আদর্শিক জোট। ভেতরে ভেতরে কথাবার্তা হচ্ছে। সব কিছু পরিষ্কার হতে সময় লাগবে।’
রোববার (২৬ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এসময় তিনি জানান, জোটের শরিকদের আসন ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রতিপক্ষ যদি বড় জোট করে তবে আমাদের জোট হবে, তা ছাড়া প্রয়োজন না থাকলে তো জোট করবে না আওয়ামী লীগ। এসময় জোটের প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কাদের।
বিষয়টি নিয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের যা বলেছেন, সেটা তার ব্যক্তিগত মত। মনোনয়নের ঘোষিত তালিকাটি আওয়ামী লীগের দলীয়। সেখানে জোট বা অন্য দলের প্রার্থীদের নাম থাকার প্রশ্নই আসে না। তবে রাজনৈতিক কারণেই জোট থাকছে, সেটা বিএনপি নির্বাচনে আসুক বা না আসুক।’
এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘সামনের দিনগুলো খুব সুখময় হবে না। অর্থনৈতিক স্যাংশনসের কথাও আসছে। সুতরাং জোট সঙ্গীদের লাগবে।’
দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা জাগো নিউজকে বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই আসন ভাগাভাগির বিষয় চূড়ান্ত হবে। তারপরই বোঝা যাবে পুরো বিষয়টি।’
এদিকে, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘জোট নেত্রী পরিষ্কার বলেছেন, বিএনপি এলেও জোট থাকবে, না এলেও জোট থাকবে। এখনো যেহেতু ভিন্ন কোনো ঘোষণা দেননি। তাহলে আগের কথাই বহাল আছে। তাই আমরা ভিন্ন কিছু ভাবছি না।’
তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৪ দলীয় জোট আদর্শিক জোট। ভেতরে ভেতরে কথাবার্তা হচ্ছে। সব কিছু পরিষ্কার হতে সময় লাগবে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমদু স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক হবে। এজন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে। প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরবর্তী পরিস্থিতির আলোকে সময়োপযোগী কৌশল অবলম্বন করা হবে।’
তবে জোট নেতাদের আশা জোটের শরিকদের আসনসহ নতুন মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ শুধু সময়ের অপেক্ষা। একইভাবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারাও বলছেন, এই তালিকা পরিবর্তনসহ জোট শরিকদের নিয়ে নতুন তালিকা শিগগির আসছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন