একবিংশ শতাব্দীর এই দুই দশকে ঢাকা শহর থেকে হারিয়েছে ১২৬ টির বেশি মাঠ। ঢাকায় সরকারি-বেসরকারি মাঠের সংখ্যা এখন ২৩৫টি। এর ১৪১টি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ। কলোনির মাঠ আছে ২৪টি, ঈদগাহ মাঠ আছে ১২টি।
এসব মাঠ সবার প্রবেশাধিকার নেই। ঢাকার দুই সিটিতে সাধারণ মানুষের ব্যবহার যোগ্য মাঠ রয়েছে মাত্র ৪২টি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) জরিপে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে। হারিয়ে যেতে বসা কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠ এই তথ্যকে সমর্থন করছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স জরিপটি করেছে করোনার আগে ২০১৯ সালে।
তবে ড্যাপের তথ্য অনুযায়ী রাজধানীতে সবচেয়ে কম মাঠ আছে মিরপুর। মানুষের বসবাসের তুলনায় এই এলাকায় মাঠের পরিসংখ্যান খুবই নগ্ন। জনঘনত্বের অনুপাতে সেখানে দরকার আরো ৩৮.৭৯ একর মাঠ। পুরান ঢাকার ওয়ারী-সূত্রাপুরের মতো ঘন বসতিপূর্ণ অঞ্চলে মাঠের পরিমাণ মাত্র ১.৯৪ একর। সেখানে মাঠ থাকা উচিত আরো ২৭.৮৭ একর। উত্তরায় বিশাল জনগোষ্ঠীর তুলনায় মাঠের পরিমাণ মাত্র ২০.৩ একর। সেখানে থাকা উচিত আরো ১০৮.৭ একর খোলা জায়গা।
তবে সমস্ত রাজধানীর মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু রমনা-শাহবাগ অঞ্চল। ড্যাপ বলছে এ দুটি এলাকায় আর কোনো মাঠ ও পার্কের প্রয়োজন নেই। সেখানে এখন যেসব মাঠ আছে তাতে জমির পরিমাণ ৩৫.২৬ একর এবং পার্ক আছে ১৭৯.১৯ একর। এ ছাড়া ঢাকার অন্য সব অঞ্চলে খেলার মাঠ ও পার্কের জায়গা অপ্রতুল বলে তথ্য দিচ্ছে ড্যাপ।
আজিমপুরের বাসিন্দা আল আমিন শেখ বলেন, “আমাদের আজিমপুরে প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি নতুন ভবন উদ্বোধন করতে এসে বলেছিলেন, ‘ঢাকায় মানুষ বেড়েছে, আবাসনের দরকার। কিন্তু খেলার মাঠগুলো যেন থাকে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। ’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলার পরও আজিমপুর কলোনির যে তিন-চারটি মাঠ ছিল, সেগুলো হারিয়ে গেছে। ” এসব মাঠে ভবন হয়েছে, হয়েছে দোকানপাট।
ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকায় ধূপখোলায় ছিল বিশাল মাঠ। এখানে ক্রিকেট-ফুটবল চলত একসঙ্গে। পুরান ঢাকায় খেলোয়াড় তৈরির অন্যতম আঁতুড়ঘর বলা হয় এই মাঠকে। গত বছর সেটিরও বড় অংশ ঢুকে গেছে সিটি করপোরেশনের বাণিজ্যিক প্রকল্পে। মার্কেট কিংবা সুউচ্চ ভবন ছাড়া কিছুই যেন ভাবতে পারেন না নীতিনির্ধারকরা।
ঢাকার বখশি বাজারে নবকুমার স্কুলের উল্টো দিকে একটা বিশাল মাঠ ছিল আলিয়া মাদরাসার। একটা সময় সারা দিন এই মাঠ জমজমাট থাকত খেলোয়াড়দের দাপাদাপিতে। সেটিকে অস্থায়ী আদালতে রূপ দেওয়া হয়েছিল। সেই পর্ব শেষ হওয়ার পর এখনো মাঠে প্রবেশাধিকার মেলেনি সাধারণের।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ মেহেদী আহসান জানান, মাঠের কথা বললে ঢাকার সামগ্রিক অবস্থা বেশ খারাপ। যতটুকু থাকার কথা তা নেই। রাষ্ট্রের অনেক উন্মুক্ত জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। যতটুকু আছে সেখানে খেলাধুলা কিংবা হাঁটাহাঁটি করে সময় কাটানোর মতো পরিবেশ নেই।
প্রসঙ্গত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি মানুষের জন্য খেলার মাঠ ও পার্ক মিলে ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গা দরকার। কিন্তু ঢাকায় জনপ্রতি খোলা জায়গার পরিমাণ এক বর্গমিটারের কম।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন