ঢাকার উপকণ্ঠে নিজের একখন্ড জমি হবে এমন ভাবনা কম-বেশি সবার মধ্যেই আছে। মানুষের এমন স্বপ্ন নিয়েই বাণিজ্যে নেমেছে একটি মহল। সরকারি জলাধার ভরাট আর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি আবাসিক এলাকা। নিজের ক্ষমতা আর স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাজে লাগিয়ে নিরীহ মানুষের জমি রাতের আঁধারে ভরাট করে কবজায় নিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই দশ বছরে রাজধানীর বুকে শত শত বিঘা জমি নিয়ে গড়ে উঠেছে মধু সিটি নামের একটি বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব ও তার ভাই ছেলিম উল্লাহ এ আবাসন প্রতিষ্ঠানের মালিক।
প্রতিষ্ঠানটি ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের প্লট বানিয়ে প্রতি কাঠা ২০ লাখ টাকা দরে বিক্রি করছে। এরই মধ্যে কয়েকশ বিঘা জমি বিক্রি করে ৪০০-৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। সম্পূর্ণ অনুমোদনহীন এ প্রকল্পে প্লট কিনে কেউ কেউ ৭-৮ তলা ভবনও নির্মাণ করেছেন। ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে যারা এসব স্থাপনা নির্মাণ করেছেন, সেগুলোরও অনুমোদন নেই।
নগরপরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রিয়েল এস্টেট আইন, ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ), জলাধার সংরক্ষণ আইন, ইমারত নির্মাণ আইন ও পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে প্রশাসনের নাকের ডগায় রাতারাতি গড়ে উঠেছে এ অবৈধ আবাসিক এলাকা। সরকারি এতগুলো সংস্থা থাকতে অনুমোদনহীন একটা আবাসন প্রতিষ্ঠান কীভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাগুলোর রহস্যজনক নীরবতায় প্লট কিনে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ ক্রেতা। সরকারও রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চলে পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলার সুযোগ হারাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কেরানীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নের বছিলা সেতুসংলগ্ন বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে মধু সিটি নামে এ আবাসিক এলাকা। এই আবাসন প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষের জমি দখল, ৪-৫টি খাল ভরাট, বুড়িগঙ্গা নদী ভরাট, নানা মানুষের জমি কিনে মূল্য পরিশোধ না করা, ভাড়ায় জমি নিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্রিসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। শত শত বিঘা জমির ওপর আড়াই কাঠা, ৩ কাঠা, ৫ কাঠা আয়তনের প্লট বানিয়েছে তারা। স্থানীয় টোটাল মৌজা, মনহরিয়া মৌজা, আহাদিপুর মৌজা, মধ্যেরচর মৌজা ও চন্ডিপুর মৌজা এ আবাসন প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন এলাকা। শাক্তা, কলাতিয়া ও রোহিতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি, সরকারি খাসজমি, জলাশয় ও বুড়িগঙ্গার তীর বালু দিয়ে ভরাট করে সেখানে প্লট বানানো হয়েছে। বিধিবহির্ভূতভাবে ১০-১২ বছরে বিজ্ঞাপন দিয়ে হাজার হাজার প্লট বিক্রি করেছে। মধু সিটি নামে আলোচনায় থাকলেও ইতিমধ্যে আরও কয়েকটি আবাসন প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে মধু রিভার ভিউ সিটি, মিলিনিয়াম সিটি, কিংস্টার সিটি অন্যতম। যারা নামমাত্র জমি কিনে সরকারি জমি দখল করে বিক্রি করছে সাধারণ মানুষের কাছে।
ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী : মধু সিটি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শত শত মানুষের ক্ষোভ রয়েছে এই আবাসিক এলাকা নিয়ে। স্থানীয় আবদুর রহিম ও মো. সুলেমান নামে দুই ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, তারানগর ইউনিয়নের শিয়াইল মৌজায় যতদূর চোখ যায় শুধু মধু সিটির ভরাট করা ‘মরুভূমি’। যে কেউ দেখলেই বুঝবে কিছুদিন আগেই বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে জায়গাগুলো। বছর দুয়েক আগেও বেশ কিছু ফসলি জমি ছিল। সেখানে চাষ করা হতো নানা ধরনের ফসল। এখন কিছুই নেই। সবই এ মধু সিটির দখলে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় এই বাসিন্দারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল আর প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে যোগসাজশ করেই মধু সিটি জমি দখল করছে। তারা বেশির ভাগ ভরাটের কাজ করে রাতের আঁধারে। নানা বয়সী মানুষকে তারা এ কাজে ব্যবহার করে। বিভিন্ন সময় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খুব বেশি লাভ হয়নি। স্থানীয় থানায় বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে।
শামীমা বেগম নামে এক বাসিন্দা জানান, কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ বালুরচর নদী তীরসংলগ্ন এলাকায় মধু সিটি থেকে আড়াই কাঠা জমি কিনেছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উচ্ছেদ অভিযানে জমিটি হারান তিনি। তিনি বলেন, ‘নদীর সীমানায় পড়েছে জানলে অবশ্যই জমি কিনতাম না। আমার মতো এমন অনেকেই আছে যারা মধু সিটির অবৈধ দখল করা জায়গা কিনে নিঃস্ব হয়েছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে শামীমা বলেন, ‘প্লটের জায়গা যদি অবৈধ হয়ে থাকে তাহলে যখন বালু দিয়ে ভরাট করা হলো তখন রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) আর বিআইডব্লিউটিএ কোথায় ছিল?’
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, মধু সিটি সাইনবোর্ড বসানোর জন্য জমি ভাড়া নেয়। সাইনবোর্ড বসিয়ে জমি নিজেদের বলে মানুষের কাছে বিক্রি করে। পরে বছরের পর বছর কেটে গেলেও জমি আর বুঝিয়ে দেয় না মধু সিটি। আর যার জমিতে সাইনবোর্ড বসিয়েছে তাদেরও নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে নামমাত্র দামে জমি কিনে নেয়। বালুরচর, ঘাটারচর, কলমারচর, চন্ডীপুর, কাঁঠালতলী, বেলনা, শিয়াইল এলাকার নিরীহ কৃষকদের জমি জোর করে ভরাট করার মতো অভিযোগও আছে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
লুৎফর রহমান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দশ বছর ধরে এলাকাবাসীর কাছে আতঙ্কের নাম হলো মধু সিটি। তাদের রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। যাদের দিয়ে মানুষকে হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকে।’
মধু সিটির মালিকদের একজন হাবিবুর রহমান হাবিব স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হওয়ায় তাদের সামনে দাঁড়িয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারে না।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মধু সিটির পরিচালক হাবিবুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে তার ভাই প্রতিষ্ঠানটির আরেক কর্ণধার ছলিম উল্লাহকেও ফোন করা হয়। কিন্তু তিনিও ফোন ধরেননি।
অনুমোদন নেই রাজউকের : মধু সিটির অনুমোন নেওয়ার জন্য বছর তিনেক আগে রাজউকে আবেদন করেন সংশ্লিষ্টরা। এরপর নিয়ম অনুযায়ী রাজউকের প্রকল্পের অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা প্রকল্প এলাকা পরির্দশন করেন। কিন্তু পরিদর্শনকালে মধু সিটির দাখিল করা নকশা আর বাস্তবের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন পাওয়া যায়। দুই-আড়াইশো বিঘা জমি নিয়ে প্রকল্প দাখিল করে ভরাট করেছে এর দ্বিগুণেরও বেশি। তাই অনুমোদন মেলেনি মধু সিটির।
জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান নগরপরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেরানীগঞ্জের মধু সিটি এখনো রাজউক থেকে অনুমোদন পায়নি। তারা দুই-আড়াইশো বিঘা জমির ওপর একটি প্রকল্প নকশা করে রাজউকে আবেদন করেছিল। কিন্তু রাজউক তা অনুমোদন দেয়নি।’ কেন রাজউক অনুমোদন দেয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তারা যতটুকু প্রকল্প হিসেবে দেখিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি ভরাট করেছে। এ ছাড়া প্রকল্পটি ঘিরে নানা অনিয়ম তো আছেই।’
রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ২০ অনুযায়ী, অনুমোদন ব্যতীত রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকার। এই আইনে কোনো প্রতিষ্ঠান যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোনো রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করলে কিংবা অননুমোদিত রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের বিজ্ঞাপন প্রচার বা বিক্রি করলে অনূর্ধ্ব দুই বছর কারাদ- অথবা অনূর্ধ্ব দশ লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।
এ বিষয়ে রাজউক কী ব্যবস্থা নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যমান আইনের ফাঁক রয়েছে। তাই রাজউক বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। তবে রিয়েল এস্টেট আইন অনুযায়ী যেকোনো নাগরিকের অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও ফৌজদারি মামলা নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।’
৫ খালও দখলে : সরকারের বিদ্যমান আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট করছে মধু সিটি। এরই মধ্যে বেশ কয়েটি খাল ভরাট করে সেখানে প্লট তৈরি করে বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় চর খাল, বড় মনোহরী খাল, খানবাড়ি খাল, নিমতলী খাল, লুটেরচর খালসহ আশপাশের প্রায় সব এলাকার জলাধারেই রয়েছে মধু সিটির দখলের থাবা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী মনিরুজ্জামান দেশর রূপান্তরকে বলেন, দেশের শহর ও প্রান্তিক পর্যায়ে জলাধার রক্ষার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। ‘প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০’-এ খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধারের শ্রেণি পরিবর্তনে বাধা-নিষেধের কথা বলা আছে। এ আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, ‘খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না বা এসব জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না। এ ছাড়া ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না।
মধু সিটির অবৈধ দখল নিয়ে এর আগে ঢাকার জেলা প্রশাসক সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় চিঠিও দিয়েছেন। চার বছর আগে দেওয়া ওই চিঠিতে মধু সিটির দখল করা বুড়িগঙ্গার শাখা নদীর তিনটি খাল ও চলাচলের তিনটি রাস্তাসহ মোট ১৮ একর জমি উদ্ধার ও দখলকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। এ ছাড়া নানা অনিয়মের অভিযোগে এ পর্যন্ত ডজনখানেক মামলা ও জিডি করেছেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু এতে খুব একটা কাজ হয়নি।
উচ্ছেদেও থামে না দখল : ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর মধু সিটির অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে বিআইডব্লিউটিএ। বুড়িগঙ্গা নদীর অংশ ভরাট করে প্লট বানিয়ে বিক্রির অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়। ১০-১২ বছরে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ^রী ও বালু নদী থেকে ১৭ হাজার ৯০১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রায় ৬৬৯ একর জমি উদ্ধার করেছে সরকারি সংস্থাটি। এরই একটি বড় অংশই বুড়িগঙ্গার বিভিন্ন অংশ। দখলদারদের কাছ থেকে এসব জমি উদ্ধারের পর সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিআইডব্লিউটিএ। সেখানে বলা হয়, ‘বহু বেসরকারি হাউজিং সোসাইটি নদীর জায়গা দখল করে লিজ গ্রহীতাদের প্রতারিত করে প্লট কিংবা ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিয়েছে। এসব স্থাপনা অপসারণ করার ফলে সেসব প্লট-ফ্ল্যাট গ্রহীতারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই নদী তীরবর্তী এ ধরনের হাউজিং প্রতিষ্ঠান থেকে প্লট বা ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়ে প্রতারিত না হতে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।’ এরপর আবারও বুড়িগঙ্গার বিশাল অংশ দখল করে প্লট বানিয়েছে মধু সিটি।
নগরপরিকল্পনাবিদরা যা বললেন : স্থপতি ইকবাল হাবিব গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখানে একটা বৈধতা দেওয়ার দীর্ঘ পরিকল্পনা আছে। ইচ্ছা করেই এটি এভাবে তাদের চলতে দেওয়া হয়েছে। রাজউক তার আইন অনুযায়ী যেকোনো মুহূর্তে ব্যবস্থা নিতে পারত। রাজউকের এ নীরব ভূমিকার ফলে মানুষ এখন রাজউকের নিয়ন্ত্রিত আইনগুলোর বিষয়ে উদাসীন। এখন সময় এসেছে অবৈধ এসব আবাসন প্রতিষ্ঠান নিয়ে ভাবার।’ তিনি বলেন, ‘মধু সিটি ঢাকার পশ্চিম অংশে অরাজকতার রাজ্য তৈরি করেছে। সেখানে সরকার একটি পরিকল্পিত শহর করতে পারত।’
নগরপরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আমরা দেখছি যে ঢাকার মধ্যে অবৈধভাবে ভূমি ব্যবহার হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করছে। সংস্থাগুলো মনিটরিং না করার ফলে এসব প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠছে। আমরা সংস্থাগুলোর অক্ষমতা বলব না, এটা উদাসীনতাও না। এটা পরিকল্পিত। পরে এটি বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাসযোগ্য শহর করতে গেলে সব সংস্থাকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে। এ প্রকল্প যদি বাতিল হয়ে যায় সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে। মধুমতি মডেল টাউনের মতো প্রতারিত হবে। এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বছিলা এলাকার এ আবাসন প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমরা অবগত আছি। সেখানে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমরা তাদের অনুমোদন দিইনি। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’
কেরানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘সরকারি সম্পদ শুধু মধু সিটি না; কেউ দখল করতে পারবে না। সরকারি সম্পদ যদি দখল করে রাখে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন আমাদের কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি রাজু আহমেদ)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন