দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোকে ধন্যবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলন কীভাবে আরও বেগবান কিংবা নির্বাচনকে আরও কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন করা যায়- সে চেষ্টাও চালাবে দলটি।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে যেসব দল নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেসব দলকে বিএনপির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হবে। দলগুলোকে চলমান আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগও নেওয়া হবে।’
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, যেসব দল নির্বাচনে যাচ্ছে না, সেসব দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দৈনিক আমাদের সময়কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^রচন্দ্র রায় বলেন, ‘সরকারের সুবিধাভোগী ছাড়া দেশের সব জনগণ ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বেশিরভাগ দলের নির্বাচন বর্জনে তা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আশা করি, দেশের সব রাজনৈতিক দল এবারের আন্দোলনে মাঠে নামবে।’
দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির ১৪ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আটজন কেন্দ্রীয় নেতা। তারা হলেন- ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ একে একরামুজ্জামান, তাঁতীবিষয়ক সহ-সম্পাদক রাবেয়া সিরাজ, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, শাহ শহীদ সারোয়ার, মতিউর রহমান মন্টু, খন্দকার আহসান হাবিব এবং একেএম ফখরুল ইসলাম। বাকি ছয়জন তৃণমূলের।
বহিষ্কার হওয়া কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন। বিএনএমে যোগ দিয়ে শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ফরিদপুর-৪ আসনে এবং মতিউর রহমান মন্টু রাজশাহী-৩ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ‘স্বতন্ত্র গণতন্ত্র মঞ্চ’ গঠন করে টাঙ্গাইল-৫ আসনে খন্দকার আহসান
হাবিব এবং ঝালকাঠি-২ আসনে একেএম ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সৈয়দ একে একরামুজ্জামান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে এবং শাহ শহীদ সারোয়ার ময়মনসিংহ-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
রাবেয়া সিরাজ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত শাহজাহান সিরাজের স্ত্রী। টাঙ্গাইল-৪ আসনে প্রার্থী হয়েছেন তার মেয়ে শুক্লা সিরাজ। আর দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মেয়ের পক্ষে কাজ করছেন রাবেয়া।
জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বহিষ্কৃত নেতারা হলেন- শেরপুর জেলার সহদপ্তর সম্পাদক জায়েদুর রশিদ শ্যামল, সদস্য আবদুল্লাহ, পঞ্চগড় জেলার সদস্য আব্দুল আজিজ, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সদস্য মাহবুবুল হাসান, ঢাকার ধামরাই পৌর বিএনপির সভাপতি দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জু ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আবদুল মতিন। তাদের মধ্যে বিএনএম থেকে শেরপুর-১ আসনে আবদুল্লাহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আবদুল মতিন, তৃণমূল বিএনপি থেকে শেরপুর-২ আসনে জায়েদুল রশিদ শ্যামল, পঞ্চগড়-২ আসনে আব্দুল আজিজ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জামালপুর-১ আসনে মাহবুবুল হাসান এবং ঢাকা-২০ আসনে দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এক সময়ে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন, নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন, দীর্ঘদিন থেকে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই- এমন কয়েকজন সংসদ সদস্যও এবার নির্বাচন করছেন।
এদের মধ্যে সদ্য নিবন্ধিত তৃণমূল বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে নির্বাচন করছেন মৌলভীবাজার-২ আসনের এমএম শাহীন, লক্ষ্মীপুর-১ আসনের এমএ আউয়াল, সাতক্ষীরা-৪ আসনের এইচএম গোলাম রেজা, ঝিনাইদহ-২ আসনে নুরুদ্দিন আহমেদ ও মেহেরপুর-২ আসনে আবদুল গণি।
বিএনএমে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে শাহ আবু জাফর ছাড়াও আছেন বরগুনা-২ আসনের আবদুর রহমান, সাতক্ষীরা-৪ এইচএম গোলাম রেজা, নীলফামারী-১ জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, জামালপুর-৪ মামুনুর রশিদ এবং সুনামগঞ্জ-৪ দেওয়ান শামসুল আবেদিন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আছেন বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে জিয়াউল হক মোল্লা, কুমিল্লা-৫ আসনে শওকত মাহমুদ, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে আখতারুজ্জামান ও ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে দেলোয়ার হোসেন খান দুলু।
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, তাদের হিসাবে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ৬০টি দল এবারের নির্বাচন বর্জন করেছে। এ তালিকায় রয়েছে- বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এলডিপি, বিজেপি (পার্থ), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, খেলাফত মজলিশ, মুসলিম লীগ, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাগপা (রাশেদ প্রধান), জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি (ফারুক), ইসলামিক ঐক্যজোট, ন্যাপ ভাসানী, ইসলামিক পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় দল। তালিকায় আরও রয়েছে- ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা (লুৎফর), বিকল্পধারা বাংলাদেশ (নুরুল আমিন বেপারী), গণদল, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক লীগ, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, পিপলস পার্টি, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), গণফোরাম, পিপলস পার্টি (একাংশ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (একাংশ), গণঅধিকার পরিষদ (রেজা), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ (নুর), সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা, গণমুক্তি ইউনিয়ন, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ, বাসদ (মাহবুব), জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, জাতীয় গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশ জাসদ।
শেষমেশ নির্বাচনে যাননি যারা
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলনের নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে নানা গুঞ্জন ছিল। এ ছাড়াও বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কর্নেল (অব) এম আনোয়ারুল আজিম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত কুমিল্লার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে নিয়ে গুঞ্জন ছিল। কারাবন্দিদি নেতাদের নিয়ে নানা গুঞ্জন ছিল। গত ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে সেই গুঞ্জনের অবসান ঘটেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন