ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বাড্ডা থানার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা নিয়ে চরম বিপাকে স্থানীয় অধিবাসীরা। বিশেষ করে বাড্ডার নিম্নাঞ্চল বলে পরিচিত আনন্দনগর, পোস্ট অফিস গলি, সাহাবউদ্দিন মোড়, বাজার গলি, বড়টেক জোড়া খাম্বা, আদর্শনগর, পূর্ব মেরুলের টেকপাড়া এবং ডিআইটি প্রজেক্টের ভিতরের দিকে সামান্য বৃষ্টি হলেই তৈরি হয় জলাবদ্ধতা; স্থবির হয়ে যায় দৈনন্দিন জীবন। এমনকি পূর্ব মেরুলের নিমতলা মহাদেব আশ্রম ও কালীমন্দিরের মধ্যেও পানি ঢুকে পড়ে।
এ বিষয়ে স্থানীয় অধিবাসী তৌহিদুল ইসলাম রিয়াজ যুগান্তরকে বলেন, বর্ষাকাল আসলেই আমাদের দুর্গতি শুরু হয়, সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাঁটুপানি জমে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সারা বছরই আমরা জলাবদ্ধতার ভিতর থাকি তবে বর্ষাকালের ৩-৪ মাস জলাবদ্ধতায় আমাদের দুর্গতি চরম আকার ধারণ করে। অনেকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েও এর কোনো সমাধান পাচ্ছি না।
আনন্দনগরের স্থানীয় অধিবাসী আব্দুল্লাহ আল মামুন যুগান্তরকে জানান, জলাবদ্ধতা দূর করার উদ্যোগগুলো অনেকটাই যেন সাময়িক আপদ মেটানোর লক্ষ্য। সমস্যাটির স্থায়ী সমাধানের জন্য যে সুদূরপ্রসারি ও সমন্বিত পরিকল্পনা করা প্রয়োজন, তা করা হয় না।
জলাবদ্ধতা বিষয়ে স্থানীয় মুদি দোকানি নিজাম জানান, গত ৩-৪ দিনের টানা বৃষ্টিতে তৈরি হওয়া জলাবদ্ধতায়, আমার দোকানে হাঁটুপানি জমে। এতে চাল, ডাল, আলু-পেঁয়াজ ছাড়া আরও অনেক মুদি মাল নষ্ট হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে দোকান বন্ধ রেখেছিলাম গত দুই দিন।
পোস্ট অফিস গলির বাসিন্দা মনিরুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, দীর্ঘদিন যাবত এই ভোগান্তিতে আমরা। সারা বছরই এখানে জলাবদ্ধতা থাকে। শুধু জলাবদ্ধতা নয়, অপরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। ড্রেনের পানিতে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি। একবার পানি জমলে দীর্ঘদিন সময় নেয় নামতে। অভিজাত গুলশানের পাশেই আমরা কিন্তু সুযোগ-সুবিধায় অনেক বৈষম্যের শিকার এই এলাকার মানুষ।
তিনি বলেন, ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয় না বলেই অল্প বৃষ্টিতে এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা এখন অচল হয়ে আছে। শুক্রবার নিজেদের ব্যবহৃত পানিতে রাস্তা তলিয়ে যায়। জুমার নামাজ পড়তে পারি না। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। রিকশাযোগে আমার বাচ্চাকে কিছুদিন স্কুলে পাঠিয়েছিলাম। তবে সবসময় রিকশা পাওয়া যায় না। কয়েকবার ময়লা পানি মাড়িয়ে স্কুলে যেতে হয়েছিল। পরবর্তীতে আমার বাচ্চার মারাত্মক চর্মরোগ দেখা দেয়। তাই বর্ষা মৌসুমে স্কুলে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ভারি বর্ষণ হলে আমি অফিসে দুই সেট কাপড় নিয়ে যাই। কারণ ভারি বর্ষণে কোমর পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায়। তখন রিকশা, গাড়ি সবাই ডুবে যায়। আর রিকশা তো পাওয়াই যায় না।
ডিআইটি প্রজেক্টের বাসিন্দা ফাবিহা জাহান বলেন, এই পানির জন্য দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ রিকশা ও সিএসজি ভাড়া দিয়ে আমাদের চলাচল করতে হয়। বিভিন্ন অলিগলিতে পানি জমে থাকার জেরে ডেঙ্গু মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে এলাকাগুলো। জলাবদ্ধতার জন্যই বাড্ডা এলাকায় ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনের সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে ম্যানহোলগুলোর ঢাকনা সরিয়ে রাখা হয়। এতে অনেক সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। যাই হোক ভাই, এসব বলে কোনো লাভ নেই, আমাদের কোনো অভিভাবক নেই। আমরা কোথায় গেলে এর সমাধান পাব জানি না।
সরেজমিন দেখা গেছে, পোস্ট অফিস গলির ভিতরের রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে আছে। ভিতরের দিকে কিছু রাস্তায় হাঁটু পানি জমে আছে। জুমার নামাজের জন্য বের হওয়া মুসল্লিরা ময়লা পানি থেকে বাঁচতে ১০০ মিটার দূরের মসজিদে যেতেও রিকশা ব্যবহার করছে। বিভিন্ন বাড়ি ও দোকানের সামনে কিছুটা উঁচু করে রাখা হয়েছে, যাতে রাস্তার পানি বাড়িতে বা দোকানে না ঢুকতে পারে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন বাড্ডার ৩৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতোমধ্যেই আনন্দনগর, সাহাব উদ্দিন মোড়, বাজার গলিতে কাজ চলছে। এগুলোর কাজ শেষ হয়ে আউট লাইন তৈরি হলেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পোস্ট অফিস গলির কাজ শুরু হবে। কিছু কিছু জায়গায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারে আগে আমাদের কোনো বাজেট ছিল না। তবে কিছুদিন আগে বাজেট বরাদ্দ হয়েছে, সে বাজেটের কাজ এখনো আমরা শুরু করতে পারিনি। এতোদিন আমরা নিজ উদ্যোগে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছি। আমার উদ্যোগে উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সুপরিসর রাস্তার সুবিধা পাওয়ার আশায় ইতোমধ্যে স্থানীয় বাড়িওয়ালারা তাদের নিজেদের বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারছি না। আশা করছি, আগামী বছর এলাকায় এমন জলাবদ্ধতা আর হবে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন